আগামী দিনে যাতে রাজ্যে বেকারদের চাকরির সংস্থান করা যায়, সেই উদ্দেশ্যে রাজ্য সরকার ছোট শিল্পেও জোর দেবেন বলে জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার দিঘায় বেঙ্গল বিজনেস কনক্লেভ-এর সমাপ্তি অধিবেশনে এই ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, বীরভূমের দেউচা পাচামি কয়লাখনিতে খনন প্রক্রিয়া চালু করার অনুমোদন পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, ওই খনিতে মোট ২০০ কোটি টন কয়লা সঞ্চয় করা আছে। সরকারের কাছে যে জমি রয়েছে, তার নিচে ৪ কোটি টনের মত কয়লা রয়েছে। আগামী ২৪ মাসের মধ্যে কয়লা উত্তোলন করার লক্ষ্য নিয়েছে রাজ্য সরকার। দেউচা পাচামিতে প্রাথমিকভাবে মোট এক লক্ষের মত কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলে জানান তিনি।
মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা দেউচা পাচামি পরিদর্শনে যাবেন খুব শিগগিরই। কয়লা উৎপাদন শুরু করার আগে বাধ্যতামূলক পরিবেশ এবং বন মন্ত্রকের ছাড়পত্র, খনন পরিকল্পনা ইত্যাদির অনুমোদন পাওয়ার জন্য কাগজপত্র তৈরী করার প্রক্রিয়া এক সপ্তাহের মধ্যে শুরু করবে রাজ্য প্রশাসন। এটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম কয়লা ব্লক যেখানে ভূগর্ভস্থ এক কিলোমিটারেরও নিচে কয়লা রয়েছে। তার ওপর রয়েছে কালো পাথরের যথেষ্ট পুরু স্তর। সেই স্তর সরিয়ে নিয়ে খনি থেকে কয়লা উৎপাদন যথেষ্ট চ্যালেঞ্জের। তবে আপাতত যেখানে কয়লা উৎপাদন করার পরিকল্পনা করেছে, সেখানে পাথরের স্তর নেই এবং জমি থেকে ৩০০ মিটার নিচে কয়লা রয়েছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যসচিব। মোট ১১,২২২ একরের মধ্যে ৯,০০০ একর জমি সরকারকে অধিগ্রহণ করতে হবে। দেউচা পাচামি ব্লকটির এলাকা ১২.২৮ বর্গ কিলোমিটার। এখান থেকে কয়লা উৎপাদন শুরু হলে আগামী ১০০ বছরে বাংলায় বিদ্যুতের কোনও সমস্যা হবেনা।
এছাড়াও গ্রামীণ শিল্পকে উৎসাহিত করতে রাজ্য সরকার তন্তুজের মাধ্যমে স্থানীয় তাঁতিদের কাছ থেকে ত্রাণের জন্য বিলি করার শাড়ি, বিছানার চাদর ইত্যাদি কিনবে। মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, আগামী তিন বছরের জন্য অগ্রিম বরাত দেওয়া হবে। এতে ২০,০০০ জন তাঁতি উপকৃত হবেন এবং তিন বছরে প্রায় ২৫ লাখ নতুন কর্মসংস্থান তৈরী হবে। মুখ্যমন্ত্রী দক্ষিণ ২৪ পরগনার মহেশতলার নুঙ্গিতে একটি পোশাক তৈরির হাবের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। অর্থ ও শিল্পবাণিজ্য মন্ত্রী অমিত মিত্র জানান, সেখানে মোট ১৫০টি কারখানা গড়ে উঠবে এবং প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ মিলিয়ে ১৬,০০০ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
এদিকে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ দেশের সমস্ত আধা সামরিক বাহিনীর মহা নির্দেশকদের উর্দি তৈরী করতে খাদির ব্যবহার নিশ্চিত করতে বলেছেন। এই বাহিনীদের ক্যান্টিনে গ্রামোদ্যোগ শিল্পের থেকে উৎপাদিত আচার, পাঁপড়, মধু, সাবান, শ্যাম্পু, ফিনাইল, চা, সর্ষের তেল সহ অন্যান্য সামগ্রী ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন। খাদি ও গ্রামোদ্যোগ শিল্প কমিশনের চেয়ারম্যান বিনয় কুমার সাক্সেনা এই নির্দেশে উৎসাহিত হয়ে জানান, এই সিদ্ধান্তের ফলে খাদি-র আয় দ্বিগুন-ই হবেনা, সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে কারিগরদের আরও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরী হবে।