কোচবিহার। একসময়ে বাংলার অত্যন্ত সমৃদ্ধ এক অঞ্চল। প্রায় ৫০০ বছরের প্রাচীন ইতিহাসের সাক্ষী। উত্তরের এই জেলা পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম পযর্টন কেন্দ্র। টুরিস্টদের কাছে কোচবিহারের একাধিক আকর্ষণ। এই জেলা ভারতের সর্বকালের অন্যতম সেরা সুন্দরী গায়ত্রী দেবীর জন্মস্থান। তাঁর সময়ে যিনি বিশ্বের সেরা সুন্দরীদের একজন। ১৯১৯ সালে কোচবিহার রাজ পরিবারে তাঁর জন্ম হয়। পরবর্তী সময়ে জয়পুরের মহারাজ সাওয়া মানসিং- এর সঙ্গে বিবাহসূত্রে তিনি জয়পুরের রাজমাতা হন।
কোচবিহারকে ‘হেরিটেজ’ শহরের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
কোচবিহারের ‘কোচ’ শব্দটি এসেছে কোচ রাজবংশ থেকে। বিহার সংস্কৃত শব্দ। সপ্তদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে লেখা ‘শাহজাহাননামা'য় কোচবিহারের উল্লেখ পাওয়া যায়। অষ্টাদশ শতকে মেজর রেনলের মানচিত্রে ‘কোচবিহার বিহার’ উল্লেখিত ছিল। ‘কোচবিহার’ জনপদের বিস্তর ইতিহাস। সেই ইতিহাসের সঙ্গে রাজ পরিবারের ইতিহাস ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে।
কোচবিহারের অন্যতম আকর্ষণ রাজবাড়ি। রাজবাড়ির অপর নাম ভিক্টর জুবিলি প্যালেস। ১৮২৮ খ্রিষ্টাব্দে মাহারাজা প্রাণনারায়ণের দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। তবে সেই রাজপ্রাসাদ ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ভস্মীভূত হয়ে যায়। বাসের অযোগ্য হয়ে পড়ে।
পরবর্তী সময়ে সেই বাড়ি সংস্কার করা হয়। রাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণের রাজত্বকালে। ১৮৮৭ সালে। কোচবিহারের কেশব রোড এলাকায়। ‘সংস্কার’ না বলে, ‘পুনর্নির্মাণ' বলাই ভাল।
নৃপেন্দ্রনারায়ণকে কোচবিহারের রূপকার বলা হয়। তিনি কেশবচন্দ্র সেনের মেয়ে সুনীতি দেবীকে বিবাহ করেছিলেন।
কোচবিহারের নতুন রাজপ্রাসাদ গড়ে উঠেছিল ইংল্যান্ডের বাকিংহাম প্যালেসের আদলে। ক্ল্যাসিক্যাল ওয়েস্টার্ন শৈলীতে। ইটের তৈরি। ৫১,৩০৪ স্কোয়ার ফিট জায়গা জুড়ে তৈরি হয় প্রাসাদ। ৩৯৫ ফুট চওড়া উচ্চতা। হাতির মূর্তি, সিংহ প্রাসাদে ঢুকতে গেলে চোখ টেনে নেয় মূল প্রবেশ দ্বার। রাজপ্রাসাদের কেন্দ্রে ১২৪ ফুট উঁচু দরবার হল আছে। রেনেসাঁ শৈলীতে নির্মিত।
প্রাসাদের ভিতরে রয়েছে বৈঠকঘর, বিলিয়ার্ডরুম, ড্রইংরুম, ডাইনিং হল, গ্রন্থাগার, তোষাখানা, লেডিজ গ্যালারি ইত্যাদি অসংখ্য ঘর।
রাজপ্রাসাদটিকে এখন মিউজিয়ামের রূপ দেওয়া হয়েছে। হারানো অতীত দেখতে বহু মানুষ ভিড় করেন সেখানে।
রাজ আমলের ইতিহাসকে টুরিস্টদের কাছে তুলে ধরতে রাজ্য সরকার মিউজিয়ামে লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো চালু করেছে।