ইংরেজরাও হাত পাতত এই বাঙালির কাছে!

কলকাতার ইতিহাসে বেশ কিছু প্রবাদ কেন্দ্রিক ব্যক্তিত্ব আছেন, যারা বাঙালির   আটপৌরে জীবনের সদস্য হয়ে গেছেন  অর্থাৎ যাদের পরিচিতি প্রবাদের মাধ্যমে। তাদের মধ্যে একজন হলেন গৌরী সেন, তাঁর কথা নয় আরেকদিন হবে, আরো একজন ছিলেন যার কাছে ইংরেজরা হাত পাততে দ্বিধা করে নি।  এমন বাঙালি কলকাতার গর্ব তো বটেই। কিন্তু তিনি কে ?  আজ আলাপ হোক তাঁর সাথেই।  

ইনি হলেন নকু ধর - যার আসল নাম লক্ষ্মীকান্ত ধর। সে কালের মানুষ হয়েও খাসা রপ্ত করেছিলেন  ইংরেজি কিন্তু কে শেখালো তাকে ?   ছিলেন  লর্ড ক্লাইভের দেওয়ানতাঁর প্রতিপত্তি  সে সময় এতটাই ছিল যে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি থেকে সাহেবকুল সবাই কোনো না কোনো সময়ে এই বাবুর  কাছে হাত পেতেছেন। পৈতৃক সম্পত্তি থাকলেও  শুরুতেই  এতটা প্রভাবশালী ছিলেন না।  তার এই পরিবর্তনের পিছনেই এক গল্প আছে।  

প্রতিদিনের মতোই এক সকালে গঙ্গার ঘাটে  বসে জপ করছিলেন নকু ধর   হঠাৎ  চোখে  পড়ে এক সাহেবের অর্ধমৃত দেহ। ভৃত্যদের  মাধ্যমে  তুলে আনলেন সেই সাহেবকে  নিজের  বাড়ি খবর পেলেন যে , এক পণ্যবাহী জাহাজ তার যাত্রীসহ  তলিয়ে গেলেও স্বাস্থ্যবান এই সাহেবকে  একেবারে কাবু করতে পারে নি।  যাই হোক , নকুবাবুর সেবায় সেই সাহেব  সুস্থ হয়ে ওঠেন।  আর তার সাহচর্যে এই বাবু শিখলেন ইংরেজি।  শুধু শিখলেন না , হলেন পারদর্শীও  বটে।  

house

ক্রমেই সাহেব সঙ্গে  বাড়লো  ওঠাবসা, এবার উন্নতির ধাপে পদার্পন শুরু হলো। হলেন  রবার্ট ক্লাইভের দেওয়ান। কেবল টাকা নয় নানা কারণেই ইংরেজরা তার সাথে পরামর্শ করতো।  অতএব তার প্রভাব প্রতিপত্তি খানিক আঁচ  করা যায় বৈ কি ! প্রসঙ্গত বলা ভালো এসময় কিন্তু পলাশীর যুদ্ধ হয় নি।  তার পর হলো যুদ্ধ , যুদ্ধ শেষে  ক্লাইভ নিলেন বিদায় , কলকাতার গভর্নর হয়ে এলেন ওয়ারেন হেস্টিংস। রাজনৈতিক পালাবদল হলেও এই বাবুর প্রভাবে  কিন্তু এতটুকু  ভাটা  পড়ে নি। দিন দিন শ্রী বৃদ্ধি হয়েছে।  জানা যায় মারাঠাদের বিরুদ্ধে ইংরেজদের পক্ষে  লক্ষ টাকা  দিয়েছিলেন তিনি।  সময়কাল হিসেবে করলে টাকার অংক যে কি বিপুল তা বলাই বাহুল্য। এই হলেন প্রভূত প্রতিপত্তি  সমন্বিত নকু ধর।  আজও  তিনি জনশ্রুতিতে বিখ্যাত হয়ে আছেন।  তাকে রাজা’ উপাধি দিতে চেয়েছিলেন ব্রিটিশরাজ  , যদিও তাঁর অনুরোধেই তার নাতি সুখময়কে সেটি দেওয়া হয়। 

 

ইলিজা ইম্পের দেওয়ান এই সুখময়  দাদামশায়ের প্রভূত সম্পত্তি নিয়ে , মহারাজা হওয়ার পর কলকাতার পোস্তায় রাজবাড়ি নির্মাণ করেন।  যদিও তার কিছুটা ধ্বংস প্রাপ্ত  হলেও রাজবাড়ি , লালবাডি  , ঠাকুরবাড়ি এখনো আছে। যাই হোক  তৎকালীন সময়  এক বাঙালি  নিজের দক্ষতায় খ্যাতির শীর্ষে উত্তরণ   ঘটান; নকু  ধরের   কড়ির  ধারে  ইংরেজদেরও ধার কমে যেত, সেই কথা  কম আনন্দের ! তবে তাঁর ইতিহাস বাঙালি জানুক বা নাজানুক তাঁকে প্রবাদে বাঙালি প্রতি নিয়তই স্মরণ করেনতাতে  সন্দেহ নেই।             

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...