আধুনিক বিশ্বে ‘প্লাস্টিক’ যেন এক অপরিহার্য উপাদান। দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত প্রায় অধিকাংশ বস্তুই প্লাস্টিকের তৈরী। কিন্তু এর নেতিবাচক প্রভাব ক্রমশ ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে মানব সমাজকে । পরিবেশের জন্য প্লাস্টিকের বর্জ্যপদার্থ অত্যন্ত ক্ষতিকর, তা নতুন করে বলার প্রয়োজন পড়ছে বার বার। এবার ‘প্লাস্টিক’ দূষনের হাত থেকে মুক্তি পেতে এক অভিনব পরিকল্পনা গ্রহন করেছে ছত্তিশগড় মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন।
সমুদ্রে প্লাস্টিক বর্জ্য জমে সামুদ্রিক প্রানীদের মৃত্যুর হার যেমন বাড়িয়ে দিচ্ছে, তেমনই ‘গ্লোবাল ওয়ার্মিং’ বা বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্যেও প্লাস্টিক কে দায়ী করা হয়। কারন এটি একটি ‘নন বায়ো ডিগ্রেডেবল’ পদার্থ, যা মাটিতে মিশে যেতে পারে না। প্রতিদিন আমাদের দেশে এক টনেরও বেশি প্লাস্টিক বর্জ্য জমা হয়। এই বিপুল পরিমান আবর্জনাকে পরিশোধন করা অত্যন্ত কঠিন। আমরা প্রায় দেখি কিছু মানুষ জীবনধারনের জন্য এই অব্যাবহারযোগ্য প্লাস্টিক সংগ্রহ করে মিউনিসিপ্যালিটিতে জমা দেয়, যার বিনিময়ে তাঁদেরকে সামান্য কিছু অর্থও দেওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু তারপরেও দু’বেলা পেট ভরে খাওয়ার জোগাড় করতে করতে পারে না তাঁরা।
এই গৃহহীন-দরিদ্রসীমার নীচে অবস্থানকারী মানুষেরা যাতে স্বাস্থ্যকর খাওয়ার খেতে পায় এই উদ্দেশ্যে দেশের প্রথম 'গারবেজ ক্যাফে'র উদ্বোধন করা হয়েছে ছত্তিশগড়ে। এখানে মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন থেকে খাদ্য সরবরাহ করা হয় দরিদ্র এবং গৃহহীন মানুষদের জন্য, যাঁরা ঘুরে ঘুরে আবর্জনা সংগ্রহ করে জীবন নির্বাহ করেন। এক কেজি প্লাস্টিক আর্বজনার বিনিময়ে একজন মানুষ এখানে পেট ভরে একবেলা খাওয়ার পাবে, আর যাঁরা ৫০০ গ্রাম পরিমানের বর্জ্য জোগাড় করে নিয়ে আসবে তাঁদের প্রাতরাশের উপযুক্ত খাওয়ার দেওয়া হয়।
অম্বিকাপুর দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে পরিচ্ছন্ন শহরের তালিকায়, ইন্দোর এই তালিকার প্রথম স্থানাধিকারী শহর। অম্বিকাপুরে প্লাস্টিকের আর্বজনাকে রাস্তা নির্মানের কাজে ব্যবহার করার পরিকল্পনা গ্রহন করা হয়েছে। এই ক্যাফেটি শহরের প্রধান বাসস্টান্ডের কাছে স্থাপিত। প্রকল্পটি সার্থক করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছেন সেখানকার বর্তমান মেয়র অজয় টিরকে। কর্পোরেশন এর পক্ষ থেকে এই ক্যাফের জন্য ধার্য কথা হয়েছে পাঁচ লক্ষ টাকা। যাঁরা আবর্জনা সংগ্রহ করে শহরকে পরিচ্ছন্ন রাখেন তাঁদের থাকার জন্য কোয়ার্টার-এরও ব্যবস্থা করছে কর্পোরেশন।
অম্বিকাপুরে ইতিমধ্যেই একটা রাস্তা তৈরী করা হয়েছে প্লাস্টিকের টুকরো আর আসফ্যাল্ট এর মিশ্রন ব্যবহার করে। এই রাস্তাটি তৈরী করত প্রায় আট লক্ষ প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহার করা হয়। এবং অ্যাসফ্যাল্ট মেশানোর ফলে জল নিকাশী ব্যবস্থার কোনও ক্ষতি হয় নি। এই প্রকল্পটি পরিবেশ সচেতনতার অন্তর্ভূক্ত।
মেয়র-এর কথায়, কর্পোরেশনের তরফ থেকে প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যাবহার করায় নিষেধাজ্ঞা জারী করা হয়েছে শহরে। এই ক্যাফের মাধ্যমে ইতিমধ্যেই অন্যান্য বছরের তুলনায় অম্বিকাপুরে পরিচ্ছন্নতার হার আরও বেড়েছে, পরিসংখ্যান এমনটাই বলছে। আমাদের প্রত্যেকের উচিৎ এই মূহুর্ত থেকে পরিবেশ এর স্বাস্থ্যরক্ষার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে অনুভব করা। প্রত্যেকের মিলিত উদ্যোগে এক সুন্দর বাসযোগ্য পরিবেশ আমরা চাইলেই তৈরী করতে পারি, আগামীর জন্য।