রাজ্যে বেশ কিছুদিন আগে সর্বস্তরে বিশেষ করে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে বই পড়ার আগ্রহ বাড়ানোর জন্য প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত সমস্ত সরকারি স্কুলে লাইব্রেরি তৈরী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজ্য সরকার। আসলে এখন চারদিকে বই পড়ার আগ্রহ এত কমে যাচ্ছে, তার সঙ্গে পাল্লা দিতেই এই সিদ্ধান্ত। স্কুল থেকেই যাতে পড়ার বই পড়বার পাশাপাশি অন্য বই পড়ার অভ্যাস তৈরী হয়, পড়ুয়াদের মধ্যে সেই কারনে রাজ্য সরকার এই বন্দোবস্ত করেছিল। প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত স্কুলগুলিকে মোট আটটি ভাগে ভাগ করে প্রয়োজনীয় অর্থের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছিল। শিক্ষার মান উন্নত করার জন্য লাইব্রেরি রাখার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিল রাজ্য সরকার।
পাশাপাশি রাজ্যের সরকারি লাইব্রেরিগুলিতে মাসিক চার্জ-ও কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল সাধারনের কাছে যাতে আরও বেশি করে বই পড়ার সুযোগ করে দেওয়া যায়।
এবারে আরও এক ধাপ এগোয় লাইব্রেরি জনপ্রিয় করার সাধু উদ্যোগ। কিছুদিনের মধ্যেই নিজের বৈধ পরিচয়পত্র নিয়ে গেলে যে কোনও ব্যক্তি বিনামূল্যে হাতের নাগালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ বই নিয়ে পড়তে পারবেন। দেশের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে নিজেদের লাইব্রেরি সর্বসাধারণের জন্য খুলে দিতে চলেছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। প্রায় ৫৪ হাজার টাকার বই কেনা হয়েছে গ্রন্থাগার এবং জনশিক্ষা প্রসার দফতরের দু কোটি টাকা অনুদান থেকে। ওই দু'কোটি টাকার ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট জমা পড়লে আরো তিন কোটি টাকা অনুদান পাওয়া যাবে বলে জানালেন উপাচার্য সোনালী চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি আরও বলেন, সাধারনের জন্য লাইব্রেরি উন্মুক্ত করার আগে তাঁরা ভেবেছিলেন, কী ধরণের বই রাখা যায়, সেই কথা ভাবতে গিয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বৈচিত্রের ওপর। যাতে যে কোনো বয়সের যে কোনো পেশার লোকজন এই লাইব্রেরির যথাযথ মূল্যায়ন করতে পারে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ১২ লক্ষ বই আছে। এর মধ্যে রয়েছে ১৫ শতকের বেশ কিছু দুষ্প্রাপ্য বইও। ডিজিট্যাল বই রয়েছে হার্ড কপির কয়েকগুণ। ন্যাক -এর প্রতিনিধিরাও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই লাইব্রেরির উচ্ছসিত প্রশংসা করেছিলেন।
শুধুমাত্র কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারই নয়, আরও আটটি ক্যাম্পাসের লাইব্রেরি জনসাধারের জন্য উন্মুক্ত হচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের বইয়ের জন্য আলাদা আলাদা কর্ণার থাকছে। ফিল্ম স্টাডিজ কর্ণার, স্পোর্টস কর্ণার, এংলো ইন্ডিয়ান কর্ণার প্রভৃতি। এছাড়াও ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার পড়াশুনোর জন্যও বইয়ের বিপুল সম্ভার থাকছে। অন্যান্য জায়গার ছাত্র ছাত্রীরাও বিনামূল্যে এগুলির ব্যবহার করতে পারবেন। এছাড়াও একজন গৃহবধূ থেকে পেশাদার, সবাই যাতে আকর্ষণ বোধ করেন বই পড়তে এবং উপকৃত হন, সে বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে। তার জন্য ফিকশজনের বিপুল সম্ভার, গল্প, উপন্যাস, পত্র-পত্রিকার পাশাপাশি থাকবে পেশাদারি জ্ঞান আহরণের বইও। বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখ্য লাইব্রেরিয়ান সৌমিত্র সরকার জানান, সমস্ত বইয়ের প্রসেসিং শুরু হয়েছে। সেগুলিকে নাম্বারিং করে সাজানো হচ্ছে। সাধারণ মানুষ শুধুমাত্র রিডিং রুম-ই নয়, ডিজিটাল লাইব্রেরিরও সুবিধা পাবেন। টার্মিনাল থাকবে। যে বই তাঁরা পড়তে চাইছেন, সেই বই বা ডিজিট্যাল কন্টেন্ট বের করে পড়তে পারবেন তাঁরা। এই সমস্ত ব্যবস্থার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ছাত্র-ছাত্রীদের কোনোরকম সমস্যা হবেনা। বরঞ্চ তারা সাধারনের জন্য কেনা বইয়ের সুবিধে পাবেন। হস্টেলগুলিতে ইন্টারনেট কানেকশনের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন লাইব্রেরির সুবিধা তারা হস্টেল থেকেও পাবেন। সেন্ট্রাল লাইব্রেরিতে সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বই পড়বার সুযোগ পাওয়া যাবে। ক্যাম্পাসের লাইব্রেরিগুলি খোলা থাকবে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন ওয়েবসাইটেই দেখে নেওয়া যাবে কোন ক্যাম্পাসে কোন বই রয়েছে। তবে, এটাও উল্লেখ্য, একেকটা বই-এর একাধিক কপি কেনা হয়েছে। সেগুলি বিভিন্ন ক্যাম্পাসে রাখা হয়েছে। অর্থের অভাবে যাঁরা বই কিনতে পারেন না, তাঁরা যথেষ্ট লাভবান হবেন। এইভাবে বলাই যায়, এই উদ্যোগ কলকাতা তথা পার্শ্ববর্তী এলাকার সাধারণ মানুষের জন্য এক অসাধারন উপহার। দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যদি এইভাবে এগিয়ে আসে, তাহলে বইপ্রেমী মানুষেরা, যাঁরা সবসময় বই কিনে পড়তে পারেন না, তারা যথেষ্ট উপকৃত হবেন।