অনির বয়স ছয়। এই বয়সেই সে খুব ডিপ্রেসড, একা। তাকে পড়তে, রিসাইট করতে কিম্বা প্রান খুলে নাচতে, যাই বলুন না কেন, সবেতেই তার সংশয়, ‘আমি কি পারব!’; সবেতেই দৃঢ় বিশ্বাস, ‘আমি এসব পারি না, আমার বুনু সব পারে। আমি পারব কি করে, আমার মাথায় তো গোবর পোরা!’
স্কুলের টিচার আর পেরেন্টসদের কাছে তার না-পারাটা এত বড় হয়ে দাঁড়ায় যে, তাকে অন্যের সঙ্গে কমপেয়ার করে কোণঠাসা করেও যেন রাগ মেটে না। এখন বেত বন্ধ, কিন্তু মেন্টাল টর্চার?
এডুকেশনের বাঁধা গতে টিচার আছেন, পেরেন্টস আছেন, ফ্রেন্ড নেই। তাই ধীরে ধীরে কখন যে অনির মনে ডিস্লেক্সিয়া বাসা বেঁধে ফেলেছে, কেউ টের পান না। এতে শুধু পড়াশুনো না, কোন কিছু শেখার আগ্রহটাই চলে যায়। নিজেকে গুটিয়ে রাখার টেন্ডেন্সি বাড়ে।
বাঁধা গতের গন্ডি পেরিয়ে রবীন্দ্রনাথ সেই কবেই ‘শুধু পড়া-পড়া খেলা’-র কথা বলেছিলেন। এটা তখন কেউ এদেশে বিশ্বাস করতেই চায়নি। এখন অবশ্য দিন বদলাচ্ছে। হয়তো ডিস্লেক্সিয়ার মতো শিশুমনের সমস্যার প্রতি আমাদের সচেতনতা বাড়ছে। তা ই ইওরোপ, আমেরিকার কিন্ডারগার্টেনের ‘প্লেস্কুল’ কনসেপ্ট এদেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। আমাদের রাজ্যেও। ‘প্রি-স্কুল’ নামে। এমনই এক প্রি-স্কুলের দুই কর্ণধার সুব্রত দত্ত ও অর্পিতা দত্তের সঙ্গে সেদিন কথা হচ্ছিল। জানা গেল, প্রি-স্কুলে গান-গল্প-খেলা-ক্র্যাফটের মধ্য দিয়ে চলে কচিকাঁচাদের ভবিষ্যৎ পড়াশুনোর ‘ভিত’ তৈরির কাজ। প্লেস্কুলের মতোই এখানে বেত নেই, বকা নেই, আছে শিশুর নরম মনটাকে সঠিক দিশায় এগিয়ে দেওয়ার সাধনা।