জামাইষষ্ঠীর সকাল। নিমাইগোরার ঘুম ভাঙতেই সাজ সাজ রব পড়ে যায় নবদ্বীপভূমে। আজ যে তিনি মহাপ্রভু নন, আজ তিনি ঘরের মেয়ে বিষ্ণুপ্রিয়ার পতি নিমাইচাঁদ। গত সাড়ে তিনশো বছর ধরে জৈষ্ঠ্য মাসের শুক্লা পক্ষের ষষ্ঠী তিথির দিনটিতে এই তাঁর একমাত্র পরিচয়। কথিত আছে ষষ্ঠীদাস গোস্বামীর আমল থেকেই এই জামাইষষ্ঠী পরম্পরা হয়ে আসছে মহাপ্রভু মন্দিরে। ষষ্ঠীদাস ছিলেন বিষ্ণুপ্রিয়া দেবীর ভাই মাধবাচার্যের অধস্তন তৃতীয় পুরুষ। মাধবাচার্যের উত্তরপুরুষেরাও উৎসবে যোগদান করেন।
নবদ্বীপের ধামেশ্বর মন্দিরে শ্রী চৈতন্যদেবকে জামাই রূপে আপ্যায়ণ করা হয়। এই মন্দিরের সেবায়েতরা বংশ পরম্পরায় নিমাইয়ের স্ত্রী বিষ্ণুপ্রিয়ার ভাইদের উত্তর পুরুষ।
জামাই ষষ্ঠীর দিন সকাল থেকেই শুরু হয়ে যাই জামাই ষষ্ঠীর উদযাপন। রুপোর রেকাবিতে করে মরসুমী ফল, রুপোর বাটিতে ক্ষীর, রুপোর গ্লাসে জল দিয়ে প্রথমে ঘুম ভাঙ্গানো হয় মহাপ্রভুর। তার পরের পর্বে থাকে চিঁড়ে, মুড়কি, দই আম কাঁঠাল ও মিষ্টির আহার।
দুপুরের মধ্যাহ্ন ভোজে তাঁর পছন্দের ২১ পদ দিয়ে সাজানো হয় মহাপ্রভুর ভোগের থালা। থাকে নানা তরকারি, , থোড়, বেগুন পাতুরি, ছানার ডালনা, লাউ, চাল কুমড়ো, পোস্ত দিয়ে রাঁধা সব রকম নিরামিষ পদ। মিষ্টির মধ্যে থাকে তালের বড়া আর রসবড়া।
দিবানিদ্রা সমাপন হলে বিকেলে তাঁর উত্থান ভোগে থাকে ছানা আর মিষ্টি। রাতে শয়নের এর আগে গাওয়া ঘিতে ভাজা লুচির সঙ্গে মালপোয়া আর রাবড়ি দেওয়া হয়। সবার শেষে সুগন্ধি দেওয়া খিলিপান দেওয়া হয়।
জামাই ষষ্ঠীর দিন মহাপ্রভুর ভোগের প্রধান বিশেষত্ব হল আম ক্ষীর। গাছপাকা আমের রস ক্ষীরের সাথে পাক দিয়ে তৈরি করা হয় এই পদ।
সেবায়েত পরিবারের হেঁশেলে জামাই আদরের জন্য তৈরী হয় বিশেষ মিষ্টি। বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে এই রেওয়াজ।
শ্রীচৈতন্যদেবের বিগ্রহকে সাদা সিল্কের ধুতি চিকনের পাঞ্জাবি ও গলায় উত্তরীয় পরিয়ে সাজানো হয়। জামাই ষষ্ঠী উপলক্ষে মহাপ্রভুকে উপহার দেওয়া হয় নববেশ। নতুন পাখা দিয়ে দেবী বিষ্ণুপ্রিয়ার পরিবারের মহিলারা এবং স্থানীয় প্রবীণারা ষাটের বাতাস দেন তাঁকে। কপালে হলুদের টিপ পরিয়ে হাতে হলুদ মাখানো সুতো বেঁধে দেওয়া হয়। তারপর শুরু হয় জামাই বরণের পালা। বহু ভক্তের সমাগম হয়। বিশেষ পাঠ কীর্তনের পালাও চলে নাট মন্দিরে।