স্বাধীনতা সংগ্রামীর নামে হচ্ছে বর্ধমান স্টেশনের নামকরণ

বর্ধমান-এর নামকরণ সম্পর্কে রয়েছে অনেক মত। অনেকে বলেন জৈন তীর্থঙ্কর বর্ধমানের নামানুসারে এখানকার নামকরণ হয়েছে। ইতিহাসবিদদের অনেকেই জানান, মহাভারতেও এই জনপদের নাম রয়েছে। রেলের প্রাচীন স্টেশনগুলির অন্যতম এই বর্ধমানের রেল জংশন। পশ্চিমবঙ্গের ব্যস্ত রেলস্টেশনগুলির মধ্যে একটি নাম অবশ্যই এই বর্ধমান জংশন। এবার সেই স্টেশনের নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিতে উদ্যোগী হল রাজ্য সরকার।

স্থির করা হয় যে স্বাধীনতা সংগ্রামী বটুকেশ্বর দত্তর নামে এই স্টেশনের নামকরণ করা হবে। শনিবার বিপ্লবীর স্মরণসভায় বর্ধমান স্টেশনের নাম পরিবর্তনের বিষয়টি ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় গৃহ রাজ্য মন্ত্রী তথা বিহারের বিজেপি নেতা নিত্যানন্দ রাই, স্বাধীনতা সংগ্রামী বটুকেশ্বর দত্তের পাটনার বাড়ি ঘুরে দেখে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান তিনি। স্বাধীনতা সংগ্রামীর মৃত্যুদিনে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে পাটনার জাক্কানপুরের বাড়িতে যান নিত্যানন্দ। সেখানে দলের জাতীয় সহ সভাপতি শিবরাজ সিং চৌহানের উপস্থিতিতে একথা জানান তিনি। দুজনেই দেখা করেন বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্তর কন্যা ভারতী দত্ত বাগচীর সঙ্গে। প্রসঙ্গত, তিনিই বটুকেশ্বরের বংশের শেষ প্রতিনিধি। ভারতী বাগচী জানান, তাঁদের পাটনার বাড়িতে স্মরণসভার আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে মন্ত্রীকে তাঁরা জানান দীর্ঘদিন ধরে বর্ধমান স্টেশনের নাম পরিবর্তন করে বটুকেশ্বর দত্তর নামে করার জন্য তাঁরা আবেদন করেন। সেই ব্যাপারে কিছু করার জন্য তাঁকে অনুরোধ করা হয়। সঙ্গে সঙ্গে তিনি খোঁজ নিয়ে ঘোষণা করেছেন বর্ধমান স্টেশনের নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই বিষয়ে অর্ডারও করা হয়েছে বলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ঘোষণা করেন।

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে উনিশ শতকের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হলেন বটুকেশ্বর দত্ত। পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার খন্ডঘোষ থানা এলাকার ওঁয়াড়ি গ্রামে ১৯১০-এর ১৮ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন বটুকেশ্বর দত্ত। কিছুদিন ওঁয়াড়ি গ্রামে থাকার পর বাবার সঙ্গে উত্তরপ্রদেশের কানপুরে চলে যান। কানপুরে কলেজে পড়ার সময় তিনি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। পরাধীন দেশকে স্বাধীন করতে তিনি নাম লেখান বিপ্লবী দলে। যোগ দেন চন্দ্রশেখর আজাদের সংগঠন হিন্দুস্থান সোশ্যালিস্ট রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশন-এ১৯২৯ সালের ৮ এপ্রিল দিল্লিতে কেন্দ্রীয় আইনসভা কক্ষে ভগৎ সিং ও বটুকেশ্বর দত্ত বোমা ফেলেন, “ইনকিলাব জিন্দাবাদ, সাম্রাজ্যবাদ নিপাত যাক” স্লোগান দিয়ে দেশমুক্তির দাবিতে লিফলেট ছড়ান ও তারপর দু’জনেই স্বেচ্ছায় ধরা দেন। লাহোর ষড়যন্ত্র মামলায় যুক্ত থাকার অভিযোগে ১৯৩১ সালের ২৩ মার্চ ভগৎ সিং, শুকদেব ও রাজগুরুর ফাঁসি হলেও বটুকেশ্বর দত্তের বয়স কম থাকায় তাঁকে ১৯৩০ সালের ৬ জুন ব্রিটিশ সরকার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়ে আন্দামান-নিকোবরের সেলুলার জেলে দ্বীপান্তরিত করে। পরে তিনি জেল থেকে মুক্ত হন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর চলে আসেন পাটনা শহরে। ১৯৬৫ সালের ১৯ জুলাই ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়ে দিল্লিতে লোকচক্ষুর আড়ালেই বটুকেশ্বর দত্তের মৃত্যু হয়। বটুকেশ্বর দত্ত বিপ্লবী সদস্যদের নিকট বি কে নামে পরিচিত ছিলেন।

বর্ধমানের এই বঙ্গসন্তান এর অবদান স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহসে নেহাত কম কিছু নয়,  কিন্তু মেলেনি তার যোগ্য সম্মান। তাঁর নাম মলিন হয়েছে ইতিহাসের পাতা থেকে। বেঁচে থাকাকালীন স্বাধীন ভারতেও পান নি তেমন স্বীকৃতি। আজ তাঁর নামই আবার উঠে আসছে, তাঁর সম্মানার্থে বর্ধমান স্টেশনের নাম পরিবর্তন করে রাখা হচ্ছে এই স্বাধীনতা সংগ্রামীর নামেই। স্বাধীনতার দীর্ঘ দশক পর স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে তাঁকে।

 

 

 

 

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...