কোচবিহার জেলার উচলপুকুরীর মেখলিগঞ্জের ব্যাংকান্দি গ্রাম। এখানেই রয়েছে কাজল দিঘি। টলটলে জল। চারিদিকে সবুজ। পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে বট গাছ। একদিন স্থানীয় এক ব্যক্তি হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাঁকে জিজ্ঞেস করে জানা যায়, একদিন কাজল দিঘির পাশ দিয়ে ফেরার সময় তিনি দেখতে পান এক বুড়ো-বুড়ি গাছের তলায় বসে গল্প করছেন। আপাতনিরীহ এই দৃশ্যটি আসলে অলৌকিক। এই অলৌকিকত্বই জন্ম দিয়েছে বুড়ো-বুড়ি ঠাকুরের।
শোনা যায়, গ্রামে একের পর এক পরিবারের মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়তে থাকেন। সময়টা প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে। সকলেই ঘুমের ঘোরে ভুল বকতেন এবং এক বয়স্ক বুড়ো-বুড়ির উল্লেখ করতেন। তারপর গ্রামের সকলে মিলে এই বুড়া-বুড়ির পুজো শুরু করেন।
আরেকটি ব্যাখ্যাও পাওয়া যায় এই লৌকিক দেব-দেবীকে নিয়ে। প্রায় একশ বছর আগের কথা। কাজল দিঘির পাশে জমিদার চন্দ্রকুমার রায় সরকারের বাড়ি। তিনি একদিন ভোরবেলা প্রথম দেখেছিলেন একটা সোনার থালায় ভেসে উঠেছে দুটি মূর্তি। এক জোড়া বয়স্ক বুড়া-বুড়ির মূর্তি। ওই মুর্তিদুটি অদ্ভুতভাবে ভেসে ছিল জলে। জল থেকে তুলে আনেন জমিদার। তারপরই ভেসে যায় সোনার থালা। এরপর ওই জমিদারের আমল থেকে শুরু হয় পুজো। তবে তখন খড়ের চালা তৈরী করে পুজো করা হত। এমনকী সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেকে ভুলেও গিয়েছিলেন এই পুজোর কথা। তারপর হঠাৎ করে যখন আবার বুড়া-বুড়ির মূর্তি দেখা শুরু হলে নতুন করে পুজো শুরু করেন ব্যাঙকান্দি গ্রামের বাসিন্দারা।
বর্তমানে চন্দ্রকুমার রায় সরকারের ছেলের ছেলে হরিদাস রায় সরকার এই বুড়া-বুড়ির পুজোর দায়িত্বে রয়েছেন। এখন এই লৌকিক দেবতার থানে রয়েছে মূর্তি। পুজো হয় সেখানেই। প্রথমে খড়ের ঘর তৈরী করে বুড়া-বুড়িকে প্রতিষ্ঠা করা হলেও পরবর্তীতে পাকা মন্দির তৈরী করা হয়। মন্দিরটা পঁয়তাল্লিশ বছরের পুরনো। এছাড়াও এই মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে দেবী বাসন্তীর মূর্তি।
প্রতি বছর চৈত্র মাসে বাসন্তী পুজোর সময় বুড়া-বুড়ির পুজো হয়। পুজোর উপকরণ বলতে লাগে ঢাক-ঢোল, ফলমূল, বাতাসা, কলা। এছাড়া আতপচালের ভোগ ও খিচুড়ি রান্না করা হয়।
এই পুজোয় কোনওরকম বৈদিক মন্ত্রপাঠের নিয়ম নেই। দেবতার নামে মন্ত্রপাঠ করা হয়। আগে ভর হতো। এখন ভর হয় না। প্রতি বছর নতুন করে মূর্তি বানিয়ে পুজো করা হয়। বাৎসরিক পুজোর পাশাপাশি নিত্য পুজোরও চল রয়েছে এখানে। এভাবেই লৌকিক দেবতারা আপনজন হয়ে ওঠে।