কয়েক সেকেন্ডেই ক্যান্সার নির্ণয়- বড় সাফল্য যাদবপুর অধ্যাপকের

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকেরা এক অনন্য আবিষ্কার করলেন। শরীরে ক্যান্সার আছে কি না তা জানা যাবে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই। যাদবপুর ফিজিক্স বিভাগের এই গবেষণায় অধ্যাপক-গবেষক জয়দীপ চৌধুরী এবং তাঁর ছাত্র-গবেষক সুমিত কুমার দাসের এই গবেষণায় সাহায্য করেছেন জীবন বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র-গবেষক কুণাল পাল এবং এবং অধ্যাপক পরিমল কর্মকার। এছাড়াও বোস ইনস্টিটিউটের ফিজিক্সের ছাত্র-গবেষক তারাশঙ্কর ভট্টাচার্যও সাহায্য করেছেন এই গবেষণায়। ফিজিক্স বিভাগের এই গবেষণায় এক বিশেষ রকমের চিপ বের করেছেন অধ্যাপক-গবেষকরা।

                      বিশেষজ্ঞদের মতে যাদবপুরের এই গবেষণা ক্যান্সারের মত রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে নতুন দিশা দেখাচ্ছে। বিশ্বজুড়ে প্রতি বছর কয়েকলক্ষ মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। তার মধ্যে পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি অন্যদিকে মহিলাদের ক্ষেত্রে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি। এই প্রস্টেট এবং ব্রেস্ট ক্যান্সারের ওপরেই গবেষণা করছেন জয়দীপ এবং সুমিত।

                     পুনের 'ন্যাশনাল সেন্টার ফর সেল সায়েন্স' থেকে কোষ কিনে এনেছে যাদবপুরের জীবনবিজ্ঞান বিভাগ। ল্যাবরেটরিতে সেই কোষকে নির্ধারিত একটি তাপমাত্রায় রেখে বড় করা হয়েছে। কোষ বড় হয়ে যাওয়ার পর সেগুলি গবেষণার জন্য ফিজিক্স বিভাগকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই বিষয়ে বলতে গিয়ে জয়দীপবাবু জানান, কোষগুলি চিপের ওপর রাখার পর টক্সিক হয়ে গিয়েছে কি না তা জানতে একটি পরীক্ষা করা হয়। কোষগুলি যদি টক্সিক হয়ে যেত, তাহলে তার ওপর গবেষণা করা যেতনা। সব কিছু সঠিক দেখে নেওয়ার পর অবশেষে মূল গবেষণা শুরু হয়। ওই অধ্যাপক আরও জানান, সাধারণ এবং ক্যান্সারযুক্ত কোষ ওই চিপের ওপর রাখা হয়। তারপর 'সারফেস এনহ্যান্সড রামন স্পেকট্রোস্কোপি'র মাধ্যমে দুটি কোষের তফাৎ তুলে ধরা হয়। এইভাবে দেখা যায়, কয়েক সেকেন্ডেই ক্যান্সার নির্ণয় সম্ভব হচ্ছে। চিপগুলি তৈরি করা হয়েছে ল্যাংমুর-ব্লজেট যন্ত্রের সাহায্যে। ইতিমধ্যেই 'সেন্সর্স অ্যান্ড অ্যাকচুয়েটর্স বি' জার্নালে এই গবেষণা সংক্রান্ত একটি পেপার  প্রকাশিত হয়েছে।

                     চিকিৎসকদের মতে এই দুটি রোগ যত তাড়াতাড়ি নির্ণয় করা যাবে, ততই চিকিৎসা করতে সুবিধা হয়। দেরি হয়ে গেলে চিকিৎসায় সাফল্য পাওয়ার ক্ষেত্রেও নিশ্চিত হওয়া যায়না। কাজেই এই রোগের ক্ষেত্রে দ্রুত রোগ নির্ণয় যথেষ্ট প্রয়োজন। যদি আগামীদিনে বিভিন্ন ল্যাবরেটরিতে এই পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়, তাহলে দ্রুত ক্যান্সার রোগ নিরাময় করা সম্ভব হবে। বর্তমানে এক্স রে, এন্ডোস্কোপি, বায়োপসি -র মতো পরীক্ষার মাধ্যমে ক্যান্সার নির্ণয় করা হয়। যা সম্পূর্ণ করতে ৩ থেকে ৫ দিন সময় লাগে, সেখানে নতুন এই পদ্ধতিতে কয়েক মুহূর্তেই রোগ নির্ণয় সম্ভব হচ্ছে। যদি রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর এই পদ্ধতি গ্রহণ করতে চায়, সেক্ষেত্রে জয়দীপবাবুরা সবরকম সাহায্য করতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন।

 

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...