প্রয়াত বলিউডের জগদীপ

যারা হাসায় তাদের বুকে জমে থাকে কান্না। সেই কান্না জন্ম দেয় হাসির। বলিউডের দুনিয়ায় জগদীপ এইরকম এক কমেডিয়ান। যিনি নিজে দুঃখে জারিত হয়ে অনাবিল হাসিটি বিলিয়ে দিয়েছেন চিরকাল। সিনেমায় পথ চলা শুরু হয়েছিল মাত্র নয় বছর বয়সে। দেশভাগের যন্ত্রণা নিয়ে সমস্ত কিছু হারিয়ে বোম্বের এক দাদার কাছে মায়ের হাত ধরে চলে এসেছিলেন।

মায়ের কাজে সাহায্যের পাশাপাশি ছোট্ট জগদীপ একটি টিনের কারখানায় কাজ করা শুরু করেন। পেটের দায় বড় দায়। আরব সাগরের তীরে টিকে থাকতে নানা রকম কাজ করতে হত।
হঠাৎ একদিন রাস্তায় একজনের সঙ্গে আলাপ হয়। তিনি ছোট্ট জগদীপকে স্টুডিও পাড়ায় নিয়ে যান। জীবনের চাকা যেন অন্যদিকে ঘুরতে শুরু করল। সেখান থেকেই অভিনয়ের হাতেখড়ি।
চাইল্ড আর্টিস্ট হিসেবে দর্শকাসনে বসার জন্য পারিশ্রমিক বাবদ তিন টাকা পাওয়ার কথা ছিল। উর্দু ডায়লগ বলতে পারায় দারোয়ানের চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেয়ে যান। তারপর তিন টাকা থেকে সেটা ছয় টাকা হয়ে যায়। ছবিটি ছিল বি. আর .চোপড়ার "আফসানা"। অ্যাসিট্যান্ট ডিরেক্টর যশ চোপড়া।
এরপর ফণি মজুমদারের "বোধি ডাক্তার" ছবিতে কিশোর কুমারের ছোটবেলার চরিত্রে অভিনয় করেন। সেই সময় বিমল রায় তাঁর অভিনয় দেখে "দো বিঘা জমিতে" অভিনয় করার প্রস্তাব দেন। পারিশ্রমিক ৩০০ টাকা।

কমপক্ষে ৪০০ ছবিতে জগদীপ অভিনয় করেছেন। তবে "শোলে" ছবির 'সুরমা ভোপালি'র চরিত্রটি তাঁকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছে দেয়। 'শোলে' ছবিটি সাতের দশকে মুক্তি পায়। 'সুরমা ভোপালি' চরিত্রটির যোগসূত্র তৈরি হয়ে গিয়েছিল অনেক বছর আগে।

'শাহি লুটেরা' ছবিতে 'শোল'-এর সেলিম- জাভেদ জুটি কাজ করেছিল। সেলিম অভিনয় করেছিলেন। জাভেদ আখতার থার্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট এবং জগদীপ কমেডিয়ান ছিলেন। তিনজনে মিলে রোজ সন্ধ্যায় শ্যুটিং শেষে আড্ডা দিতেন। জাভেদ ভোপালের মেয়েদের কথা বলার স্টাইল মিমিক্রি করে দেখাতেন। সেই কথা বলার স্টাইল জগদীপ জাভেদ আখতারের কাছ থেকে শেখেন এবং পরবর্তীকালে "শোলে" ছবিতে ব্যবহার করেন। তারপরের ইতিহাস সকলের জানা।

'সুরমা ভোপালি' চরিত্রটি এতই জনপ্রিয় হয়েছিল যে জগদীপ এই নামে ১৯৮৮ সালে অমিতাভ বচ্চন, ধর্মেন্দ্র আর রেখাকে নিয়ে কমেডি ছবি তৈরি করেন। তবে সিনেমাটি সেভাবে বানিজ্যিক সাফল্য পায়নি। একমাত্র মধ্যপ্রদেশের ভোপালে ছবিটি খুব চলেছিল।

বর্ষীয়ান কৌতুকাভিনেতা জগদীপ ৮ জুলাই মুম্বাইয়ের বান্দ্রায় নিজের বাড়িতে ৮:৪০ নাগাদ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। বার্ধক্যজনিত অসুস্থতা থেকেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। ৯ জুলাই শিয়া কবরস্থানে তাঁকে সমাধিস্থ করা হবে।

১৯৩৯ সালের ২৯ মার্চ জগদীপ জন্মগ্রহণ করেছিলেন। অভিনেতার আসল নাম সৈয়দ ইসতিয়াক আহমেদ জাফরি। তিনি জগদীপ নামেই বলিউড তথা দর্শকদের মধ্যে পরিচিত। 'শোলে' ছাড়া 'আন্দাজ আপনা আপনা', 'ব্রহ্মচারী', 'নাগিন', 'পুরানা মন্দির'-এর মতো ছবিতে অভিনয় করেছেন। শেষবার তাঁকে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল ২০১২ সালে মুক্তি প্রাপ্ত ছবি 'গলি গলি ম্যায় চোর হ্যায়' সিনেমায়। অভিনেতা জগদীপের মৃত্যুতে বলিউডে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...