৬ মার্চ উদ্বোধন হল ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রোর হাওড়া ময়দান-এসপ্ল্যানেড বিভাগ। গঙ্গার নীচে দিয়ে চলবে মেট্রো। উচ্ছ্বাসিত গোটা শহরবাসী। তবে, সাধারণ মানুষের জন্য এখনও খোলেনি সেই মেট্রো। শোনা যাচ্ছে খুব শ্রীঘই খুলে যাবে মেট্রোর দ্বার। তবে, সেই যাত্রা শুরু করানোর আগেই চিন্তার মুখে পড়ল মেট্রো কর্তৃপক্ষ।
বর্তমানে মেট্রো কর্তৃপক্ষ অন্য কথাই ভাবছেন। তাঁরা বলছেন যে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর শিয়ালদহ থেকে সেক্টর ফাইভের তুলনায় প্রতিদিন ১০ গুণেরও বেশি যাত্রী এসপ্ল্যানেড-হাওড়া মেট্রো পথ দিয়ে সফর করার সম্ভাবনা রয়েছে। তাঁরা আরও অনুমান করছেন যে হাওড়া ময়দান থেকে সেক্টর ফাইভ পর্যন্ত পুরো পথে মেট্রো চালু হলে প্রতিদিন যাত্রীর সংখ্যা প্রায় ২৫ লক্ষে গিয়ে দাঁড়াতে পারে।
ফলে, মেট্রোকর্তাদের একাংশের কাছে এটা যেমন আশা তেমনই আশঙ্কা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এক দিকে যেমন মেট্রোর আয়বৃদ্ধি হবে। ঠিক তেমনই এটি আশঙ্কারও কারণ। কারণ যাত্রীর সংখ্যা বাড়লে চাপ সামলানোর জন্য যথেষ্ট সংখ্যক কর্মীর প্রয়োজন, যা হয়েতো কিছুটা অভাব রয়েছে।
মেট্রোর তরফ থেকে জানা গিয়েছে যে সেক্টর ফাইভ থেকে শিয়ালদহের মধ্যে যে সূচি মেনে মেট্রো চলে, সেই সূচি ধরেই এসপ্ল্যানেড থেকে হাওড়ার মধ্যে সেই একই সূচি মানা হবে। আরও জানা গিয়েছে যে শিয়ালদহ থেকে সেক্টর ফাইভ মেট্রোপথে দৈনিক ৪০ থেকে ৫০ হাজার যাত্রী সফর করেন। কিন্তু এসপ্ল্যানেড থেকে হাওড়ায় সেই যাত্রী সংখ্যা বেড়ে হবে দিনে সাড়ে চার থেকে পাঁচ লক্ষ বা তারও বেশি ।
হাওড়া ময়দান- এসপ্ল্যানেড মেট্রো পরিষেবা শুরু হলে বি বা দী বাগ- এসপ্ল্যানেড অঞ্চলের পরিবহণ চিত্রও বদলে যাবে। যেই সব যাত্রীরা পড়াশোনা, চাকরি, ব্যবসা-সহ নানা কাজে বাসে করে হাওড়া থেকে এসপ্ল্যানেড আসেন। তাঁদের মধ্যে বেশিরভাগ যাত্রীরাই মেট্রো সফরটিকে প্রথমে বেছে নেবেন। কারণ, বেসরকারি বাস ১০ থেকে ১৫ টাকার ভাড়া নেয়, সেখানে মেট্রোয় উঠলে সেই সফর হয়ে যাবে আরামদায়ক এবং সস্তা। সমস্যা ছাড়াই কম সময়ে যাতায়াত করতে পারবেন যাত্রীরা।
যেই সমস্ত যাত্রীরা ট্রেন থেকে নেমে বি বা দী বাগ অথবা কলকাতা হাই কোর্টের অফিসপাড়ায় আসেন, তাঁদের মধ্যে বেশিরভাগ যাত্রীরাই ফেরি পরিষেবাকে প্রথমে বেছে নেন। অর্থাৎ হাওড়া থেকে লঞ্চ চেপে শিপিং কর্পোরেশন বা ফেয়ারলি প্লেসের ঘাটে নেমে নিজেদের গন্তব্যে পৌঁছন তাঁরা। কিন্তু মেট্রো চালু হলে ওই যাত্রীদের মধ্যে সবচেয়ে বড় অংশই ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর বি বা দী বাগের অফিসপাড়া সংলগ্ন মহাকরণ স্টেশনকে বেছে নেবেন। এমনটাই অনুমান করছেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ। ফলে, মেট্রো চালু হলে প্রচুর বেসরকারি বাস, মিনিবাস ও ফেরি পরিষেবা হারাতে পারেন বহু যাত্রীদের। যেই সব যাত্রীরা বাবুঘাট আসেন। তারা ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কার্জন পার্ক লাগোয়া এসপ্ল্যানেড স্টেশনের ইডেন প্রান্তকে বেছে নেবেন।
অন্যদিকে যারা কলকাতা শহর থেকে দূরপাল্লার ট্রেন ধরার জন্য যাত্রীরা হাওড়া স্টেশন আসেন। তারাও এই মেট্রোকেই এক কথায় বেছে নেবেন। ফলে, এই মেট্রো চালু হলে প্রায় বিপুল অংশের সাধারণ মানুষদের সুবিধা হবে।
পরিবহণ চিত্রের বদল দেখতে পেয়ে চিন্তায় পড়ে গিয়েছে মেট্রো আধিকারিকরা। এছাড়া মেট্রোর ছাড়পত্র দিতে গিয়েও চিফ সেফটি কমিশনারও বিপুল সংখ্যক যাত্রীর সম্ভাবনার দিকটি তুলে ধরে চিন্তা প্রকাশ করেছিলেন।
মেট্রো সুত্রে আরও জানা গিয়েছে যে এই মেট্রো পরিষেবা চালু করলে ভীড় সামলানোর জন্য ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর বিভিন্ন স্টেশনে যথেষ্ট কর্মী প্রয়োজন। ফলে, কর্তৃপক্ষ দু রকম ভাবনা ভেবেছেন। নিজস্ব কর্মী এবং বেসরকারি সংস্থার কর্মী দিয়ে পরিস্থিতি সামলানো হতে পারে। এই পরিকল্পনার কথাই ভাবা হচ্ছে আপাতত। এছাড়া টিকেটিং জোনের বাইরে বেসরকারি সংস্থার নিরাপত্তারক্ষীদের ব্যবহার করা হতে পারে। ফলে, হাওড়া স্টেশনের টিকিট বুকিং কাউন্টার সামলানোর জন্য বিশেষ প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে। এমনটাই জানিয়েছেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ। এই সমস্ত প্রস্তুতি ঠিকঠাক হলেই চলতি মাস থেকে পরিষেবা চালু করার চেষ্টা করছেন মেট্রো আধিকারিকরা।