এবার এক ওষুধেই ক্যান্সার ও ডায়াবেটিসের রোগ নির্ণয় হবে!

ক্যানসার ও  ডায়াবেটিস এই দুটো রোগ খুবই জটিল এবং ভয়ংকর। যেকোন একটি রোগ হলেই জীবন অন্ধকার হয়ে আসে। শরীর ধীরে ধীরে ভেঙ্গে পড়ে এবং অবস্থার অবনতি হয়ে মৃত্যুর কাছাকাছি চলে আসে। এইরকম পরিস্থিতিতে আপনি চিকিৎসাহীন থাকতে পারবেন না। বিভিন্ন ধরনের ওষুধ, ইনজেকশন, কেমোথেরাপি ইত্যাদির মাধ্যমে রোগ্মুক্ত হতেই হবে। যদিও ক্যানসার ডায়াবেটিসের চেয়ে অনেকটাই ভয়ংকর রোগ। কিন্তু একটা সুখবর হয়তো আসতে চলেছে। সাম্প্রতিক এক গবেষণা এই দুটোর রোগের চিকিৎসার ওষুধ এক। হ্যাঁ আমাদের ভারতবর্ষে এটি হচ্ছে।

গুজরাতের ভাদোদরা শহরের মহারাজা সায়াজিরাও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. অঞ্জলি পটেল এবং তাঁর গবেষক ছাত্রী দেবত্রয়ী দাশগুপ্ত এই নতুন অসম্ভবটি সম্ভব করছেন। অধ্যাপক ডা. অঞ্জলি পটেল একটা এমন ওষুধের বিষয়ে গবেষণা করেছেন যা ডায়াবেটিস প্রতিরোধ সাথে ক্যানসারের ঝুঁকিও কমায়। তাঁদের এই গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা গ্রিস আন্তর্জাতিক সম্মেলনে উপস্থাপিত হবে বলেই জানা গিয়েছে।

ডায়াবেটিস মেলিটাস টাইপ ২ (DMT 2) রোগটি যেকোন সময় উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। তাই, গবেষকরা দেখেছেন যে ডিএমটি ২ এবং ক্যানসারের মধ্যে একটি অদ্ভুত রকম সম্পর্ক রয়েছে যাতে ডিএমটি ২ ক্যানসার বৃদ্ধি করতে পারে।  

সাম্প্রতিক গবেষণা করে গবেষকরা বুঝতে পারছেন যে ক্যানসার এবং অ্যান্টি-ডায়াবেটিক ওষুধের মধ্যে একটা সংযোগ রয়েছে। একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে অ্যান্টি-ডায়াবেটিক ওষুধের দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারে ডিএমটি ২ রোগীদের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে পারে। নির্দিষ্ট কিছু অ্যান্টি-ডায়াবেটিক ওষুধ যেমন গ্লিক্লাজাইড এবং গ্লিবেনক্লামাইড বা গ্লিপিজাইড একসঙ্গে গ্রহণ করলে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমতে পারে।

আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশনের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান দেখে জানা গিয়েছে যে সারা বিশ্বে প্রায় ৪৬৩ মিলিয়ন মানুষ  এই গুরুতর ডায়াবেটিসে ভুগছেন। এই রোগটিকে গুরুত্ব না দিলে বা নিয়ন্ত্রণ করা না হলে খুব শ্রীঘ্রই এই সংখ্যা বেড়ে ৭০০ মিলিয়নে দাঁড়াবে।

অধ্যাপক ড. অঞ্জলি পটেল এবং তাঁর গবেষক ছাত্রী দেবত্রয়ী দাশগুপ্ত এই বিষয়ে জানিয়েছেন যে তারা গ্লিপিজাইডের নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার এবং এর অ্যান্টিক্যান্সার কার্যকলাপ পরীক্ষা করার জন্য সিলিকা ন্যানো পার্টিকেলগুলির উপর ভিত্তি করে একটি ড্রাগ ডেলিভারি সিস্টেম ডিজাইন করেছে।

গ্লিপিজাইড হল একটি অ্যান্টি-ডায়াবেটিক ওষুধ যা শরীরের প্রাকৃতিক ইনসুলিন নিঃসরণকে উদ্দীপিত করে রক্তে শর্করার পরিমাণ কমায়। এটি কিডনির ক্ষতি, অন্ধত্ব এবং স্নায়বিক সমস্যা প্রতিরোধেও সাহায্য করে।

তাঁরা এটাও দাবি করেছেন যে নিয়ন্ত্রিত ওষুধ দেওয়া হলে, শুধু ডায়াবেটিক সমস্যা থেকে মুক্তিই নয়, বরং সম্ভাব্য ক্যানসার প্রতিরোধ হিসেবে কাজ করবে। লিভার ক্যানসার সেল লাইনে এমটিটি অ্যাস ব্যবহার করে ৬৩ শতাংশ পর্যন্ত প্রভাব লক্ষ্য করা গিয়েছে। এতে বোঝাই যাচ্ছে যে এটি গ্লিপিজাইড ক্যানসার কোষকে মেরে ফেলতে পারে। তবে এখনও এই গবেষণার উপর বিশদ অধ্যয়ন করা প্রয়োজন রয়েছে তাদের।

এই গবেষণাপত্রটি গ্রিসের আইএসএল ফোর্থ এবং হেলেনিক মেডিটারেনিয়ান ইউনিভার্সিটি দ্বারা আয়োজিত ন্যানোটেকনোলজি অ্যান্ড বায়ো ন্যানোসায়েন্স (NANO BIO) বিষয়ক দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলনে উপস্থাপন করা হবে। এই অনুষ্ঠানটি আগামী ১১ থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর চলবে বলেই জানা গিয়েছে।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...