আজ গোটা বিশ্ব যে করোনা ভাইরাসের কারণে কার্যতঃ স্তব্ধ হতে বসেছে , যেখানে মানুষের ভবিষ্যৎ এক চরম অনিশ্চয়তার দিকে ধাবিত হচ্ছে সেই ‘করোনা’ নামটির সাথে বঙ্গের যে এক ঐতিহাসিক স্মৃতি বিজড়িত আছে এমনটা বোধহয় অধিকাংশ মানুষের অজানা। শুনে অবাক লাগতেই পারে , করোনার সাথে স্মৃতি ??? এ আবার কেমন কথা ! আজ তেমন এক অজানা কথা জানাবো।
করোনা ভাইরাসের বয়স নেহৎ কম নয় , বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যানুযায়ী সে ৮৯ বছরে পদার্পন করেছে। কিন্তু যে ‘করোনা ‘র কথা আজ বলবো সে ভাইরাস তো একেবারেই নয় , বরং এখনো তার দেখা মেলে বাংলার এক অন্যতম পর্যটন কেন্দ্রে - দার্জিলিঙের ঐতিহাসিক রায়ভিলায় । না না…...এটা কোনো কোয়ারেন্টাইন সেন্টার নয়। এই করোনা হলো এক পুরোনো টাইপ রাইটার। অন্যসময় তাকে দেখার ভিড় থাকলেও এখন সমস্ত জায়গা কার্যত বন্ধ । ফলে আপাতত এই ‘করোনাও নিজেকে গৃহবন্দী করেছে।
দার্জিলিংয়ের এই রায়ভিলা ভগিনী নিবেদিতার স্মৃতি বিজড়িত । ১৯১১ সালে দার্জিলিংয়েই এই বাড়িতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন নিবেদিতা। সেখানে তাঁর সমাধিও হয়। নিবেদিতার স্মৃতি বিজড়িত এই বাড়িতেই সযত্নে রাখা হয়েছে করোনা টাইপ রাইটার। টাইপ রাইটারটি ১৯২০ সালের।সেই দিক থেকে দেখতে গেলে টাইপ রাইটারটি শতবর্ষ প্রাচীন, আর সেই কারণে এটিকে রায়ভিলায় নিবেদিতার ঘরে সযত্নে রাখা হয়েছে বলে জানান , রায়ভিলার শ্রীরামকৃষ্ণ নিবেদিতা শিক্ষা ও সংস্কৃতি কেন্দ্রের সম্পাদক স্বামী নিত্যসত্যানন্দ।
এবার আসি করোনা টাইপ রাইটারের প্রসঙ্গে। কিন্তু এই করোনা নামের কারণ কি ? এই করোনা টাইপ রাইটারটি এক মার্কিন কোম্পানি নির্মিত । যার সূচনা হয় ১৮৮৬ সালে ‘ স্মিথ প্রিমিয়ার টাইপরাইটার সংস্থা’ নামে , লিমন কর্নেলিয়াস স্মিথ , উইলবার্ট স্মিথ, মনরো সি স্মিথ এবং হার্লবার্ট স্মিথ এই ভাইদের হাত ধরে । ক্রমাগত নাম পরিবর্তনের পর ১৯১৪ সালে তাদের ‘করোনা’র মডেলটির সাফল্যের সাথে বাজারে ছড়িয়ে পড়ে এবং তৎকালীন ‘স্ট্যান্ডার্ড টাইপরাইটার সংস্থা ‘র নতুন নামকরন হয় ‘করোনা টাইপরাইটার কোম্পানি ‘। ‘করোনা’ টাইপ রাইটারের বিশেষত্ব হল এটি ফোল্ড করা যায়। লম্বায় পাঁচ ইঞ্চি, চওড়ায় দশ ইঞ্চি এবং উচ্চতায় আট ইঞ্চি।এর আগে এমন ফোল্ডিং টাইপ রাইটারের তেমন প্রচলন ছিল না। যুদ্ধে যাওয়ার সময় এই টাইপ রাইটার ব্যবহার করতে বেশ সুবিধা হত।
এই টাইপ রাইটারটির সাথে ইতিহাস জড়িত আছে। চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারী এই নামটি কারো অজানা নয়। ভারতীয় রাজনীতির অন্যতম পুরোধা। তিনি যখন রাজ্যপাল ছিলেন, সেই সময় নিয়মিত তিনি দার্জিলিং আসতেন । সাথে থাকতেন সেনাবাহিনীর চিকিৎসক ছিলেন, মেজর জেনারেল পি চ্যাটার্জি। তিনি পরে অন্যত্র ভাইসরয় হয়ে চলে গেলেও মেজর জেনারেল পি চ্যাটার্জি বেশ কিছুদিন দার্জিলিংয়ে থাকাকালীন এই টাইপ রাইটারটি ব্যবহার করতেন। যদিও কম্পিউটার চলে আসার পর ‘করোনা’কে আর ব্যবহার করা হয় না।
দার্জিলিং বেড়াতে আসা দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে এই টাইপ রাইটারটি একটি দ্রষ্টব্যের বিষয়। পুরোনো হলেও তা কিন্তু এখনও সচল।পাহাড়ে এখন পর্যটক আসা বন্ধ করোনা সতর্কতার জন্য । ফলে একটু মজার ছলে বলতে দ্বিধা নেই যে বিশ্ববাসীর সাথে করোনা নিজেও গৃহবন্দী রয়েছে । তবে করোনার ভয়াল রূপ ছাড়াও যে ঐতিহাসিক এক সত্ত্বা আছে তা কিন্তু বেশ চমকপ্রদ এতে কোনো সন্দেহ নেই। ।