মাঝেই মাঝেই জ্বর হত বাবাইয়ের। পাড়ার ক্লিনিকে দেখাতে যেতেই রক্ত পরীক্ষার নিদান। রিপোর্ট আসতেই ব্লাড ক্যান্সার। পায়ে ব্যাথায় কাবু টুকুন। চিকিৎসকের কাছে গিয়েও কমে না। রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট আসতেই দেখা গেল ব্লাড ক্যান্সার।
বাবাই টুকুন বদলে দেওয়া নাম। কিন্তু তাদের ঘটনা সত্যি। রোগীর বয়স কারুর পাঁচ, কারুর সাত, কারুর আট, কেউ এগারো। বয়সে বলা যায় দুধের শিশু। সবে চোখ মেলে দেখতে শুরু করেছে তারা পৃথিবী। তবু নিস্তার নেই মারণ রোগের হাত থেকে।
ক্যান্সারের বিভিন্ন ধরনের মধ্যে মূলত শিশুদের মধ্যে ব্লাড ক্যান্সার বেশ কমন। ১-১০ বছরের শিশুদের মধ্যে দিন দিন ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতাও বাড়ছে।
তবে ক্যান্সার হলেও আরোগ্য সম্ভব। ভয় সরিয়ে দরকার সঠিক সময়ে যথাযথ চিকিৎসা। যত তাড়াতাড়ি চিকিৎসা প্রক্রিয়া শুরু হবে তত দ্রুত হবে নিরাময়। প্রয়োজন শুধু ধৈর্য্য আর সাহস আর মনের জোর।
ইন্ডিয়ান ক্যান্সার সোসাইটির তথ্য অনুযায়ী প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৩ লক্ষ শিশু ক্যান্সার আক্রান্ত হচ্ছে। এদেশে প্রতি বছর শিশু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু সঙ্গে বাড়ছে রোগের বিষয়ে সচেতনতাও। চিকিৎসরাও বলছেন ভয় নয় জরুরী সচেতন হয়ে ওঠা। ক্যান্সার থেকে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার নজির বহু। একজনের উদাহরণ সাহস জোগায় অন্যকে। সেই গল্প সামনে আসা দরকার।
কলকাতায় ক্যান্সার চিকিৎসার ভরসা সরোজ গুপ্তা ক্যান্সার সেন্টার অ্যান্ড রিসার্চ ইন্সটিটিউট। চেনা নামে 'ঠাকুর পুকুর ক্যান্সার হাসপাতাল'। রাজ্যের নানা প্রান্ত থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার ক্যান্সার আক্রান্ত চিকিৎসা করাতে আসেন এই প্রতিষ্ঠানে। তাদের মধ্যে বহু শিশুও আছে। এখানকার চিকিৎসকদের ভাষায় তাঁদের কাছে কোন শিশু রোগী হিসেবে এলে তাঁরা মনে করেন রোগী আসলে তিনজন। আক্রান্ত শিশুটি তো বটেই, সঙ্গে বাবা-মাও। শিশুটির সঙ্গে তাঁদের লড়াইও কিছু কম নয়।
হসপিটাল, মারণ রোগ, কেমোথেরাপি এই সমস্ত শব্দগুলো যাতে মাথার মধ্যে ভয়ের বাসা না তৈরি করে তার জন্য শিশুদের আনন্দের নানারকম উপকরণ রাখা হয়েছে এই হাসপাতালে। পার্ক, টয়ট্রেন, টয়হাউস তাদের ভুলিয়ে রাখে যন্ত্রণা। চিকিৎসকদের পরম যত্নে সুস্থ হয়ে উঠছে তারা।
চিকিৎসকরাও লড়াইয়ের জোর পান সুস্থ হয়ে ওঠা মুখের নির্মল হাসি দেখে। সমাজও জোর পায় মারণ ব্যাধিকে যুদ্ধ করে হারিয়ে দেওয়ার…