চন্দ্রযান-৩-এর সাফল্য নিয়ে উচ্ছ্বসিত ভারতবাসী। বুধ সন্ধ্যের আনন্দ দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে বঙ্গে ঘরের ছেলেমেয়েদের খবরে। ইসরোর চাঁদ অভিযানে যুক্ত ছিলেন তাঁরাও। সংখ্যায় নেহাত কম নয়। জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চায় চিরকাল এগিয়ে থেকেছে বাঙালি। চন্দ্রযান-৩ সেই ছবিকে আরও একবার সামনে এনে দিল।
বীরভূমের বিজয় দাই, বাঁকুড়ার কৃশানু নন্দী এই দু’জনেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম-টেক করেছেন। প্রথম জন চন্দ্রযান-৩-এর ‘অপারেশন’ দলের সদস্য। দ্বিতীয় জন চাঁদের মাটি ছোঁয়ার পরে ‘রোভার’ গাড়ির গতিবিধি যোগের বিষয়টি দেখার টিমে ছিলেন।
বীরভূমেরই সৌম্যজিৎ চট্টোপাধ্যায় ছিলেন চন্দ্রযান-৩-এর অপারেশন ডিরেক্টর(মিশন সফ্টওয়্যার)। আগে মঙ্গলযান ও চন্দ্রযান ২ উৎক্ষেপণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিলেন
মুর্শিদাবাদের তুষারকান্তি দাস ইসরোর চন্দ্রযান-৩ প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কৃষ্ণনাথ কলেজ ঠেকে গণিতে স্নাতক। আইআইটি খড়গপুর ও আইএসএম ধানবাদে উচ্চশিক্ষা তাঁর।
উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরের অনুজ নন্দী চন্দ্রযান-৩ এর ল্যান্ডারকে বয়ে নিয়ে যাচ্ছে প্রঅপালেশন মডিউল পে লোড তার গায়ে ‘স্পেকট্রো-পোলামেট্রি অব হ্যাবিটেবল প্ল্যানেট আর্থ’ সংক্ষেপে শেপ নামক যন্ত্রটির নির্মাণের দায়িত্বে ছিলেন।
পূর্ব মেদিনীপুরের উত্তর কাটালে পীযূষকান্তি পট্টনায়েক কল্যাণী সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিয়ারিংয়ে বি.টেক, খড়্গপুর আইআইটি থেকে এম-টেক। ইসরোর মুন মিশনে তিনি চন্দ্রযান-৩ এর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের রাখার দায়িত্বে ছিলেন।
জলপাইগুরির কৌশিক নাগ চন্দ্রযান-৩-এর সফটওয়্যার অপারেশনে ছুলেন। এছাড়াও রামকৃষ্ণ মিশনের বেলুড় প্রাক্তন ছাত্র অমিত মাজি, নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের মানস সরকার, উত্তরপাড়ার জয়ন্ত লাহা, রাজাবাজার সায়েন্স কলেজ থেকে উত্তীর্ণ মৌমিতা দত্ত, সাউথ পয়েন্ট প্রাক্তন ছাত্র অভ্রজিত রায়, ডন বস্কো স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র সৌরভ বসু, হুগলির উত্তরপাড়ার সুমিতেশ সরকার এই মিশনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
দেবজ্যোতি ধর, কৌশিক নাগ, তমলুকের আর্য রানা, বহরমপুরের টসকিল ওয়ারা, বিশ্বভারতীর মহম্মদ মোশারফ হোসেন, কলকাতা থেকে সৌম্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়, যাদবপুরের রাজীব সাহা। চন্দ্রযান প্রজেক্টের ডেপুটি ডিরেক্টর তুষার কান্তি দাস, রয়েছেন চয়ন দত্ত, IIST থেকে সৌরভ মাজি, নদিয়া থেকে পীযুষ কান্তি প্রামাণিক এবং বেসু থেকে রিন্টু নাথ।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ডঃ সায়ন চট্টোপাধ্যায় ও ডঃ অমিতাভ গুপ্ত দুজনেই ইসরোর একটি প্রজেক্টে সফট ল্যান্ডিং নিয়ে কাজ করেছেন। আগের মিশন ব্যর্থ হওয়ার পর কীভাবে ফের সহজেই চাঁদের মাটিতে পা রাখতে পারে চন্দ্রযান-৩, সেই নকশা এঁকে দিয়েছেন তাঁরাই। ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশনের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর সায়ন চট্টোপাধ্যায় গোটা প্রকল্পের কো-ইনভেস্টিগেটর হিসাবে কাজ করছেন। তিনি জানাচ্ছেন, কীভাবে চন্দ্রপৃষ্ঠে পাখির পালকের মতো অবতরণ করতে পারে চন্দ্রযান সেই গবেষণা তাঁরা অনেকদিন থেকে চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁদের গবষেণার উপর ভিত্তি করেই একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিচ্ছে ইসরো।
ডঃ অমিতাভ গুপ্ত আবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাওয়ার ইঞ্জিনিয়রিং বিভাগের অধ্যাপক হিসাবে কাজ করছেন। ল্যান্ডার বিক্রম কীভাবে চাঁদের মহাকর্ষীয় টান সামলে চন্দ্রপৃষ্ঠে সঠিকভাবে অবতরণ করতে পারে সে নিয়ে তাঁর গবেষণা সাহায্য করেছে ইসরোর সামগ্রিক মিশনকে।