যে পাহাড় ও উপত্যকা একসময় ছিল সবুজে ভরা তা ক্রমশ হয়ে ওঠে রুক্ষ ও শুষ্ক। প্রকৃতির রোষে হারাতে থাকে সবুজের ছিটেফোঁটা। তবে তা অত্যন্ত দুঃখজনক ছিল ব্রাজিলের এক দম্পতির কাছে তাই তারা নিজেরাই দায়িত্ব নেয় তাদের চেনা জায়গাকে আবার সবুজে ভরিয়ে তুলতে। ঘটনাটি ব্রাজিলের, যেখানে ২০ বছরের মধ্যেই দম্পতি ফিরিয়ে দেন বনভূমির প্রকৃত সৌন্দর্য।
গাছের উপস্থিতির অভাবে অরণ্য ছেড়ে যাচ্ছিল বহু পশু পাখি, শূন্য হচ্ছিল প্রকৃতির কোল। মানুষের অবহেলা এর জন্য অনেকাংশে দায়ী ছিল। বিষয়টি মেনে নিতে পারেন নি ব্রাজিলের এক দম্পতি সেবাস্তিও সালগাদো ও লেলিয়ে ডেলুইজ ওয়ানিক সালগাদো। সেবাস্তিও সালগাদো দেশের একজন খ্যাতনামা চিত্রসাংবাদিক। তাঁর কাছে সবুজের সমারোহ ছাড়া প্রকৃতি কল্পনাতীত, তার মধ্যেই বড় হয়ে ওঠা। কাজের সূত্রে বহু বছর দেশের বাইরে থাকতে হয় তাঁকে, ফিরে এসে তিনি হতাশ হন তাঁর চেনা বনভূমিকে শুকনো জমিতে পরিণত হতে দেখে। তখন মাত্র শূন্য দশমিক পাঁচ শতাংশ জমিতে গাছ ছিল। বাকি সব কিছুর ধ্বংসের নিদর্শন হিসাবে ছিল ধূ ধূ জমি। গাছের অভাবে ধ্বংস হচ্ছিল ওই অঞ্চল। অবশেষে ‘ইনস্টিটিউটো টেরা’ নামে একটা সংস্থার প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। যুক্ত হন তাঁর স্ত্রীও।
প্রথমে চার লক্ষ চারা রোপণ দিয়ে শুরু হয় এই সংস্থার যাত্রা। সাধারণ গাছপালা ছাড়াও তারা লাগাতে থাকেন বন্য উদ্ভিদও। ফিরে আসে বিভিন্ন বন্যপ্রাণী। তবে শুধু রোপণই নয় অরণ্যের যত্ন নেওয়াও একটা বিশেষ অংশ যা দিনের পর দিন ধরে নিষ্ঠা সহকারে করে চলেছেন সংস্থার সঙ্গে যুক্ত সকলেই। এখনো পর্যন্ত কুড়ি লাখের বেশি গাছ লাগিয়ে ফেলেছেন তাঁরা। বর্তমানে এই অরণ্য ১৭২ রকমের পাখি, ৩৩ রকমের স্তন্যপায়ী, ২৯৩ প্রজাতির গাছপালা ও ১৫ প্রজাতির সূরীসৃপের বাসভূমি। তাঁদের মতো এই প্রচেষ্টা যদি সকল মানুষের মধ্যে সামান্য থাকে তবে পৃথিবীর চেহারাটাই হয়তো হয়ে যাবে অন্যরকম। এতরকম প্রাকৃতিক সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে পৃথিবীবাসী তা থেকে রক্ষা পাবে মানুষ। তারা সমগ্র বিশ্বের মানুষের কাছে যে দৃষ্টান্ত তৈরী করল তা নিয়ে কোনো দ্বিমত নেই, পরিবেশবিদদের মতে এই দম্পতিকে পুরস্কৃত করা উচিত।