করোনা ভাইরাস যে কি সাংঘাতিক আকারে মহারমারীর রূপ নিয়েছে তা প্রতিনিয়ত বর্ধিত আক্রান্তের সংখ্যা এবং মৃত্যুর হার থেকে বোঝাই যাচ্ছে। আরো চরম বিপদ কারণ এখনো সঠিক কোনো ওষুধ পাওয়া যায় নি। তবে পরিস্থিতি সামাল দিতে বিশ্বের সব দেশ তাদের মতো করে এই রোগের প্রতিরোধকের আবিষ্কারে সচেষ্ট রয়েছেন। কিন্তু খানিক এগিয়ে গিয়েছে আমেরিকা। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আশার আলো দেখাচ্ছেন মার্কিন ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থা গিলিয়েডের বিজ্ঞানীরা। এই দুঃসময়ে সেই আশাব্যঞ্জক ইঙ্গিত দেব। তবে এই ওষুধ আদৌ কতটা কার্যকরী তার ফলাফল আগামী সপ্তাহেই জানা যাবে।
এতো দিন পর্যন্ত চিকিৎসকরা রোগীর শারীরিক পরীক্ষা নিরীক্ষা করে তার ওষুধ গ্রহণের ক্ষমতা বুঝে ওষুধ প্রয়োগ করছেন , তবে সেটা এক বিশেষ ধরণের ওষুধ। যা আবার সব রোগীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। আমেরিকা , ইতালির আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা আপাতত সবচেয়ে বেশী। পরিস্থিতি ক্রমশঃ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। আবার এ এমন ভাইরাস যা সাংঘাতিক ছোঁয়াচে। তাই সংক্রমণ প্রতিরোধে শুরু হয়েছে লকডাউন , কিন্তু তা এক মাত্র সমাধান নয়। এর ফল হলো চরম আর্থিক দুর্যোগ । তাই পরিস্থিতি সামাল দিতে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আশার আলো দেখাচ্ছেন মার্কিন সংস্থা গিলিয়েডের বিজ্ঞানীরা। তবে এই ওষুধ আদৌ কতটা কার্যকরী তার ফলাফলের জন্য আগামী সপ্তাহের প্রতীক্ষা ছাড়া গতি নেই। অতএব আশা করা যায় মহামারী নিয়ন্ত্রিত হলো বলে - শুরু হয়ে যাবে কোভিড-১৯ এর চিকিৎসাও।
কিছুদিন আগে অর্থাৎ ২৩ মার্চ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা রেমডিসেভিয়ার নামের ওষুধটিকে অরফ্যান ড্রাগ হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে । অর্থাৎ নিয়ম মেনে পরীক্ষামূলকভাবে রোগীদের উপর প্রয়োগ করা যেতে পারে এই ওষুধ। এর আগে ড্রাই ল্যাবের পরীক্ষা এবং অন্যান্য জীবের উপর পরীক্ষা করে ইতিবাচক ফল পাওয়া গিয়েছে। এবার চিন সহ কয়েকটি দেশের রোগীদের উপর পরীক্ষামূলকভাবে এই ওষুধের প্রয়োগ শুরু হয়েছে , যার কার্যকরিতার ফল জানা যাবে আগামী সপ্তাহে ।
তবে এই আবিষ্কারকে ঘিরে ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে বিতর্ক। বিশ্বব্যাপী মহামারীর পরিস্থিতিতে যা , তাতে কি পরিমান ওষুধ মানুষের কাছে পৌঁছতে হবে তার হিসেবে করলে দেখা যাবে অঙ্কটা নেহাত সামান্য নয়। তবে সংক্রমণের যা প্রকৃতি তাতে ওষুধ পৌঁছনোর আগেই সংক্রমণ ও মৃতের সংখ্যা কল্পনাতীত রুপে ছাপিয়ে যাবে । আর সেই ওষুধ যাতে সময় মতো বিশ্বের চরম আক্রান্ত দেশে প্রতিটা মানুষের কাছে পৌঁছতে পারে এবং সুলভে তার জন্য ইতিমধ্যেই ,‘ডক্টর উইদাউট বর্ডারস’ সহ প্রায় ১৫০টি সংস্থা ওষুধটির পেটেন্ট না নেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন গিলিয়েডের কর্ণধারকে। বলা বাহুল্য, সেই আবেদনে সাড়া দেননি গিলিয়েডের কর্ণধার। তাঁর মতে ওষুধ যাতে প্রতিটা মানুষের কাছে পৌঁছয় সেদিকে নজর রাখা হবে। ফলে প্রশ্ন উঠছে, এই বিশেষ প্রয়োজনের সময় কি আমেরিকা তার চিরকালীন ব্যবসায়িক মনোবৃত্তি থেকে বেরোতে পারছে না ? চড়া দামে এই ওষুধ বিক্রির পরিকল্পনা করছে ওষুধ নির্মাতা সংস্থাটি?
প্রশ্ন যাই থাকে না কেন আপাত ভয়াবহ পরিস্থিতি সামলাতে চিকিৎসক থেকে বিজ্ঞানী সবাই অপেক্ষমান যে এই নতুন ওষুধ তৃতীয় স্তরের পরীক্ষায় আদৌ পাশ করে কি না । তার পর বাকি পদ্ধতি। অবশ্য ভাইরাসের আতঙ্ক থেকে বাঁচতে সকলের প্রশ্ন কবে আসবে এই ওষুধ? কবে বন্ধ হবে মৃত্যু মিছিল ? চরম আতঙ্ক ও মৃত্যুভয়ে দিন গুনছে অসহায় এই মানুষ।