Cinderella Das: চার বছরের প্রশিক্ষণেই বিশ্ব দেখছে সিন্ড্রেলা ম্যাজিক

বয়স মাত্র ১৫। কিন্তু এর মধ্যেই রাজ্য ও জাতীয় স্তরে টেবল টেনিস খেলায় অভিষেক হয়ে গেছে কলকাতার একরত্তি সেই মেয়ের। সেই কারণে বুক ভরে স্বপ্ন দেখে সিন্ড্রেলা দাস। ইচ্ছে, একদিন দেশের নাম সারা বিশ্বের কাছে উজ্জ্বল করে তুলবে।

 

হাইলাইটসঃ
১। কলকাতার বাঘাযতীনের মেয়ে সিন্ড্রেলা
২। মাত্র ১৫ বছর বয়সে জাতীয় স্তরে নাম লিখিয়েছে সে
৩। মাত্র তিন বছর বয়সে খেলায় হাতেখড়ি তাঁর।

 

কে এই সিন্ড্রেলা?

কলকাতার বাঘাযতীনের মেয়ে সিন্ড্রেলা। ছোটবেলা থেকেই টেবল টেনিস তাঁর সবচেয়ে পছন্দের খেলা। খুব ছোট বয়সেই ঘরে উপচে পরা মেডেল, তাঁর সেই খেলার প্রতি দক্ষতা প্রমাণ করে।

কীভাবে টেবল টেনিসে হাতেখড়ি?

সিন্ড্রেলার টেবল টেনিস খেলার সাথে পরিচয় হয় মাত্র তিন বছর বয়সে। তাঁর মা সুস্মিতা ও বাবা সুপ্রিয় সবসময় চেয়েছেন, মেয়ে খেলাধুলোর মধ্যে বেড়ে উঠুক। সেই অনুযায়ী নাচ, গান, আঁকার পাশাপাশি সাঁতারেও অনুশীলন নিত এই একরত্তি। কিন্তু বাঘাযতীনে পাড়ার এক ক্লাবে টেবল টেনিস খেলা দেখে সিন্ড্রেলা। ক্লাবে মূলত তাঁর থেকে বয়সে বড় ছেলেমেয়েরাই খেলত। কিন্তু এই খেলার প্রতি আগ্রহ থাকার কারণে দূর থেকে বসে বসেই বড় দাদাদের খেলার নানা কৌশল শেখার চেষ্টা করত সে। তারপর চলত অনুশীলন। অবশেষে একদিন এক প্রতিযোগিতায় খেলার সু্যোগ আসে সিন্ড্রেলার। আর সেই খেলাই জীবন বদলে দেয় তাঁর।

সেই ক্লাব থেকেই গার্ডেনরিচের এক প্রতিযোগিতায় খেলতে গেছিল ছোট্ট একরত্তি। সেখানে ছেলে-মেয়ে সকলে একসঙ্গে খেলছিল। সেই ম্যাচে ছেলেদের হারিয়ে ট্রফি জিতে নিয়েছিল সে। তারপর থেকেই টেবল টেনিস হয়ে উঠল সিন্ড্রেলার একমাত্র ধ্যান-জ্ঞান।


এরপর বাবা-মা আর দেরী করেননি। সিন্ড্রেলাকে তারা ভর্তি করেন ধুনসেরি ধানুকা সৌম্যদীপ পৌলমী টেবল টেনিস অ্যাকাডেমিতে। সেখানে কোচ ধুনসেরি ধানুকা, সৌম্যদীপ পৌলমী –র ত্বত্তাবধানে পারদর্শী হয়ে ওঠে একরত্তি। এরপরের ১২ বছরে নিজেকে তৈরি করেছে সিন্ড্রেলা। আর এখন সুইডেনে যুব বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে লড়ছে সেই মেয়ে।

কেমনভাবে খেলে সিন্ড্রেলা?

কলকাতার সিন্ড্রেলা দাস আক্রমণাত্মক শট খেলতে সবথেকে বেশি পছন্দ করে। সিন্ড্রেলার লক্ষ্য থাকে সার্ভিস, ও তার পরের শটেই পয়েন্ট জিতে নেওয়া। বড় র্যালির দিকে তাকিয়ে না থেকে দ্রুত পয়েন্ট জেতার চেষ্টা করে সে।

টপ স্পিন সামলাতে সিন্ড্রেলা ব্যবহার করে তার ফোরহ্যান্ড পিমপলস ব্যাট। তবে কোনও রকমের ট্রিক ব্যাট কোনও দিন ব্যবহার করেনি সে। বরাবর একই ব্যাট নিয়ে খেলেছে কলকাতার এই মেয়ে। তবে সিঙ্গলস খেলতে সবচেয়ে বেশি ভালবাসে সিন্ড্রেলা। তার পরে ভালবাসে ডাবলস।

কী সাফল্য এসেছে তাঁর ঝুলিতে?

সিন্ড্রেলা অনূর্ধ্ব-১৫ ও অনূর্ধ্ব-১৭ রাজ্য চ্যাম্পিয়ন হয়। ডব্লিউটিটি ইয়ুথ কন্টেন্ডারে স্লোভেনিয়ায় অনূর্ধ্ব-১৩ সোনা, ইটালিতে অনূর্ধ্ব-১৩ সোনা, আলজেরিয়া, শ্রীলঙ্কা ও পেরুতে অনূর্ধ্ব-১৫ সোনা জিতেছে সে। এছাড়াও, দোহায় যুব প্রতিযোগিতা ও গোয়ায় অনূর্ধ্ব-১৭ জাতীয় চ্যাম্পিয়নের শিরোপা উঠেছে তাঁর মাথায়। এখন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্যে সুইডেনে খেলতে নেমেছে সিন্ড্রেলা। কিন্তু অবাক বিষয়, মাত্র চার বছরের খেলোয়াড় জীবনে সে অর্জন করেছে এই সবকিছু।

কঠিন অনুশীলন, অধ্যাবসায় ও একনিষ্ঠতা সিন্ড্রেলাকে আজ বিশ্বের দরবারে নিজের দক্ষতাকে প্রমাণ করার সুযোগ এনে দিয়েছে। নিজের পছন্দের খাবার, বন্ধু, আড্ডা সব ছেড়েছে সে এই সাফল্যের তাগিদে। কে বলতে পারে, ভবিষ্যতে তাঁর নাম নিয়ে গর্ব অনুভব করবে গোটা ভারতবাসী। সেই কারণে প্রস্তুতিও শুরু করে দিয়েছে সিন্ড্রেলা দাস। ২০২৮ সালের লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিক্সে দেশের হয়ে খেলতে চায় সে। তার আগে ২০২৬ সালের কমনওয়েলথ গেমে ভাগ নেবে সে।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...