আকার, আয়তন, ব্যাপ্তি এবং সার্বভৌমত্বে অনন্য। ভারতীয় সংবিধান।
এই সংবিধান রচনা করেছিলেন ভীমরাও রামজী আম্বেদকর। বি. আর আম্বেদকর।
১৯৪৭ সালের ২৮ আগস্ট স্বাধীন ভারতের সংবিধান রচনার জন্য একটি স্থায়ী ড্রাফটিং কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন আম্বেদকর সাহেব। ১৯৪৯-এর ২৬ নভেম্বর কমিটি প্রথম খসড়া সংবিধান প্রস্তুত করে গণপরিষদে জমা দেয়। এই খসড়াকে যদি ‘মাস্টারপিস’ বলা হয় এতটুকু বাড়াবাড়ি হবে না। ২ বছর ১১ মাস ১১৪ দিন লেগেছিল খসড়া তৈরি করতে।
শান্তিনিকেতনের শিল্পাচার্য নন্দলাল বসু এবং তাঁর ছাত্রদের একটি দল অলঙ্করণের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি সে সময় কলাভবনের অধ্যক্ষ। মহেঞ্জোদাড়োর যুগ থেকে আজাদ হিন্দ বাহিনীর সংগ্রাম সব কিছু অলঙ্করণে ধরা হয়েছিল সংবিধানের পাতায়। তবে সেই খসড়া সংবিধান অনিন্দ্যসুন্দর হয়ে উঠছিল আরও একজনের নিরলস পরিশ্রমে। তিনি প্রেমবিহারী নারায়ণ রাইজাদা। প্রেমবিহারীর জন্ম ১৯০১ সালের ১৭ ডিসেম্বর। দিল্লীতে জন্ম, সেখানেই বেড়ে ওঠা। মধ্যবিত্ত পরিবার। খুব ছোটবেলায় বাবা-মা দু’জনকেই হারাতে হয়। প্রেমবিহারীকে নিজের কাছে রাখেন তাঁর দাদু রামপ্রসাদজী সাক্সেনা। ফার্সী এবং ইংরেজিতে পন্ডিত ছিলেন। ইংরেজ অফিসারদের ফার্সী ভাষা শেখাতেন।
পৌত্রকে বড় করেছিলেন নিজের আদর্শে। ছোটবেলা থেকেই মেধাবী। পরিবারে ছিল ক্যালিগ্রাফির চর্চা। ছোট থেকেই চোখ টেনে নেওয়া হাতের লেখা। দাদু রামপ্রসাদজী নিজে ক্যালিগ্রাফি শেখাতেন শিশু প্রেমবিহারীকে।
পড়াশোনা দিল্লীর সেন্ট স্টিফেন কলেজে। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্যালিগ্রাফির চর্চা আরও বেড়ে গিয়েছিল। তখন আর শুধু নেহাত শখ নয়। অক্ষরলিপি শিল্প হয়ে উঠেছিল কলম স্পর্শে।
পণ্ডিত জহরলাল নেহেরু নিজে তাঁকে সংবিধান লেখার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সংবিধান মুদ্রিত হওয়ার আগে হাতের লেখার পুরো দায়িত্ব দেওয়া হয় তাঁকে। দায়িত্ব তিনি নিয়েছিলেন, কিন্তু ফিরিয়ে দিয়েছিলেন সাম্মানিক প্রস্তাব।
তবে তিনি একটি শর্ত দিয়েছিলেন। তাঁর আর্জিতে বলেছিলেন, সংবিধানের শুরু থেকে শেষ প্রতিটি পৃষ্ঠায় নিজের এবং পিতামহের নাম লিখতে চান।
তাঁর প্রস্তাব মেনে নিয়েছিল ভারত সরকার। সংবিধান লিপিকরণের কাজ করার জন্য কন্সটিটিউশন ক্লাব অফ ইন্ডিয়া হলে তাঁর জন্য একটি ঘর নির্দিষ্ট করা হয়। সেখানে বসে তিনি পুরো সংবিধানটি লিখেছিলেন। ইংরেজি ভাষায়, ইটালিক লিপিতে।
তিনি ছয় মাসের পরিশ্রমে ৩৯৫ ধারা, ৮ তফশিল ও ১ প্রস্তাবনা সংবলিত সংবিধানের পাণ্ডুলিপিটি লিখেছিলেন। হিন্দি ভাষায় সংবিধানটি লিখেছিলেন বসন্ত কৃষ্ণণ বৈদ্য।
এই কাজে ব্যবহার হয়েছিল ২৫১ পাতা পার্চমেন্ট কাগজ। ৪৩২ পেন হোল্ডার। ইংল্যান্ড ও চেক্সস্লোভিয়া থেকে আনা ৩০৩ নিব।
গোটা সংবিধান তিনি নিজে হাতে লিপিবদ্ধ করেন। দেশসেবা করছেন এই ছিল তাঁর সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। প্রেমবিহারী নারায়ণ রাইজাদার হাতে লেখা এবং অলঙ্করণে সজ্জিত ভারতের সংবিধানের কপিটি দেরাদুনের দ্য সার্ভে অব ইন্ডিয়া'র কার্যালয়ে এবং মূল নথিটি দিল্লির জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।