বাবা-মায়ের নিশ্চিন্তির জায়গা ক্রেশ

যৌথ পরিবারের ভাঙ্গন, বাবা-মায়ের কর্মব্যস্ততা, আর একা থাকার অভ্যাস—এই তিনের মিশেলে শিশুরা আজ বড় অসহায়। বাবা-মা জীবিকার তাগিদে বেরিয়ে গেলে সময় কাটে হয় বেবি সিটারের কাছে নয়ত বা বৃদ্ধ ঠাকুমা-ঠাকুর্দার কাছে। কারো আবার হয়ত সেই অবকাশও নেই। কেউ সুযোগ পায় না ঠাকুমা-ঠাকুর্দার ছত্রছায়ায় থাকার কারোর বা বাবা-মা নিশ্চিন্ত হন না বেবি সিটারের কাছে নিজের ছানাটিকে সারাদিনের নামে রেখে চলে যেতে। অগত্যা, একটাই উপায়। ক্রেশ। নিশ্চিন্তির এক বড় ঠিকানা আজ এই ক্রেশ।

ক’জন মা আজ কর্মরতা নন বলুন তো? হাতে গুনে বলতে হবে। আজকের বাজারে সকলেই ভাল থাকার আর নিজের সন্তানকে আগামী দিনের উপযুক্ত করে তোলার জন্য ছোটেন জীবিকার পিছনে। আর তাতে একা পড়ে থাকে সেই খুদে সদস্যটিই। তা সে যাই হোক, সমস্যা যেমন আছে, সমস্যার সমাধানও আছে। আর সেই সমাধানের নামই ক্রেশ’

ট্রেনিং প্রাপ্ত টিচার, নার্স, আয়া সবাই থাকেন একটি ক্রেশে। পাশাপাশি শিশুদের মন বোঝেন এমন সায়কায়াট্রিস্টের সর্বদা হাতের ছায়া থাকে যে কোনও নামী ক্রেশের। ক্রেশে থাকা শিশুরা যেটা পায় না তা হল সারাদিন মায়ের হাতের স্পর্শ। কিন্তু ওরা বড় হয়ে ওঠে আর পাঁচটা বাচ্চার সঙ্গে। ওরা একে অপরের সঙ্গে খেলে, ঘুমায়, আড্ডা দেয়, আড়ি-ভাবও করে। একইভাবে, অনেকের সঙ্গে থাকতে থাকতে খাবার কিংবা অন্যান্য জিনিস ওরা শেয়ার করতে শেখে। যেটা একটা নিউক্লিয়ার পরিবারে বসে ওদের পক্ষে শেখা সম্ভব নয়। একাত্মবোধ অনেক ছোট থেকেই জন্ম নেয় ওদের মধ্যে। অনেকের তো হামাগুড়ি, হাঁটতে শেখা সবেরই শুরুয়াত হয় ক্রেশে বসেই। মায়েরা জানতেও পারেন না কখন তার ছানাটি হাঁটতে শিখে গেল! আজ থেকে বছর পনেরো-কুড়ি আগেও কেউ ভাবতে পারেননি নিজের সন্তানটিকে এমন এক নিরাপদ আশ্রয়ে আর পাঁচজন শিশুর সঙ্গে রেখে কোনওদিন অর্থ উপার্জনের জন্য বেরিয়ে যেতে পারবেন।

 

 

শিশুকে ক্রেশে পাঠানোর আগে অভিভাবকের যে কথাগুলি মাথায় রাখা প্রয়োজন-

 

১) বাচ্চা ঘন ঘন সর্দি-কাশিতে ভুগলে তার ওষুধ ক্রেশে দিয়ে রাখতে হবে। যে ডাক্তার বাচ্চাকে দেখেন তাঁর ফোন নম্বর ক্রেশে দিয়ে রাখুন।

২) বাচ্চার কোনও বদ অভ্যাস থাকলে তা জানিয়ে রাখতে হবে।

৩) বিশেষ কোনও কিছুতে যদি বাচ্চার ভয় থাকে তবে সেটাও জানিয়ে রাখতে হবে।

৪) বাচ্চাকে ক্রেশে দিয়ে আসার সময় তিন- চারটে জামার সেট দিয়ে দিতে হবে।

৫) স্কুল গোয়িং বাচ্চাদের রুটিন, টিফিন মা’কেই গুছিয়ে দিতে হবে।

৬) বাচ্চাকে স্নান করিয়ে পাঠাতে হবে।

৭) বাচ্চার ব্রেস্ট মিল্ক ফিডিং-এর অভ্যেস থাকলে তা স্টেরিলাইজড বোতলে স্টোর করে দিয়ে দিতে হবে।

৮) বাচ্চার চিকেন পক্স, খুব জ্বর-সর্দি-কাশি হলে বা স্কিনের কোনও বড় সমস্যা হলে কদিন ক্রেশে না পাঠানোই ভাল।

৯) বাচ্চাকে যে ক্রেশে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে সেই ক্রেশ সম্বন্ধে আগে থেকে একটু খবরাখবর নিয়ে রাখা বাঞ্ছনীয়। প্রয়োজনে কদিন নিজের বাড়িতে থেকেই ওকে ক্রেশে পাঠাতে হবে। দেখতে হবে কোনও গণ্ডগোল দেখা দিচ্ছে কিনা।

১০) বাচ্চাকে ক্রেশে পাঠানোর দিনই জেনে নিতে হবে সে সারাদিন কী করল ক্রেশের অন্যান্য বাচ্চাদের সঙ্গে।

 

একইভাবে একটি ক্রেশের প্রতিনিধিদেরও কতগুলি জিনিস মেনে চলা বাঞ্ছনীয়। কারণ অনেক ভরসা করেই তাদের উপরে নিজেদের সন্তানকে ছেড়ে দিয়ে যান অভিভাবকেরা।

১) ক্রেশ যেখানেই গড়ে উঠুক না কেন, ঘরগুলি হতে হবে বড় এবং বাতাসবহুল।

২) ট্রেনি নার্স থাকা বাঞ্ছনীয়।

৩)বাচ্চাকে যিনি খাওয়াবেন আর যিনি টয়লেট করাবেন তাঁরা দুই ব্যক্তি আলাদা হওয়া দরকার। দুটি কাজ একই ব্যক্তি করলে ভালভাবে হাত ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। ফলের রস বেশিক্ষণ রেখে খাওয়ানো ঠিক নয়।

৪) কয়েক মাস অন্তর বাচ্চাদের হেলথ চেক আপ করাতে হবে।  

৫) গরমকালে বাচ্চার জন্য বাড়ি থেকে যেন হালকা খাবার আসে তা জানিয়ে দিতে হবে ক্রেশকেই।

৬) বাচ্চার সঙ্গে বন্ধুর মতো মিশতে হবে।

৭) প্রয়োজনে শাসন করতে হবে। কিন্তু গায়ে হাত দেওয়া চলবে না।

৮) সময় কাটানোর জন্য শুধু টিভি দেখতে না দিয়ে হ্যান্ড ওয়ার্ক, গল্পের বই পড়া, খেলাধুলো করার সুযোগ করে দিতে হবে।

৯) বাচ্চা খারাপ ভাষা বললে তার বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলতে হবে।

অনেক বাচ্চার ক্রেশে থাকার দরুণ বাবা-মায়ের প্রতি ক্ষোভ জন্মায়। বাবা-মা’কেই  এক্ষেত্রে সজাগ হতে হবে। বাচ্চাকে ঘুরতে নিয়ে যেতে হবে, তাদের সঙ্গে অনেকটা সময় কাটাতে হবে বাড়িতে থাকলে। সন্তানকে বুঝিয়ে দিতে হবে যে কেন তাকে ক্রেশে পাঠানো হচ্ছে। ক্রেশে পাঠানোর ফলে বাচ্চার মধ্যে কোনও খারাপ পরিবর্তন লক্ষ্য করলে অবিলম্বে সেই ক্রেশ ছাড়িয়ে দিতে হবে।

  

 

 

 

 

 

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...