জিওসিঙ্ক্রোনাস স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেইকল(GSLV) মার্ক থ্রি- খুব শক্ত নাম হয়তো, কিন্তু এর একটা খুব সহজ আর মজার নাম রয়েছে- "বাহুবলী"। এই বাহুবলী হল ভারতের সবচেয়ে শক্তিশালী রকেট যা আরো একটি নাম পরিচিত ইসরোর বিজ্ঞানীমহলে, আর সেটি হলো 'ফ্যাট বয়'। আর ৬৪০ টনের এই রকেটটির রয়েছে ১৩টি সফল মহাকাশ অভিযানের রেকর্ড। এই মুহূর্তে ভারতের বিজ্ঞানীদের কাছে খুব ভরসার জায়গা হল এই বাহুবলী। আগামী ১৫ই জুলাই শ্রীহরিকোটায় এই রকেটে করেই চাঁদে পাড়ি দেবে চন্দ্রযান-২ স্যাটেলাইট। এরকমই জল্পনা চলছে ইসরোর বিজ্ঞানীদের। সেখানকার এক আধিকারিক এ-ও জানান যে, সোমবার রাত ২.৫১ নাগাদ চন্দ্রযান-২ নিয়ে চাঁদের উদ্দেশ্যে পাড়ি দেবে এই বাহুবলী। ১৬মিনিট পরে তা পৌঁছে যাবে মহাকাশের নির্দিষ্ট কক্ষপথে এবং সেপ্টেম্বরে পৌঁছে যাবে চাঁদের মাটিতে। শ্রীহরিকোটার 'সতীশ ধাওয়ান স্পেস সেন্টারে' ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে প্রস্তুতির তোড়জোড়।
সিনেমার চরিত্র বাহুবলী যেমন শিবলিঙ্গকে নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে ঝর্ণার তলায় রেখে তার জলাভিষেক করেছিল, তেমনি ভারতের সবচেয়ে বৃহত্তম ও শক্তিশালী রকেট হল এই 'জি.এস.এল.ভি মার্ক থ্রি', যা এতদিনে বিভিন্ন স্যাটেলাইটকে নিজে নিয়ে গিয়ে পৌঁছে দিয়েছে নির্দিষ্ট কক্ষপথে। তাই এই বিশেষ নামটি দেওয়া হয়েছে এই মহাকাশযানটিকে। লঞ্চ ভেইকলটিতে থাকছে একটি অর্বিটার যার কাজ হল চন্দ্রপৃষ্ঠ ও চাঁদের খনিজের ছবি তোলা ও ম্যাপিং করা, এটি থাকবে চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে ১০০ কিমি দূরে, কক্ষপথে চলাচল করবে এটি। এছাড়া থাকবে 'বিক্রম' নামের একটি ল্যান্ডার যার ওজন ১,৪৭১ কিলোগ্রাম, চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সফ্ট ল্যান্ডিং করবে এটি। চাঁদের ভূমিকম্প ও চাঁদের তাপমাত্রা সংক্রান্ত পর্যবেক্ষণ করবে এই ল্যান্ডার। এর সাথে আরো থাকবে 'প্রজ্ঞান' নামের ২৭ কিলোগ্রাম ওজনের ছয় চাকার রোভার যার সাহায্যে চাঁদের মাটি পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখা হবে।
ইসরোর ওয়েবসাইটে বলে হয়েছে যে, চন্দ্রপৃষ্ঠের কম্পোজিশন সম্পর্কে ধারণা পেতে তার ম্যাপিং করা প্রয়োজন, আর এই মাধ্যমে চাঁদের উৎপত্তি ও বিবর্তন সম্পর্কে বিস্তৃত গবেষণা করা সম্ভব হবে। চন্দ্রযান-১ চাঁদে জলের পরমাণুর উপস্থিতি প্রথম প্রমাণ করে কিন্তু এই নিয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য আরো গবেষণার প্রয়োজন। এর জন্যেই এই নতুন উদ্যোগ আবার ইসরোর যা চাঁদের উপর-নীচ দুই পৃষ্ঠেই ভালো করে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখবে। মূলত চাঁদের দক্ষিণ প্রান্তে হবে এই পর্যবেক্ষণ। ২০০৮-এ চন্দ্রযান-১ এর সফল অভিযানের পর, আবারও হাজার কোটির এই চন্দ্রযান-২ অভিযান সফল করবে বাহুবলী এই প্রত্যাশায় এখন বিজ্ঞানীরা।