সম্প্রতি সিনেমাহলে মুক্তি পেয়েছে 'লায়ন কিং'। তাকে নিয়ে যেমন সব বয়সী মানুষদের মধ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে।সেরকমই সম্প্রতি আলিপুর চিড়িয়াখানায় ঠাঁই পাওয়া সিংহ শাবকটিকে নিয়ে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের। একদিকে রুপোলি পর্দা মাতাচ্ছে এক লায়ন কিং সেরকম চিড়িয়াখানার ছোট্ট খাঁচাটি মাতাচ্ছে আরেক লায়ন কিং। অন্ধকার থেকে আলোর জগতে ফিরে আসা শাবকটিকে নিয়ে এই মুহূর্তে শোরগোল পড়ে গেছে চিড়িয়াখানায়। জানা গেছে, ৩১শে মে রাতে বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে গাড়ি করে ঘুমপাড়ানি ওষুধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে ব্যাগের মধ্যে করে বাইরে পাচার করা হচ্ছিল এই দুধের শিশুটিকে। তার সাথেই পাচার হচ্ছিলো তিনটি বিরল প্রজাতির বাঁদরও। সিংহ শাবকটির ঘোর যখন কেটেছিল তখন সে অনেক লোকের মাঝে। ঘোর কাটার পর তার জায়গা হয়েছিল আলিপুর চিড়িয়াখানায়।
আন্তর্জাতিক পশুপাচার চক্রের হাত থেকে উদ্ধার পাওয়া শাবকটির ঘোর কাটতে বেশ কিছুদিন সময় লেগেছিলো। স্বাভাবিকভাবেই ততদিন তাকে পশু হাসপাতালে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। অবশেষে তাকে নিয়ে আসা হয়েছে তার জন্য তৈরী স্পেশাল একটি খাঁচায়। চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ছানাটি আপাতত সুস্থই রয়েছে। তারা জানাচ্ছে, ছোট শিশু পরিবার থেকে আলাদা হয়ে গেলে যেমন তাদের উপর মানসিক চাপ পড়ে সেরকমই এই শাবকটির উপরেও মানসিক চাপ পড়েছে। তাই উদ্ধার হওয়ার পরবর্তী এক সপ্তাহ সে মুখে কোনো খাবারই তোলে নি।এরপর চিড়িয়াখানার কর্মীরা তাকে ভালোবাসা ও আশ্বাস দিতে শুরু করে।ছোট শিশুদের যেমন ভালোবাসার আশ্রয়ের প্রয়োজন পড়ে এই শাবকটিরও প্রয়োজন আছে এই ভালোবাসার, মত চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের।
চিড়িয়াখানা সূত্রের খবর, শাবকটিকে আবার আগের জায়গায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়াটা মোটেই সহজ ছিল না। চিড়িয়াখানার অধিকর্তা জানান, উদ্ধারের পর দেখা যায় শিশুটির ডিহাইড্রেশনে ভুগছে। তখনই তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয় চিকিৎসার জন্য। সেখানে নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখা হয় যে আর কোনো রোগ রয়েছে কিনা। কিন্তু শাবকটির শরীরে আর কোনো রোগ দেখতে পাওয়া যায়নি। কিন্তু শিশুটির স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে তাকে বেশ কয়েকদিন হাসপাতালে রাখার ব্যবস্থা করা হয়। কিছুদিনের মধ্যেই ট্রমা কাটিয়ে স্বাভাবিক হয়ে উঠতে শুরু করে সেই ছানাটি। এরপর স্বাভাবিক খাওয়াদাওয়াও শুরু করে সে। বর্তমানে প্রায় দেড় কেজি মুরগির মাংস সে একই শেষ করতে পারে। চিড়িয়াখানায় যে খাঁচাটি তার জন্য বরাদ্ধ করা হয়েছে সেটির মধ্যেই দাপিয়ে বেড়াতে দেখা গেছে মাস পাঁচেকের শাবকটিকে।তাই চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আর কয়েকদিনের মধ্যেই শাবকটিকে সাধারণ সিংহের কাঁচের একটি ঘরে এনে রাখা হবে। তবে বিভ্রান্তি এড়ানোর জন্য 'জুনিয়র লায়ন কিং' কে এখনই দর্শকের সামনে আনা হবে না বলেই জানিয়েছেন তারা। কিন্তু শাবকের অবস্থা আগের থেকে ভালো হলে তাকে সাধারণ মানুষের সামনে আনার কথা ভাববেন তারা।