এই দিনটার প্রতীক্ষাতেই বোধহয় দিনগুনছিলেন তিনি। পিছিয়ে পড়ার নানা সমালোচনা নিজের কাঁধে নিয়েই মহাসমরের জন্য ভিতরে ভিতরে প্রস্তুত করছিলেন নিজেকে। তাঁর সেই প্রস্তুতি ব্যর্থ হয়নি।
ভারতীয় ব্যাডমিন্টন ইতিহাসে নয়া মোড় এনে সমস্ত বিতর্ক পিছনে ফেলে বিডব্লিউএফ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা জয় করলেন পিভি সিন্ধু। রবিবার, সুইৎজারল্যান্ডের বাসেলে আয়োজিত এই রূদ্ধশ্বাস ম্যাচে উচ্চ র্যাঙ্কিংয়ে থাকা কঠিন প্রতিপক্ষ নজোমি ওকুহারার মুখোমুখি হন তিনি। বিপক্ষ কঠিন হলেও হাল ছাড়তে নারাজ ছিলেন সিন্ধু। ম্যাচের শুরু থেকেই ক্রমাগত আক্রমণাত্মক মেজাজে খেলতে শুরু করেন বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে ৫ নম্বরে থাকা ভারতীয় শাটলার। ফলস্বরূপ বিপক্ষকে ২১-৭, ২১-৭ এ বিধ্বস্ত করে দেশের জন্য মূল্যবান স্বর্ণপদকটি নিশ্চিত করেন তিনি। এই জয়ের মাধ্যমে এখন সিন্ধুই একমাত্র ভারতীয় যিনি এই টুর্নামেন্টে স্বর্ণপদক অর্জন করেছেন।
২০১৩-১৪ তে ২টি ব্রোঞ্জ ও ২০১৭-১৮ তে ২টি রূপোর পদক আনার পর তাঁর পার্ফর্মেন্স নিয়ে কার্যত বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল ক্রীড়ামহলে, বড় ম্যাচে মেজাজ হারানো নিয়েও ওঠে প্রশ্নচিহ্ন। তবে সমস্ত বিতর্ক পিছনে ফেলে অবশেষে ২০১৯ এ, দেশের জন্য সোনা নিয়ে এলেন হায়দ্রাবাদের এই শাটলার। মাত্র ৩৮ মিনিটেই ওকুহারাকে হেলায় হারিয়ে আকাঙ্ক্ষিত স্বর্ণপদকটি নিশ্চিত করেন তিনি।
সম্পূর্ণ ম্যাচটিই ছিল একরৈখিক। দু বছর আগে, বাসেলে এই ব্যাডমিন্টন কোর্টেই ওকুহারার মুখোমুখি হন ২৪ বছরের এই শাটলার। সেটাই ছিল ব্যাডমিন্টনের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ ফাইনাল। প্রায় ১১০ মিনিট কঠিন লড়াইয়ের পর, ওকুহারার কাছে হার স্বীকার করেন সিন্ধু, তবে একেবারেই হেলায় নয়, দীর্ঘ লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে দ্বিতীয় স্থানে শেষ করে দেশের জন্য রূপো নিয়ে এসেছিলেন তিনি। ২বছর পর পুনরায় ওকুহারার মুখোমুখি হলে, সেই ভুলের পুনরাবৃত্তি আর করেননি। বদলে বিপক্ষকে কার্যত নাস্তানাবুদ করে বড় জয় নিশ্চিত করেন সিন্ধু।
এই জয় উদযাপন করে ধারাভাষ্যকার গিলিয়ান ক্লার্ক মন্তব্য করেন, “এরকম একতরফা ফাইনালের কথা মনে করতে পারছি না।“
রবিবার বাসেলে স্বর্ণপদক ছিনিয়ে আনার পর কিংবদন্তি শাটলার চিনের ঝ্যাং নিংয়ের এক অনন্য রেকর্ড স্পর্শ করলেন পিভি সিন্ধু। নিংয়ের মতোই বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে ৫টি পদকের অধিকারী হলেন তিনি। ২০১৬-তে প্রথম ভারতীয় মহিলা হিসাবে অলিম্পিক্সে রূপোর পদক পান তিনি। সে বছর ব্রাজিলের রিও ডি জেনেইরোতে স্পেনের ক্যারোলিনা মারিনের কাছে সেই হাড্ডাহাড্ডি ম্যাচে জয় না পেলেও তাঁর নাছোড় লড়াই মনে রেখেছেন সকলে। গতবছর ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় চীনের তাই জু ইংকে হারিয়ে এশিয়ান গেমস থেকে রূপোর পদক ঘরে আনেন সিন্ধু।
বিডব্লিউএফে দেশকে বড় সাফল্য এনে দেওয়ার পর এবার আসন্ন টোকিও অলিম্পিকে নিজের শ্রেষ্ঠ পার্ফর্মেন্স দেওয়ার জন্য প্রস্তুত সিন্ধু। এর আগে অলিম্পিকে রূপোর পদক আছে সিন্ধুর ঝুলিতে, এবার কি সোনা নিয়ে আসবেন এই ভারতীয় তনয়া? এই আশাতেই বুক বেঁধেছে গোটা ভারতবাসী।