পান্তাভাত, কচুশাক, ডালের বড়ায় সন্তুষ্ট নীল দুর্গা

চট্টোপাধ্যায় বাড়িতে দুর্গা কিছুর আর কিছুদিন মাত্র বাকি। প্রতিমার গায়ে রং চাপতে শুরু করেছে। মনের ভুলে পটুয়া অতসীবর্ণা মায়ের গায়ে চাপিয়ে দিলেন অপরাজিতা ফুলের নীল রং। এবার কী হবে! মাথায় হাত পটুয়ার। সে রাতেই বাড়ির কর্তাকে স্বপ্ন দিলেন দেবী। তাঁর আদেশ-নীল মূর্তিতেই পুজো করতে হবে।

সেই থেকেই কৃষ্ণনগর নাজিরাপাড়ার চট্টোপাধ্যায় বাড়িতে দেবী দুর্গার গায়ের রং নীল তিনি অপরাজিতা রূপে পূজিতা।  

এই পরিবারের আদি বাস পূর্ব বাংলা। রথের দিনে কাঠামো পুজো করে শুরু হয় প্রতিমা বর্তমানে শরিকি ভাগে দু’টি আলাদা পুজো হলেও নিয়ম একই। সূচনা বাংলাদেশের এ পুজোর বরিশাল জেলার বামরাইল গ্রাম। ১৯৪৯ সাল থেকে কৃষ্ণনগরে পুজো শুরু হয়।

 দেশভাগের সময় চট্টোপাধ্যায় পরিবার এপারে এসে বসতি স্থাপন করেন কৃষ্ণনগরে। রথের দিন কাঠামো পুজোর নিয়ম থাকলেও শনি-মঙ্গলবার পড়ে গেলে উল্টোরথের দিন কাঠামো পুজো হয়।

একচালার প্রতিমা। নীলমূর্তির গায়ে লাল শাড়ি, জরির সাজ। কার্তিক ডান দিকে এবং গণপতি দেবীর বাম দিকে। পুজো হয় তন্ত্রমতে। অষ্টমীতে কুমারীপুজো হয়। এক সময়, বামরাইলে নরবলি হত। আজও বলির প্রতীক স্বরূপ চালের পিটুলি দিয়ে মানুষ গড়ে বলি হয়। নবমীতে কুমড়ো, শশা বলি হয়। অন্নভোগের সঙ্গে থাকে মাছ। নবমীতে দেওয়া হয় সরলপিঠে, কলার বড়া ইত্যাদি। দশমীর বিদায়বেলায় মাকে দেওয়া হয় পান্তাভাত, কচু শাক, ডালের বড়া, সঙ্গে গন্ধলেবু।

দক্ষিণ কলকাতার ঘোষরায় পরিবারেরও পূজিতা দেবী নীলদুর্গা। ১৮২৭ সালে পূর্ববঙ্গের বরিশাল জেলার নরোত্তমপুরের বাসিন্দা ছিলেন কালীমোহন ঘোষরায়। তাঁর স্ত্রী সারদা দেবী একদিন এক দেবীর স্বপ্ন দেখেন। দেবী দুর্গা আর দেবী কালিকা যেন একসঙ্গে মিলে গিয়েছেন তার স্বপ্নে। তখন আর মাত্র সাত দিন বাকি পুজোর, রাতারাতি পুজোর আয়োজন করাহয়। দুই দেবীকে মিলিয়ে তৈরি হয় এক দেবীপ্রতিমা। যাঁর অবয়ব দুর্গার কিন্তু গাত্রবর্ণ শ্যামাকালীর। এখানেও কার্তিক-গণেশের অবস্থান বিপরীত। অর্ধগোলাকৃতি চালচিত্রে আঁকা থাকে রামায়ণ। দেবীপুরাণ অনুযায়ী শাক্তমতে পুজো হয়। ভোগে দেওয়া হয় কাঁচা মাছ, কাঁচা আনাজ এবং নানা ধরনের মিষ্টান্ন।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...