দুঃসাহসী টিনটিন

'পেতি ভ্যাঁতিয়েম' কাগজের সাংবাদিক দুঃসাহসী টিনটিনকে চেনেননা এমন বাঙালি খুঁজে পাওয়া অসম্ভব, কিন্তু কজন বাঙালি জানেন ওই নীল সোয়েটার আর সোনালী ঝুঁটির মালিক টিনটিন কি করে উঠে এসেছিলো বইয়ের পাতায় আর দাপিয়ে বেড়িয়েছিল তার সঙ্গী সাথীদের নিয়ে। ১৯০৭ সালের ২২শে মে বেলজিয়ামের ব্রাসেলসের কাছেই এটর্বিক-এ জন্মেছিলেন এক অন্য মানুষ, নাম জন প্রসপার রোমি, ডাকনাম হার্জ। ছাত্র হার্জ খুবই ভালো, সমস্ত বিষয়েই ভালো নম্বর পায়, কিন্তু আঁকাজোকায় ছেলের ফল বেশ খারাপ। স্কুল স্কাউট দলের নিয়মিত সদস্য হার্জ পড়তে ভালোবাসতো জেরম কে জেরম কিম্বা মার্ক টোয়েনের বই, হাকলবেরি ফিন আর টমস‌ওয়ার ছিল অত্যন্ত প্রিয়। তবে কার্টুন আর কমিকস হার্জ'কে খুব কাছে টানতো। কিশোর হার্জ ভালোবাসতো গল্প লিখতে আর সেই গল্পকেই ছবিতে ফুটিয়ে তুলতে। মাত্র ষোল বছর বয়সে হার্জ বেলজিয়ামের বিখ্যাত স্কাউট দলের পত্রিকা 'লে বয় স্কাউট বেলজ' এর প্রচ্ছদ এঁকেছিলেন আর ১৯২৬ এ এই পত্রিকাতেই আঁকলেন তাঁর প্রথম কমিকস 'লেস অ্যাডভেঞ্চারেস দে টোটোর চেফ প‌উর দেস হ্যান্নেটস', স্কাউট দলের সদস্য টোটোরের দুঃসাহসীক অভিযানের কান্ডকারখানা। এই টোটোরই যে টিনটিনের পূর্বসূরি সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। টোটোরের কমিকস তৈরী করার সময় থেকেই উনি কর্মক্ষেত্রে ব্যবহার করতে থাকেন নিজের ডাক নাম হার্জ বা অ্যার্জে। স্নাতক হওয়ার পর হার্জ 'ল্য ভ্যাঁতিয়েম সিয়েক্ল'  কাগজের একজন ইলাস্ট্রেটর এবং ফোটো আসিসটেন্ট হিসেবে কাজ করতে থাকেন।

  এই কাগজের‌ই ক্রোড়পত্র 'ল্য পেতি ভ্যাঁতিয়েমে' ১৯২৯ খ্রীষ্টাব্দের ১০ই জানুয়ারি প্রথমবারের জন্য প্রকাশিত হল টিনটিন। তৈরী হলো এক ইতিহাস। টিনটিনের স্পাইক করা সোনালী চুলের বাহার, গায়ে আকাশনীল সোয়েটার আর খয়েরি প্যান্ট, সাথে রয়েছে একটা দুধ সাদা কুকুর 'কুট্টুস'(যে সারা পৃথিবীর কাছে স্নোয়ী সেই আপামর বাঙালির কাছে কুট্টুস হয়ে উঠেছে টিনটিনের বাংলা অনুবাদক নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর হাত ধরে)। স্কাউট টোটর পরিবর্তিত হয়ে জন্ম নেওয়া টিনটিন সাংবাদিক হয়ে সোভিয়েত দেশে পাড়ি দেওয়ার পর টিনটিনের হাত ধরেই অনেক শিশু কিশোর পৌঁছে গিয়েছে কঙ্গোয়, পার করেছে সাহারার মরুভূমি, রাত কাটিয়েছে ইনকাদের কারাগারে এমনকি আর্মস্ট্রং চাঁদে পৌঁছোনোর পনেরো বছর আগেই চাঁদের মাটিতেও পা পড়েছে সেই সব পাঠকদের। তবে কখনো বিপদসঙ্কুল হিমালয় অথবা রহস্যময় পিরামিডে ঘুরে বেড়ানোর শুরুর দিকেই অনেক বিপদ পার করতে হয়েছিলো টিনটিনকে। ১৯৩৬ খ্রীষ্টাব্দে প্রকাশিত কমিকস 'নীল কমলে' (দ্য ব্লু লোটাস্) টিনটিনকে যেতে হয়েছিল চীনে, চীনে গিয়ে টিনটিন দেখে জাপানিরা চীনেদের ওপর নানান অত্যাচার করছে,  গোল বাধলো তাতেই। বাস্তবিক ভাবেই জাপান সরকার বেলজিয়ামকে হুমকি দেয় আন্তর্জাতিক আদালতে দেখে নেবে বলে। এই ঘটনার পর থেকে টিনটিন ঘুরে বেড়ায় কল্পনার সব দেশে বর্ডুরিয়ায় কিম্বা সিলডাভিয়ায়, আর টিনটিনের প্রধান শত্রু হয়ে ওঠে ধুরন্ধর রাস্তাপপুলস১৯৮৩ খ্রীষ্টাব্দে৩রা মার্চ আমাদের ছেড়ে চলে যান হার্জ, আর মাত্র কুড়ি বছর পর হার্জের সন্তান টিনটিনও পা দেবে ১০০ বছরে কিন্তু টিনটিন চিরতরুন তার বয়স আজ‌ও বাড়েনি আর বাড়বে‌ওনা। 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...