আজ শ্রীপঞ্চমী, মাঘ মাসের এই তিথিটিতে বিদ্যার দেবী বাগদেবীর আরাধনায় মেতে ওঠেন সকলে। পুরাণ অনুসারে বিদ্যার দেবী সরস্বতী এদিন অর্থাত্ মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চম দিনে আবির্ভূতা হন। পঞ্জিকায় তিথিটিকে শ্রীপঞ্চমী বলে উল্লেখ করা হয়েছে। শ্রী হলেন দেবী লক্ষ্মী। লক্ষ্মীদেবী জীবন, সংসারকে শ্রীমন্ত করে তোলেন। শ্রীপঞ্চমী হল দেবী লক্ষ্মীর পুজোর তিথি। কালে কালে লক্ষ্মীর বদলে তিথিটিতে শুরু হল দেবী সরস্বতীর পুজো।
সরস্বতী হলেন ব্রহ্মার পত্নী। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ মতে লক্ষ্মী এবং সরস্বতী দুজনেই বিষ্ণুর পত্নী। শ্রীশ্রী চণ্ডীতে তিন দেবীর উল্লেখ রয়েছে। তাঁরা হলেন মহাকালী, মহালক্ষ্মী এবং মহাসরস্বতী।
বঙ্গে সরস্বতী হলেন বাগদেবী। তাঁর অপর নাম বাণী বা ভারতী। তিনি ভাষা থেকে শুরু করে সব বিদ্যা দান করেন। সরস্বতী বিদ্যার দেবী, বিদ্যা-বুদ্ধি লাভে জীবনে শ্রী আনেন তিনিই। তাই তো মাঘের সকালে সরস্বতীর হাতে যবের শিস দিয়ে তাতে লক্ষ্মী রূপে অর্পণ করা হয়। শ্রীপঞ্চমীতে লক্ষ্মী আরাধনার রীতিটি আজও যব অর্পণের মাধ্যমে টিকে রয়েছে। এখনও বহু জায়গায় একই সঙ্গে লক্ষ্মী ও সরস্বতী পুজো করার রীতি দেখা যায়।
আশ্বিনের পূর্ণিমায় একই চালায় লক্ষ্মী আর সরস্বতীর পুজো হয় বিনপুর -২ ব্লকের হাড়দা গ্রামে। গত প্রায় একশো ষাট বছর ধরে সেখানে তা চলে আসছে। এক চালায় লক্ষ্মীর বামে থাকেন সরস্বতী। লক্ষ্মী ও সরস্বতীর দু-পাশে চার জন সখী থাকেন। লক্ষ্মী সরস্বতীর সঙ্গে থাকেন দুই জন সেবাদাসী। তাঁদের উপরে থাকেন লুক-লুকানি। এছাড়া লক্ষ্মী ও সরস্বতীর মাথার উপরে থাকেন নারায়ণ। বিষ্ণুপুরাণ অনুযায়ী, এভাবে নারায়ণের দুই স্ত্রী লক্ষ্মী এবং সরস্বতীর পুজো করা হয় একই সঙ্গে।
শান্তিনিকেতনের তালতোড় গ্রামে লক্ষ্মীর সঙ্গে একই বেদীতে পূজিতা হন সরস্বতী। কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর দিন লক্ষ্মী এবং সরস্বতী; দুই দেবীকে একই সঙ্গে পুজো করে আসছে তালতোড় গ্রামের ঘোষ পরিবার। ৩০০ বছর আগে জমিদার লোটন ঘোষের স্ত্রী স্বর্ণময়ী দেবী মা দুর্গার স্বপ্নাদেশ পান। সেই দুর্গাপুজো আজও চলছে। দুর্গা মণ্ডপেই সাড়ম্বরে লক্ষ্মী এবং সরস্বতীর পুজো অর্চনা করা হয়।
বাঁকুড়ায় একই সঙ্গে লক্ষ্মী ও সরস্বতীর পুজো করা হয়। মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমীতে বাঁকুড়া জেলার রতনপুর গ্রামের দাস ও বিশ্বাস পাড়ায় চলে আট দিনের বাগ দেবীর আরাধনা। দুই পাড়াতেই দেবী সরস্বতী একা আসেন না। দেবী দুর্গা এবং লক্ষ্মী, গনেশ ও কার্তিক থাকেন। এক চালার দুর্গা প্রতিমার আদলে দেবী সরস্বতীর বিগ্রহ গড়া হয়। দেবী সরস্বতী থাকেন মাঝখানে। বৈচিত্রের বাংলায় এভাবেই মিশে গিয়েছেন দুই দেবী।