ব্রেট লিঃ ছয় বলে ছয় উইকেট নেওয়া একমাত্র স্পিডস্টার

গতিতে ব্যাটসম্যানকে বিধ্বস্ত করে স্টাম্প ভেঙে দেওয়া তাঁর নেশা ছিল। সেই গতিতে লক্ষ্যভেদের যাত্রা শুরু হয়েছিল মাত্র ৯ বছর বয়সে। প্রথম ওভারেই ৬ বলে ৬ উইকেট। আসছেন ভয়ঙ্কর 'লি' তার পূর্বাভাস ছিল এটাই।

 

অনুর্ধ ১০ দলের হয়ে অভিষেক ম্যাচে প্রথম ওভার শেষে স্কোরবোর্ডে তাঁর নামের পাশে লেখা ছিল ১-১-০-৬। বাচ্চা ব্রেট লির প্রতিটি বল স্টাম্প ভেদ করেছিল। প্রতিপক্ষ দল খুঁজে পায়নি বল। যাই পিচে পড়েছে উইকেট তুলে নিয়ে চলে গিয়েছে। ব্রেট নামক ঝড় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আঙিনায় আছড়ে পড়ে ১৯৯৯ সালের ২৬ ডিসেম্বর। প্রতিপক্ষ সচিন তেন্ডুলকারের দুর্বল ভারত। আর দেখে কে... বিপক্ষে মেলবোর্নে স্বপ্নের ব্যাগি গ্রিন ক্যাপ মাথায় পরেন। নিজের করা ওভারের চতুর্থ বলেই বোল্ড করেন সদাগোপান রামেশকে। তারপর বাউন্স, সুইং এবং গতি দিয়ে একে একে উইকেট নেন পাঁচটি।

 

Brettlee1

 

টেস্ট অভিষেকের একবছর পর অভিষেক হয় ওয়ানডে ফরম্যাটে। তবে শুরুটা টেস্টের মতো রাজসিক হয়নি, প্রথম তিন ম্যাচে কোনও উইকেটের দেখা পাননি ব্রেট লি। তবে বেশি সময়ও নেন নি! নিজের সপ্তম ম্যাচেই সেই ভারতের বিরূদ্ধেই নেন পাঁচ উইকেট। ব্রেট লির আন্তর্জাতিক ক্রিকেট শুরু ঠিক এভাবেই। অজিদের হয়ে নিয়মিত বল করতে থাকেন,ঝড় তুলতে থাকেন বাইশ গজের পিচে। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যাত্রাটা মোটেই মসৃন ছিল না। পেস বোলারদের সবচেয়ে বড় শত্রু ইনজুরি, সেই ইনজুরিতে ছিটকে গিয়েছিলেন বারবার, তবে ফিরে এসেছেন অতীতের চেয়ে আরো ভয়ংকর রুপে৷

 

সাধারণত পেসাররা চোট-ইনজুরি থেকে ফিরে আসলে গতি কমিয়ে নেন। সে জায়গায় লি ছিলেন উল্টো পথের যাত্রী। অসংখ্যবার চোটে পরলেও গতি কমাননি। পুরো ক্যারিয়ার জুড়েই ভক্তরা একটা অদৃশ্য দ্বৈরথ দেখতে পেতেন ব্রেট লি এবং পাকিস্তানের শোয়েব আখতারের মাঝে। দুই গতি তারকার দ্বৈরথ! দুজনেই ১৫০ এর উপরে গতিতে নিয়মিত বল করতেন। ২০০৫ সালে ব্রেট লি নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১০১.১ অর্থাৎ ১৬১.১ কিলো গতিতে বল করেন, যা এখনো ক্রিকেটের সবচেয়ে দ্রুত গতির বোলিংয়ের বেলায় দ্বিতীয়। প্রথমে অবস্থানে থাকা শোয়েব আখতারের করা ১৬১.৩ কিলো গতির বোলিং।

 

Brettlee2

 

টি-টোয়েন্টির প্রথম বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেন, যা টি ২০ ক্রিকেটে প্রথম হ্যাটট্রিক। ব্রেট লি একমাত্র বোলার যিনি টি-টোয়েন্টি এবং ওয়ানডে বিশ্বকাপ – দুই ইভেন্টেই হ্যাটট্রিকের স্বাদ নিয়েছেন।

 

উইকেট শিকারের মাঝে থেকে তিনি সর্বকালের সেরা দশের একজন। সব ফরম্যাট মিলিয়ে যার উইকেট সংখ্যা ৭১৮ টি। টেস্টে ৩১০ এবং ওয়ানডেতে অস্ট্রেলিয়ার জার্সি পরে শিকার করেন ৩৮০ উইকেট। ইনজুরির থাবায় টেস্ট ক্যারিয়ারকে সময়ের আগেই বিদায় দিয়েছিলেন, নয়তো টেস্টের উইকেট সংখ্যা আরো চমকপ্রদ হওয়ারই কথা ছিলো। ইনজুরির কারণে ছ'বার অপারেশন হয়েছে। প্রতিবারই ফিরে এসেছেন দুর্দান্ত রূপে।

 

টেস্ট ও ওয়ানডে, উভয় ফরম্যাটেই তিনশোর বেশি উইকেট শিকার করেও লি’র সাদামাটা মন্তব্য, ‘আমি অজিদের হয়ে তিনশো উইকেট শিকার করব কখনওই ভাবিনি, আমি উচ্ছ্বসিত আমার ক্যারিয়ার নিয়ে,আমি সন্তুষ্ট। তবে, হ্যাঁ পুরো ক্যারিয়ার জুড়েই আমার কাছে উইকেটের চেয়ে প্রাধ্যান্য পেয়েছে গতি।’

 

 

Brettlee3

 

অজিদের হয়ে খেলার পাশাপাশি ব্রেট লি সব রকমের ফ্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে হট কেক ছিলেন। আইপিএল বিগ ব্যাশেও গতি দিয়ে নাকানি চোপানি খাইয়েছেন প্রতিপক্ষকে। নব্বইয়ের শেষ বেলায় ক্যারিয়ার শুরু করে ১৩ বছরের ক্রিকেট জীবনের ইতি টেনেছেন ২০১২ সালে। গতি দিয়ে মাতিয়ে রেখেছিলেন পুরো একটি প্রজন্ম। উইকেট পেয়ে হাঁটু ভেঙে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে শুন্যে ক্রমাগত ঘুষি ছোঁড়া – এমন উদযাপন লাইভ দেখতে পারাটা সৌভাগ্যবান মানতে পারেন নিজেদের।

 

ব্রেট লি’র মাঠের বাইরের জীবনও বরাবরই বেশ বর্ণময়। গানবাজনার সাথে জড়িত ছিলেন, ধারাভাষ্য দিয়েছিলেন। অভিনয় করেছেন। যেন তেন অভিনয় নয়, রীতিমত ভারতীয় সিনেমাতে দেখা গিয়েছে বিঙ্গাকে!

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...