চিন্ময় চট্টোপাধ্যায়। হঠাৎ করে বললে নামটা মনে পড়বে না। কিন্তু যারা কলকাতা ময়দানে ফুটবলের পুরনো দর্শক, তাঁরা জানেন কে ছিলেন চিন্ময় চট্টোপাধ্যায়। তাই তো তাঁর আকষ্মিক প্রয়াণে কলকাতা ফুটবল ময়দানে এত হাহাকার।
ময়দানের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাইট ব্যাক ছিলেন চিন্ময় চট্টোপাধ্যায়। খড়দহ রহড়ার বাসিন্দা ছিলেন তিনি। ইস্টবেঙ্গল জার্সিতে রাইট ডিফেন্স দূরন্ত সামলাতেন।
খেলা শুরু ৬০ এর দশকে। প্রথমে বাটা, তারপর জর্জ টেলিগ্রাফ হয়ে ৭৫ সালে মোহনবাগান। ১৯৭৬ সালে আসেন লাল হলুদ ক্যাম্পে। টানা চার বছর ইস্টবেঙ্গলের হয়ে খেলে ৮০ সালে দল বদলে একদম করে মহামেডান। লিগ চ্যাম্পিয়ন করেন ক্লাবকে। তারপর আবারও ফেরেন ইস্টবেঙ্গলে।
৮৬-তে ইস্টবেঙ্গলে পদার্পণ করেন সহকারী কোচ হিসেবে। ফুটবল জীবনের কালো দাগ বলতে ব্যাক পাস থেকে সেম সাইড গোল। ১৯৭৯-তে বড় ম্যাচে বিদেশ বসুকে আটকাতে গিয়ে গোলকিপার ভাস্করকে ব্যাক পাস করতে যান চিন্ময় চট্টোপাধ্যায়। ঠিক মত ব্যাক পাস হয়নি, বল ধরে ফেলেন মোহনবাগানের রাইট আউট মানস ভট্টাচার্য্য। গোলকিপার একা। বিশ্রিভাবে গোল খেয়ে যায় ইস্টবেঙ্গল।
জাতীয় দলে রাইট সাইড ব্যাক ও স্টপার হিসাবে খেলেছেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁকে ২০১৫ সালে ‘বাংলার গৌরব’ সম্মানে ভূষিত করে। খেলা ছাড়ার পর পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্যাম থাপার সহকারী কোচ হিসেবে ইস্টবেঙ্গলে কোচিং করান চিন্ময়। শ্যামল ঘোষের সঙ্গে জুটি বেঁধেও কোচিং করান তিনি। ৫ বছর ইস্টবেঙ্গলের সহকারী কোচও ছিলেন। মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য, সুধীর কর্মকারদের সঙ্গে রক্ষণে খেলতেন চিন্ময় চট্টোপাধ্যায়। ডিফেন্সে খেললেও ওভারল্যাপে উঠে এসে গোল করায় দক্ষ ছিলেন তিনি। বাংলাকে সন্তোষ চ্যাম্পিয়ন করানোও তাঁর কেরিয়ারের অন্যতম কৃতিত্ব।
তাঁর মৃত্যুতে শোকজ্ঞাপন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শোকবার্তায় তিনি লেখেন, ”বিশিষ্ট ফুটবলার চিন্ময় চ্যাটার্জির প্রয়াণে আমি গভীর শোকপ্রকাশ করছি। তিনি আজ রহড়ার বাড়িতে প্রয়াত হন। বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর। চিন্ময়বাবু দীর্ঘদিন ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান, মহামেডান ক্লাব ছাড়াও তাঁর প্রয়াণে ক্রীড়া জগতের অপূরণীয় ক্ষতি হল। আমি চিন্ময় চ্যাটার্জির আত্মীয়-পরিজন ও অনুরাগীদের আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি।”