আজই মহাকাশে পাড়ি দিল চন্দ্রায়ন-২। শ্রীহরিকোটা থেকে জিওসিঙ্ক্রোনাইসড স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিক্যালের মার্ক থ্রি-র মাধ্যমে মহাকাশে পাড়ি দিল চন্দ্রায়ন-২।
জুলাই ১৫তে অভিযান শুরু করার কথা থাকলেও যান্ত্রীক ত্রুটির কারণে তা পিছিয়ে যায়। তারপর বৈজ্ঞানিকদের নিরলশ প্রচেষ্টায় সোমবারই মহাকশে পাড়ি দিল চন্দ্রায়ন-২। চন্দ্রযান তিনটি ভাগে বিভক্ত। প্রথমটি চন্দ্রযান, তার মধ্যে থাকছে বিক্রম। ভারতীয় মহাকাশ গবেষনার অন্যতম পথিকৃৎ ডঃ বিক্রম সারাভাইয়ের নামাঙ্কিত এই অংশটিই চন্দ্র পৃষ্ঠে অবতরণ করবে। আর বিক্রমের ভেতরে থাকবে প্রজ্ঞান। এই প্রজ্ঞানই চাঁদের দক্ষিণ পৃষ্ঠ থেকে খবরাখবর পৌছে দেওয়ার কাজটা করবে। সৌরশক্তিই এই প্রজ্ঞানকে বাঁচিয়ে রাখবে প্রায় ১৪দিন।
ভুপৃষ্ঠ থেকে উৎক্ষেপনের পর প্রায় ১৬ মিনিট সময় লাগবে যানটির পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষন শক্তির বাইরে যেতে। তারপর ২২ দিন পর্যন্ত পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে ধীরে ধীরে চন্দ্র পৃষ্টের দিকে এগোতে থাকবে যানটি। তারপর যান থেকে আলাদা হয়ে যাবে বিক্রম। অবতরণের জন্য লেসার দিয়ে সঠিক জায়গা বেছে নেবে সে। চাঁদকে প্রদক্ষিণ করার পর ৬ সেপ্টেম্বর সেটি চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরন করবে। তবে বিক্রমের অবতরণের বিষয়টি মোটেই সহজ নয়। সফ্ট ল্যন্ডিং অর্থাৎ চাঁদের পৃষ্ঠে অবতরণের সময় যতটা কম ধুলো ওড়ে ততটাই ভালো বিক্রমের জন্য কারণ চাঁদের ধুলো যথেষ্ট কঠিন ও পাথুরে। ধুলোর আঘাতে নষ্ট হতে পারে বিক্রমের দরজা। আর দরজা আঘাতে নষ্ট হলে মোটেই সেটি খুলবে না অর্থাৎ প্রজ্ঞান বেরোতে পারবে না। তাছাড়াও চাঁদের ধুলো দীর্ঘক্ষণ ভাসমান অবস্থায় থাকে। বেশী ধুলো উড়লে পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে বিক্রমের। সফ্ট ল্যন্ডিংয়ের পর বিক্রমের দরজা খুলে বেরিয়ে আসবে প্রজ্ঞান। তবে প্রজ্ঞানের চাঁদের পৃষ্ঠে নামতে ৪ ঘন্টা সময় লাগবে।
১৪ দিন ঘুরে ঘুরে খবর সংগ্রহের কাজ করবে প্রজ্ঞান এবং তা পৃথিবীতে পাঠাতে থাকবে। কিন্তু কেন চাঁদের দক্ষিণ পৃষ্ঠকেই বেছে নিল ইসরোর বিজ্ঞানীরা। কারণ সূর্য্যের আলো চাঁদের এই পৃষ্ঠে খুব কম পৌঁছয়। এই দিকের তাপমাত্রা ২০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকায় বেশিরভাগ গ্যাসই এখানে হয় তরল অবস্থায় অথবা কঠিন অবস্থায় রয়েছে। কোনও কোনটির বয়স হয়তো ৩ বিলিয়ন বছরেরও বেশী। সেই সুত্র ধরে চাঁদের সঠক বয়সের ইঙ্গিত পাওয়া যেতে পারে। তবে সুর্যের আলো কম পৌঁছনোর কারণে প্রজ্ঞানের আয়ু বেশীদিন থাকবে না। সেই কারণে খুব দ্রুতই সমস্ত তথ্য সংগ্রহের কাজ করতে হবে।
বিক্রম চাঁদের দক্ষিন মেরুতে অবতরণ করতে পারলে আমেরিকা, রাশিয়া ও চিনের পর ভারতই হবে চতুর্থ দেশ যারা এই মিশনে সাফল্য লাভ করবে।