বঙ্গে পালদের বৌদ্ধ বিহার

আদি মধ্যযুগীয় ভারতীয় সমাজ ও প্রাশাসনিক ব্যবস্থার অন্যতম আকর্ষণ ছিল জমিদান (ব্রহ্মদেও)। ব্রাহ্মণদের,মন্দিরের উদ্দেশ্যে যেমন নিঃশর্তে রাজা বা সামন্ত সম্প্রদায় জমি দান করতেন তেমনি বৌদ্ধ ধর্মের পৃষ্ঠপোষক হিসেবেও মঠ ও বিহারের উদ্দেশ্যে এই দান করা হতো। যার প্রমাণ মেলে কিছুকাল আগে এই বঙ্গে। সময়টা ১৯৮৭, জায়গাটা মালদা জেলার হাবিবপুর ব্লকের এখনকার জগজীবনপুর গ্রামে। প্রায় ৪৬ কিলোমিটার দূরে বাংলাদেশের রাজশাহী জেলার সীমান্তে এর অবস্থান। পাশ দিয়ে বয়ে গেছে মহানন্দা আর ট্যাঙ্গন নদী। চাষের কাজ করতে গিয়ে জগদীশচন্দ্র গাঁই নামে এক অখ্যাত কৃষক প্রথম তাম্রশাসন খুঁজে পান। যার একেবারে ওপরে খোদাই করা আছে প্রস্ফুটিত পদ্মের ভেতর বৌদ্ধ ধর্মচক্র, ওপরে ছত্র আর দু’দিকে দু’টি হরিণপাল রাজবংশের প্রতীক এটি। কৌতূহলে তিনি খুঁড়ে ফেললেন আরও খানিকটা। খোঁজ পেয়ে হাজির হন আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া। তাঁদের খননকার্যে আবিষ্কার হল এক গোটা বৌদ্ধ মঠ।

              গবেষকরা ওই তাম্রশাসনের পাঠোদ্ধার করেছেন। তাম্রফলকটি সিদ্ধমাতৃকা লিপিতে  লিখিত ও একদিকে খোদাই করা ৪০ লাইন ও অন্যদিকে ৩৩ লাইন। প্রত্যেক লাইনে ৫০টি করে অক্ষর সমন্বিত। তাম্রফলকের নিচে দেখা যায় পাল বংশের শ্রী মহেন্দ্রপাল দেবের নাম। বিবৃত আছে যে, সেনাপতি বজ্রদেবের অনুরোধে নন্দদীর্ঘিকা উন্দগ্র নামের এক জায়গায় বৌদ্ধ ভিক্ষুদের এই জমি দান করেন সম্রাট মহেন্দ্রপাল। উদ্দেশ্য গৌতম বুদ্ধের উপাসনা এবং ভিক্ষুকদের বসবাস। এভাবেই গড়ে ওঠে একটা মঠ। নাম হয় নন্দদীর্ঘিকা মহাবিহার।

                     সম্রাট মহেন্দ্রপাল সপ্তমরাজ্যবর্ষে তাম্রশাসনটি পুণ্ড্রবর্ধন ভুক্তির কুদ্দাল খাতক’-এর জয়স্কন্ধবার থেকে প্রকাশ করেন। পাল সম্রাট দেবপালের ছেলে ছিলেন মহেন্দ্রপাল। অনুমিত  হত, পাল সম্রাট দেবপালের পর রাজত্ব করতেন প্রথম বিগ্রহপাল। এই তাম্রফলক সন্দেহের নিরসন ঘটিয়ে সত্য প্রমান করে। প্রমাণিত হয়, মহেন্দ্রপালই ছিলেন দেবপালের পরবর্তী সম্রাট। এখন সেই তাম্রশাসন রাখা আছে মালদা জেলা জাদুঘরে। জগজীবনপুর গ্রামে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার উদ্যোগে যে খননকার্য চলে, তাতে বৌদ্ধ মঠের ধ্বংসাবশেষ ছাড়াও পাওয়া গিয়েছিল পোড়ামাটির সিলমোহর,  টেরাকোটার মূর্তি, পোড়ামাটির পাত্র এবং আরও অনেক কিছু। সেগুলো এখন মালদা জেলা জাদুঘর এবং কলকাতার ভারতীয় জাদুঘরে স্থান পেয়েছে।

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...