তপ্ত বৈশাখী শীতল হতে অক্ষয় তৃতীয়া তিথিতে প্রভু জগন্নাথের 'গন্ধলেপন যাত্রা'

তপ্ত বৈশাখে গৃহদেবতাকে শীতল করতে দেওয়া হয় জলের ঝারি। সূর্যের প্রখর তেজে বারিধারায় শীতল হন তিনি। বৈশাখী তেজ শীতল হতে বৈশাখ মাসের শুক্লা তৃতীয়া তিথিতে অক্ষয় তৃতীয়ার দিনটিতে অনুষ্ঠিত হয় প্রভু জগন্নাথের চন্দনযাত্রা উৎসব।

বৈশাখের খরতাপে চন্দনলেপনে দারুদেবের অঙ্গ শীতল করা হয়। বলভদ্র, এবং সুভদ্রার দেহেও চন্দন লেপন করা হয়। জগন্নাথের দুই চক্ষু ব্যতীত সর্বাঙ্গে চন্দন লেপন করে ভক্তরা। নব বাসে সুসজ্জিত করা হয় দেব বিগ্রহ। এই উৎসবকে 'গন্ধলেপন যাত্রা' বলা হয়ে থাকে।

সমগ্র উৎসবটি চলে ৪২ দিন ধরে। প্রথম পর্বে অক্ষয় তৃতীয়া তিথিতে জগন্নাথ, বলভদ্র, সুভদ্রা এবং পঞ্চ লিঙ্গ নিয়ে মন্দিরের সিংহ দুয়ার থেকে শোভাযাত্রা হয়। পুষ্করিণী নরেন্দ্র তীর্থ পর্যন্ত। সেখানে নৌকাবিহার চলে। এই পর্বকে বলা হয় 'বাহার চন্দন'।

পরবর্তী ২১ দিন আচার অনুষ্ঠান হয় মন্দিরের ভিতর হয়। এক পর্বকে বলা হয় ‘ভিতর চন্দন’। অক্ষয় তৃতীয়ার দিন শুরু হয়, শেষ হয় বৈশাখী পূর্ণিমার দিন। উৎসবের এক সপ্তাহ আগে থেকেই ভক্তরা চন্দন তৈরিতে মেতে ওঠেন।

ভগবান শ্রীজগন্নাথদেব এই দিনে রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নকে চন্দনযাত্রা মহোৎসবটি পালন করার জন্য সরাসরি নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে ভক্তদের বিশ্বাস।

শ্রীচৈতন্যচরিতামৃতে উল্লেখ পাওয়া যায় এই কাহিনি।  বৃন্দাবনে পরম বৈষ্ণব শ্রীমাধবেন্দ্র পুরীকে স্বপ্নে গোপাল বলেছিলেন , “আমার শরীরের প্রদাহ জুড়োচ্ছে না। মলয় প্রদেশের চন্দন আমার অঙ্গে লেপন কর, তবেই প্রশমিত হবে এ দহন’।

সেই নির্দেশ পেয়ে মাধবেন্দ্র পুরী নীলাচলে জগন্নাথধাম পুরীতে এসে রাজার কাছে তাঁর স্বপ্নের কথা ব্যক্ত করেন। রাজা গোপালের জন্য এক মণ মলয়জ চন্দন, ২০ তুলা কর্পূর এবং এই চন্দন দান করেন। ভার বয়ে নিয়ে আসার জন্য দুইজন সেবকের বন্দোবস্ত করেদিলেন তিনি।

মাধবেন্দ্র পুরীপাদ রাজার কাছে মলয়জ চন্দন ও কর্পূর নিয়ে বৃন্দাবনে ফিরছিলেন। পথে রেমুণাতে শ্রীগোপীনাথ মন্দিরে আসেন। সেই রাত্রে সেই রাতে ফের স্বপ্ন দেন গোপাল। প্রিয় শিষ্য দেখেন  ইষ্টদেবতা গোপাল বলছেন, “হে মাধবেন্দ্র পুরী, আমি চন্দন ও কর্পূর গ্রহণ করেছি। এখন কর্পূর সহ এই চন্দন শ্রীগোপীনাথের অঙ্গে লেপন কর। গোপীনাথ ও আমি অভিন্ন। গোপীনাথের অঙ্গে চন্দন লাগালেই আমার অঙ্গ শীতল হবে।”

সকালে শ্রীমাধবেন্দ্র পুরিপাদ পূজারীর নিকট রাত্রের স্বপ্নের সমস্ত কথা বলিলেন। পূজারী প্রভু শুনে খুব খুশি হলেন এবং কর্পূর আর চন্দন ঘষে শ্রীগোপীনাথের শ্রীঅঙ্গে লেপন করলেন। দীর্ঘ ২১ দিন ধরে এইভাবে প্রত্যহ পূজারী প্রভু গোপীনাথের শ্রীঅঙ্গে লেপন করেন। সেই থেকেই সূচনা হয় এই উৎসবের। ব্রজলীলা অনুসারে বৈশাখী ত্রয়োদশী থেকে বুদ্ধ-পূর্ণিমা পর্যন্ত তিনদিন ব্যাপী মহাসমারোহে অনুষ্ঠিত হয় চন্দনযাত্রা। 

নবদ্বীপের অধিকাংশ ঠাকুরবাড়িতে অনুষ্ঠিত হয় চন্দন যাত্রা উৎসব। চন্দন মাখিয়ে বিগ্রহ নিয়ে যাওয়া হত গঙ্গার ঘাটে। হুগলীর মাহেশ মন্দিরেও অনুষ্ঠিত হয় চন্দনযাত্রা উৎসব। পালিত হয় ২১ দিন ধরে। অভ্যন্তরে। মায়াপুরের ইসকন মন্দিরেও অনুষ্ঠিত হয় চন্দন যাত্রা উৎসব।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...