ক্লাবের সঙ্গে সম্পর্ক শেষ- বিশ্বকাপে ‘স্বাধীন রোনাল্ডো’

কাতার বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে নামার ৪৮ ঘণ্টা আগে ক্লাবের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হল, পর্তুগিজ তারকাকে আর রাখা হবে না। মঙ্গলবার রাতে একটি বিবৃতি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা হয় ম্যান ইউয়ের পক্ষ থেকে। সেখানে বলা হয়েছে, পারস্পরিক সমঝোতায় ক্লাবের সঙ্গে বিচ্ছেদ হচ্ছে রোনাল্ডোর। সেটা এই মুহূর্ত থেকেই কার্যকরী হবে। দুই পর্বে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে তাঁর অবদানের জন্য ধন্যবাদ জানানো হয়। এটাও বলা হয়েছে, এরিক টেন হ্যাগের অধীনে ম্যান ইউ আগামী দিনে উন্নতির দিকে এগিয়ে যাবে।

টেন হ্যাগের সঙ্গে তাঁর বিবাদ মাঠেই দেখা গিয়েছে। টটেনহ্যাম হটস্পারের বিরুদ্ধে ম্যাচ শেষ হওয়ার আগেই টানেল দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন রোনাল্ডো। সেই কারণে তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়েছিল। পরে অবশ্য দলে ফেরানো হয় রোনাল্ডোকে। কোচকে নিয়ে রোনাল্ডো বলেছেন, ''যদি তুমি আমাকে সম্মান না করো, তা হলে আমিও তোমাকে সম্মান করব না। আগে ফুটবলারদের সম্মান করো। তা হলে তোমাকেও ফুটবলাররা সম্মান করবে।''

এই মরসুমের শুরু থেকেই ম্যাঞ্চেস্টারের প্রথম একাদশে নিয়মিত ছিলেন না রোনাল্ডো। বেশির ভাগ ম্যাচে বেঞ্চে বসেই কাটাতে হয়েছে। হাতে গোনা কিছু ম্যাচে পরিবর্ত হিসাবে মাঠে নেমেছেন। নেদারল্যান্ডসের টেন হ্যাগের যে রোনাল্ডোকে পছন্দ নয়, তা তাঁর দল গঠন থেকেই পরিষ্কার। রোনাল্ডোর থেকে অনেক বেশি মার্কাস র‌্যাশফোর্ডের উপর ভরসা তাঁর। তার ফলও পাচ্ছে দল। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে শুরু থেকেই অনেক ম্যাচে পয়েন্ট নষ্ট করেছে ম্যান ইউ। লিগ জেতার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে।

রোনাল্ডোর ম্যান‌ ইউ ছাড়া সময়ের অপেক্ষা ছিল। গত কয়েক দিনে কোচ এরিক টেন হ্যাগ এবং কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকেছিল তারকা ফুটবলারের। কিন্তু সেই ঘোষণা যে ঘানার বিরুদ্ধে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচের দু'দিন আগে হবে সেটা ভাবা যায়নি। দোহায় সোমবারই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন রোনাল্ডো। স্বাভাবিকভাবেই ম্যান ইউ প্রসঙ্গ এড়িয়ে যান। তবে উদাহরণস্বরূপ জানান, তিনি বিশ্বকাপ জিতলেও তাঁকে নিয়ে সমালোচনা থামবে না। সরাসরি জানিয়ে দেন, কে, কোথায় তাঁকে নিয়ে কী বলল সেই বিষয়ে বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই তাঁর। সেই সাংবাদিক সম্মেলনের ২৪ ঘণ্টা কাটার আগেই ম্যাঞ্চেস্টারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেল পর্তুগিজ তারকার। ৪৮ ঘণ্টা পরই বিশ্বকাপে অভিযান শুরু রোনাল্ডোর। তার ঠিক প্রাক্কালে এই ঘটনা পর্তুগিজ তারকার পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলবে কিনা সেটা সময়ই বলবে।

c632a3b05ebfe6c6baefd800a8bbc0df (1)

রোনাল্ডোর ক্লাবের সাথে বিচ্ছেদের দিনেই আরব্য রজনীতে চাপা পরলেন মেসি। শুরুটা হয়েছিল স্বপ্নের মতো। শেষ হল দুঃস্বপ্ন দিয়ে। সৌদি আরবের বিরুদ্ধে ৯ মিনিটেই পেনাল্টি থেকে গোল করে দলকে এগিয়ে দিয়েছিলেন লিয়োনেল মেসি। সেই গোল ধরে রাখতে পারল না আর্জেন্টিনা। হারতে হল ১-২ গোলে। ম্যাচ শেষে হতাশ মুখে বেরিয়ে গেলেন মেসি।

ম্যাচের পর মেসি বলেছেন, "জানি অনেক মানুষ আমাদের উপর ভরসা করেন। শুধু আমি বা দল নয়, এটা সব সমর্থকদের কাছে বিরাট একটা ধাক্কা। কখনও ভাবতে পারিনি হেরে যাব। তবে একটা কথা বলতে পারি, আমরা সমর্থকদের মিথ্যা বলে এখানে আসিনি। আগেও অনেক ম্যাচ খেলেছি। আজও খুব একটা খারাপ খেলিনি। আশা করি এই হার থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাব। ঐক্যবদ্ধ হওয়ার এটাই সেরা সময়। এই হার আশা করিনি ঠিকই। কিন্তু গোটা পরিস্থিতি বদলে দেওয়ার ক্ষমতা আমাদের হাতেই রয়েছে।"

আর্জেন্টিনা হারলেও কালকের শেষ ম্যাচে ফ্রান্স ৪-১ গোলে হারায় অস্ট্রেলিয়াকে। স্বমহিমায় ছিলো এমবাপে। জোড়া গোল করেন জেরু।

অন্যদিকে তারুন্যই ভরসা রেখেই মাঠে নামছে স্পেন।  ২০১০ এর পুনরাবৃত্তি ঘটে কিনা সেটাই দেখার। ২০০৮ থেকে ২০১২ বিশ্বফুটবলে বারবার উঠে এসেছে স্পেন। ২০১০ দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে তিকিতাকা ফুটবল জিতে নিয়েছিল কাপ সহ বিশ্ববাসির মন। মাঝে কেটেগেছে ২টো বিশ্বকাপ। আবারো একঝাঁক নতুন মুখের ওপর ভরসা রাখছেন কোচ লুই এনরিকে।

দলগঠনেই তার ইঙ্গিত দিয়েছেন এনরিকে। নামের পিছনে ছোটেননি তিনি। ডেভিড ভিয়া, সের্জিয়ো র‌্যামোস, জেরার্ড পিকের মতো ফুটবলাররা তাঁর দলে স্থান পায়নি। নতুনদের নিয়ে দল গঠনের ক্ষেত্রে এনরিকে বলেছেন, 'ফিজিকাল বা ট্যাকনিকাল লেভেল নয়, দল গঠনে স্থান পেয়েছে প্লেয়ারদের অনুভূতি।' তাঁর কথায়, 'তারুণ্য ইতিবাচক। এটা আপনাকে শক্তি দেয়। আমরা তরুণদের অভিজ্ঞতা প্রদানের চেষ্টা করি, যাতে তারা তাদের সেরাটা দিতে পারে।'

এনরিকের ভরসা পেদ্রি, গাভি, রদ্রিগোর মতো তরুণদের উপর। ১৮ বছর বয়সের গাভি এনরিকের প্রধান ভরসার জায়গা। মাঝমাঠে খেলেন। একই সঙ্গে আক্রমণ ও রক্ষণে সমান দক্ষ। আন্তর্জাতিক ফুটবলে এখনও আনকোরা তিনি। তাই প্রতিপক্ষ তাঁকে নিয়ে বেশি পরিকল্পনা করতে পারবে না। সেই সুবিধা কাজে লাগাতে চাইছেন স্প্যানিশ কোচ। স্পেনের আরেক তারকা বার্সেলোনার পেড্রি। ১৯ বছরের পেড্রি সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার। লা রোজাদের মাঝমাঠের দায়িত্ব অনেকটাই তাঁর কাঁধে। সর্বদাই গোলের দিকে চোখ থাকে এই উঠতি তারকার।

চিন্তার যায়গা ডিফেন্ডার দানি কারভাহালের ও স্ট্রাইকার মোরাতার ফ্লু। এই বিষয়ে স্প্যানিশ কোচ জানান, 'ওদের দুজনের সাথে এবং ডাক্তারের কথা হয়েছে। দুজনেই খেলার জন্য প্রস্তুত। কোস্টারিকার বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচ খুব সহজ হবে না মেনে নিয়েছেন স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড ফেরান তোরেস।  তিনি জানান, 'খুব গুছিয়ে খেলে ওরা। কোস্টারিকার রক্ষান ভাগ বেশ ভালো। রক্ষণ ভালো এমন দলের বিরুদ্ধে খেলা সব সময়েই কঠিন। তবে এই ম্যাচ ছাড়াও আমাদের সামনে আরও কঠিন চ্যালেঞ্জ রয়েছে। আশা করি সেগুলো পেরোতে পারব।'

স্পেন ছাড়াও বুধবার মাঠে নামছে ক্রোয়েশিয়া, জার্মানি ও বেলজিয়াম। গ্ৰুপ এফ'র প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি হবে মরক্কো ও ক্রোয়েশিয়া। শেষ বিশ্বকাপের ফাইনালিস্ট দল ক্রোয়েশিয়া। ফ্রান্সের কাছে ৪-২ এ ফাইনাল হারলেও জিতে নিয়েছিল বিশ্ববাসীর মন। এবারেরো দায়িত্ব ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপের সোনার বল জয়ী ৩৭ বছরের লুকা মডরিচের কাঁধেই। তিনি সাধারণত সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার হিসেবে খেলেন, তবে আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার বা ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবেও খেলে ম্যাচের রঙ বদলানোর ক্ষমতা আছে তাঁর। রিয়াল মাদ্রিদ মিডফিল্ডার এই প্রজন্মের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফুটবলার। এই বিশ্বকাপ সম্ভবত তারও শেষ বিশ্বকাপ হতে চলেছে।

মডরিচ ছাড়াও স্পিরিটেড মিডফিল্ডার মাতেও কোভাসিকের আক্রমণাত্মক প্রবৃত্তি রয়েছে। বল দখলে স্বাচ্ছন্দ্য, পরিশ্রমী ২৮ বছর বয়সী চেলসি মিডফিল্ডার তার অ্যাসিস্টে উন্নতি করেছেন। এখনও পর্যন্ত টানা ৬ ম্যাচ অপরাজিত আছে ক্রোয়েশিয়া। ৩১ বছর বয়সী ক্রোয়েশিয়ার অভিজ্ঞ ফরোয়ার্ড আন্দ্রেজ ক্রামারিক বলেছেন, 'আমরা ক্লান্ত নই এবং এটা মৌসুমের শেষ নয় এবং তাই, আমি মনে করি এই বিশ্বকাপে আমরা শারীরিক ভাবে শক্তির বিস্ফোরণ দেখাতে পাব, যা আমার মনে হয় দারুণ হতে চলেছে এই বিশ্বকাপ।'

ম্যানেজার জ্লাটকো ডালিক তারুণ্য এবং অভিজ্ঞতাকে একত্রিত করে দল গঠনের চেষ্টা করেছেন। ক্রোয়েশিয়ার মাঝমাঠ খুব শক্তিশালী। কিন্তু, মরক্কোর আচরাফ হাকিমি এবং নৌসাইর মাজরাউই একটি দুর্দান্ত জুটি, যারা বুধবার পার্থক্য তৈরি করতে পারে।

আজকের দ্বিতীয় ম্যাচে জাপানের বিরুদ্ধে নামছে জার্মানি। ব্রাজিলের পর সব থেকে বেশি বার বিশ্বকাপ জয়ের রেকর্ড জার্মানির। যদিও নেশন্স লিগে গ্ৰুপ পর্ব টপকাতে পারেনি তারা। কিন্তু বিশ্বকাপ নিয়ে আশাবাদী জার্মান কোচ। ফ্লিকের কথায় "এবার অন্য জার্মানিকে দেখা যাবে। লড়াকু জার্মানিকে।" যদিও তারুণ্য ও অভিজ্ঞতা মিশ্রনের দল হলেও অভাব আছে এক্স ফ্যাক্টারের।

নিবন্ধকারঃ ঋদ্ধি রিত

 

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...