‘হাওয়াই মিঠাই’—এক চিলতে শৈশবের ডাক

দুপুরের পড়ন্ত রোদে টুং টাং ঘন্টা নাড়তে নাড়তে পাড়ার গলিতে ডাক দেয় ফিরিওয়ালা। সে-ডাকে সাড়া দেয় শৈশব। বেরিয়ে আসে ঘর ছেড়ে। ফিরিওয়ালার এক হাতে ছোট্ট এক টুকরো লাঠি, লাঠির দু’দিকে থরে থরে সাজানো গোলাপি-সাদা রেশমের তুলোর মতো ‘হাওয়াই মিঠাই’। দেখে জিভে জল আসে, ইচ্ছে করে প্যাকেট ছিঁড়ে সবটাই এক্কেবারে মুখে দিতে। কিন্তু মুখে দিলেই জিভে মিঠে স্বাদটুকু রেখে নিমেষে যেন সবটা হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। সেজন্যই বুঝি এর নাম ‘হাওয়াই মিঠাই’।

ঠোঁটজোড়া গোলাপি রঙে রাঙিয়ে যেই না শৈশব ঘরে ঢোকে, অমনি মায়ের বকা। ‘সারাদিন লুকিয়ে লুকিয়ে ঐ সবই খাও আর কি, দাঁত থেকে যখন তিড়িং বিড়িং করে পোকা বেরোবে তখন বুঝবে মজা!’

মা কিচ্ছু জানে না। আমেরিকায় যে লোকটা একশ বছর আগে ‘ফেয়ারি ফ্লস’ নাম দিয়ে মেশিনে এই মিঠাই প্রথম তৈরি করেছিল, সে ছিল একজন দাঁতের ডাক্তার। অবশ্য তারও আগে হাতে বানিয়ে ইটালির লোক পাঁচশো বছর ধরে এ-জিনিস খাচ্ছে। ‘কটন ক্যান্ডি’, ‘টুটসি রোল’, ‘ক্যান্ডি ফ্লস’ কত রকমের নাম নিয়ে দেশে দেশে ঘুরে আমাদের হাতে পড়ে তার নাম হয়েছে ‘বুড়ির চুল’ আর ‘হাওয়াই মিঠাই’।

মায়ের সতর্ক চোখে, এতে চিনি, হাওয়া আর এক খামচা রঙ ছাড়া আর কিচ্ছু নেই। তবু গলি দিয়ে টুং টাং আওয়াজ তুলে ফিরিওয়ালা যখন চলে যায়, তখন জাগিয়ে রেখে যায় বুকের ভেতর কবেকার এক চিলতে শৈশব।    

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...