কখনও বিরিয়ানি, কখনও বড়া পাও, কখনও বেগুনভাজা আবার কখনও বা চম্পারণ দেশি রান্না খাইয়েই নিউইউর্কের মন জয় করে নিয়েছেন ভারতীয় শেফ চিন্তন পান্ডে।
ভারতীয় খানার গুণমুগ্ধ ভক্ত গোটা বিশ্ব জুড়েই। চিন্তনের রেঁস্তোরাতে তার ছাপ। বিশুদ্ধ ভারতীয় খাবারের স্বাদ পেতে আমেরিকার নানা প্রান্ত থেকে সেখানে আসেন ভোজনরসিকরা। ভারতীয়রা তো বটেই, সিংহভাগ বিদেশি।
২০২২-এ নিউইয়র্কের সেরা শেফের সম্মান পেয়েছেন চিন্তন। কেরিয়ার শুরু করেছিলেন মুম্বইতে। চিরন্তন ভারতীয় পদের সঙ্গে হারিয়ে যাওয়া ভারতীয় রান্না, এই দুইয়ের প্রতি টান ছিল শুরু থেকেই। নানা প্রদেশের ঐতিহ্যবাহী পদ নিয়ে নিয়মিত চর্চা করতেন। সেই চর্চাই হয়ে উঠেছে আজ তাঁর সাফল্যের রসাসন।
বন্ধুর সঙ্গে যুগ্মভাবে রেঁস্তোরা ‘রাহি’ শুরু করার আগে আট বছর আমেরিকার বিভিন্ন নামকরা ডাইনিং রেঁস্তোরাতে হাতেকলমে কাজ করেছেন। দিশি খাবারের আসল স্বাদের জন্য ২০১৭তে শুরু হওয়া এই রেঁস্তোরা যথেষ্ট জনপ্রিয়। আরও দুই রেঁস্তোরা শুরু করেন। সব জায়গার বৈশিষ্ট্য ‘টেস্ট অফ ইন্ডিয়া’।
ভারতীয় বিরিয়ানি থেকে শুরু করে রাস্তার চাট-রোল সব পাওয়া যায় এই তিন রেঁস্তোরায়। মুম্বইতে থাকার সময় নিজের পছন্দে যে সমস্ত রান্না শিখেছিলেন সেসব পদও চিন্তন রেখেছেন নিজের রেঁস্তোরার মেনুর লিস্টে। তেমনই দুই পদ বেগুনভাজা আর ভাজা পমফ্রেট। আরও আছে লিস্টে, গুড়দা কাপোরা, চানা বাটোরা, মাছের ঝোল। চিন্তনের বন্ধু বৃত্ত বাঙালি। তাই অনেক বাঙালি পদও মেলে।
নিজের জীবন আর রেঁস্তোরা দুইয়ের কোথাও ভান পছন্দ করেন না চিন্তন। রান্নার ক্ষেত্রে তাঁর দর্শন রান্না হতে হবে সহজ। আর স্বাদে থাকবে নস্ট্যালজিয়া। এই দুই মিশলে সেই পদের স্বাদ মন-রসনা দুই কাড়বে। আমেরিকায় বসেও যাতে ভারতের মাটিকে স্পর্শ করা যায় এ আসলে তারই চেষ্টা।
জীবনের বেশ অনেকটা সময় কাটিয়ে ফেলেছেন আমেরিকার মাটিতে। পেশার খাতিরে ঘুরেছেন বহু দেশ। কিন্তু নিজের মধ্যে তার খুব ছাপ ফেলতে দেননি। তাই চলিত হিন্দির প্রবাদ আজও মিশে যায় কথার মধ্যে।
রাহি, ধামাকা, আড্ডা-তিন রেঁস্তোরা চিন্তন আর তাঁর বন্ধুর স্বপ্নের ফসল। ২০২১ সালে আমেরিকার সেরা ১০ রেঁস্তোরার তালিকায় জায়গা করে নিয়েছিল তাঁদের দ্বিতীয় রেঁস্তোরা। চিন্তন নিজের পরিচয় দেন ‘Unapologetic Indian.’ রেঁস্তোরায় কর্মীরাও ‘Unapologetic Indian’ লেখা টি-শার্ট পরেন। তিনি বলেন তাঁদের রেঁস্তোরায় যে দেশের মানুষই খেতে আসুক না কেন তাঁর পছন্দ অনুযায়ী খাবারের স্বাদ বদল করা হয় না। যে পদের যা স্বাদ তাই রাখা হয়। অনেকের কাছেই এই ভাবনা খানিকটা ‘কড়া’ বলে মনে হলেও তা বদলাতে নারাজ এই ভারতীয় রাঁধিয়ে। কেউ কেউ রান্নায় মশলার মাত্রা নিয়ে বললেও, তিনি তাই সর্গবে জানান ভারতীয় রান্নার গৌরব মশলার ব্যবহার। এই খাবার খেয়ে আমরা বড় হয়ে উঠেছি, এই খাবারই খেতে ভালোবাসি আজীবন তাই কুণ্ঠা কীসের!
চিন্তন তাঁর রেঁস্তোরায় ক্রিম, মাখন এসবের ব্যবহার হতে দেননি কোনদিন। এ প্রসঙ্গে বলেন আমাদের ভারতীয় হেঁশেল খুব সাধারণভাবে দিন কাটাতে অভ্যস্ত। মা-দিদিমারা ক্রিম, মাখন এসব ব্যবহার করতেন না। তাঁরা রান্নায় স্বাদ বাড়াতে ঘি ব্যবহার করতেন। আমরাও তাই করি।
এই মুহূর্তে আমেরিকার সেরা এই শেফ সমস্ত সাফল্যের কৃতিত্ব দিয়েছেন তাঁর বন্ধুকে। যিনি আবার ব্যবসা-সঙ্গীও বটে। চিন্তন বলেছেন, আমার সমস্ত পাগলামি, সমস্ত ভুল আর বোকামিকে যেত প্রশ্রয় না পেত তাহলে আজকের এই সাফল্য থেকে যেত অধরাই...