২৩ আগস্ট বুধবার সন্ধে ৬টা ৪ মিনিটে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সফল অবতরণ করে ল্যান্ডার বিক্রম। চাঁদের দক্ষিণ মেরুর মাটিতে পা রেখে ইতিহাস রচনা করেছে ভারত।
ল্যান্ডারের ভিতর থেকে রোভার বেরিয়ে এসে তার কাজ শুরু করে দিয়েছে। তারপর থেকেই চাঁদের মাটি থেকে ইসরোকে বিভিন্ন তথ্য পাঠাচ্ছে রোভার প্রজ্ঞান৷ এবার চাঁদের মাটির ওপর এবং নিচের তাপমাত্রা রেকর্ড করে পাঠালো চন্দ্রযান ৩-এর ল্যান্ডার বিক্রম৷
বিক্রমের গায়ে ‘চ্যাস্টে’ নামক একটি তাপমাত্রা পরিমাপক যন্ত্র বসানো হয়েছিল৷ এটি এক ধরনের থার্মোমিটার। রবিবার সেই যন্ত্রের মাধ্যমেই পাওয়া তথ্য প্রকাশ করেছে ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা, ইসরো৷ ইসরোর বিজ্ঞানীরা এই তথ্যের মাধ্যমেই চাঁদের মাটির বিভিন্ন স্তরের তাপমাত্রার পার্থক্য বোঝার চেষ্টা করছেন ৷
ইসরোর বিজ্ঞানীরা একটি গ্রাফ প্রকাশ করে জানিয়েছেন যে চন্দ্রপৃষ্ঠের বিভিন্ন স্তরে তাপমাত্রার পার্থক্য কীভাবে ধরা পড়েছে৷ ইসরোর গ্রাফ দেখে বোঝা যাচ্ছে যে চন্দ্রপৃষ্ঠের ৮০ মিলিমিটার গভীরে তাপমাত্রা মাইনাস ১০ ডিগ্রি মতো ছিল। যত উপরের দিকে উঠেছে, তত তাপমাত্রা বেড়েছে। সেভাবেই একটা সময় তাপমাত্রা ৫০-৬০ ডিগ্রির কাছাকাছি চলে গিয়েছে। অর্থাৎ প্রাথমিকভাবে চন্দ্রপৃষ্ঠের নীচের দিকে তাপমাত্রার পরিবর্তনের হার কম ছিল। পরবর্তীতে যত উপরের দিকে উঠেছে, তত দ্রুত তাপমাত্রা পরিবর্তন হয়েছে।
ল্যান্ডার বিক্রমের গায়ে লাগানো এই তাপমাত্রা পরিমাপক যন্ত্রটি মাটির ১০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত গভীরে ঢুকতে পারে৷ এই যন্ত্রের মধ্যে দশটি আলাদা আলাদা সেন্সর রয়েছে যা দিয়ে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়৷
গত ২৩ অগাস্ট চন্দ্রযানের চাঁদের মাটিতে অবতরণের পর এই প্রথমবার চাঁদের দক্ষিণ মেরুর তাপমাত্রার সংক্রান্ত এমন বিস্তারিত তথ্য প্রথম ইসরোর হাতে এল৷ ইসরোর বিজ্ঞানীরা এই তথ্য নিয়ে আরও বিশ্লেষণ করে দেখছেন ৷
ল্যান্ডার বিক্রমের শরীরে পাঁচটি আলাদা পেলোড রয়েছে৷ সেগুলির প্রত্যেকটি অংশই নিজেদের কাজ শুরু করে দিয়েছে৷ রোভার প্রজ্ঞান এবং এই পেলোডগুলির মাধ্যমেই চাঁদের বহু অজানা তথ্য এবং ছবি ইসরোর বিজ্ঞানীদের হাতে চলে আসবে৷
ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ স্পেস ফিজ়িক্সের (আইআইএসপি) অধিকর্তা এবং মহাকাশবিজ্ঞানী সন্দীপ চক্রবর্তী বলেন, “চাঁদের যে অঞ্চলে 'বিক্রম' অবতরণ করেছে, সেই 'শিবশক্তি' পয়েন্টকে ল্যান্ডিংয়ের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল প্রধানত জলের উপস্থিতি অনুসন্ধানের জন্য। ভূপৃষ্ঠের মাত্র আট সেন্টিমিটার নীচে মাইনাস ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা হওয়ার মানে, চাঁদের পৃষ্ঠের অল্প নীচে তরল অবস্থায় জল পাওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। বিশুদ্ধ জল হলে সেটা ওই তাপমাত্রায় জমে যেত।”