এখানে দৌড়ে নিয়ে যাওয়ার পর যাদের কালী মায়ের প্রতিমা অক্ষত অবস্থায় থাকবে তাদের প্রতিমাকেই প্রথমে বিসর্জন দেওয়া হবে! এটাই এখানকার প্রথা ও নিয়ম।উদ্যোক্তাদের নিজেদের পূজিত কালী প্রতিমা কাঁধে করে নিয়ে ঘাটের দিকে দৌড় লাগাতে হবে।
মালদার চাঁচলের মালতিপুরে রাজার প্রচলিত সেই রীতি এখনও মানা হয়। এই বছরও আয়োজিত হয় সেই ঐতিহ্যবাহী ‘কালী দৌড় প্রতিযোগিতা’। সোমবার সন্ধায় এক অদ্ভুত পরিবেশ তৈরি হয় এই কালী দৌড় প্রতিযোগিতাকে কেন্দ্র করে।
৩৫০ বছরের পুরনো এই 'কালী দৌড়'-এর রীতি। এর পেছনেও রয়েছে এক অজানা ইতিহাস। আজও মালদার চাঁচলে এইভাবেই মাকে বিসর্জন দেওয়া হয়। প্রতিবছর এই দৌড় দেখার জন্য ভিড় উপচে পড়ে এলাকায়। জানা গিয়েছে যে এলাকার আটটি কালী প্রতিমাকে কাঁধে নিয়ে ছোটেন এলাকাবাসী।
এই ‘কালী দৌড়’-এর পেছনে কি ইতিহাস? জেনে নেওয়া যাক তবে। এই প্রতিযোগিতা প্রায় ৩৫০ বছর আগে চাঁচলের তৎকালীন রাজা শরৎচন্দ্র রায়চৌধুরী চালু করেছিলেন। শোনা যায়, সেই সময় নাকি মালতীপুর এলাকায় একটি মাত্র পুকুর ছিল।
মালতিপুর কালীবাড়ি লাগোয়া পুকুরে বিসর্জন দেওয়া হত একাধিক কালী প্রতিমাকে। তাই সেইসময় সুষ্ঠভাবে প্রতিমা নিরঞ্জন প্রক্রিয়া করার জন্য রাজা শরৎচন্দ্র রায় বাহাদুর শুরু করেছিলেন এক প্রতিযোগিতার। দীপান্বিতা অমাবস্যা অর্থাৎ কালীপুজোর পরের দিন তিনি সন্ধায় মালতিপুর বাজারে একটি কালী দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন। এই প্রতিযোগিতার নিয়ম ছিল- কালী দৌড়ে যার কালী প্রতিমা অক্ষত থাকবে সেই প্রতিমাকেই প্রথম নিরঞ্জন দেওয়া হবে কালী দিঘিতে।
এরপর থেকেই সেই রীতি আজও চলে আসছে একভাবে। তবে, বর্তমানে রাজা নেই, রাজবৈভব নেই। কিন্তু, রাজার প্রচলিত রীতিনীতি আজও অব্যাহত মালতিপুর এলাকায়।
গত সোমবার সন্ধাতেও মালতিপুরে আয়োজিত হয়েছিল এই ঐতিহ্যবাহী কালী দৌড় প্রতিযোগিতা। মোট আটটি কালীর দৌড় হয়েছে গোটা এলাকায়। এদের মধ্যে ছিলেন- বুড়ি কালী, চুনকা কালী, বাজারপাড়া কালী, আম কালী, হ্যান্টা কালী, হাট কালী ও শ্যামা কালী।
পুজো কমিটি ও এলাকাবাসী ঘাটের দিকে একসাথে কালী প্রতিমাকে কাঁধে নিয়ে ছুটতে শুরু করলেন। তারপর মালতিপুর বাজার এলাকা পরিক্রমা করে কালীকে নিয়ে আসা হয় কালী দীঘিতে। এই প্রতিযোগিতা উপভোগ করতে ভিড় জমিয়েছিলেন শুধু এলাকাবাসী নয়, দূরদূরান্ত থেকে আসা মানুষজনও জমায়েত বাঁধিয়েছিলেন সেখানে।