সম্প্রতি দেশের ১৩টি শহর থেকে সংগ্রহ করা ব্রাহ্মীশাকের নমুনা নিয়ে গবেষণা করে জানা গেছে, কলকাতা তথা বাংলার ব্রাহ্মীশাক দেশের মধ্যে সেরা। জাতীয় স্তরে খ্যাতিসম্পন্ন জার্নাল ক্রসমার্ক-এ এই সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন বেরিয়েছে। যে ১৩টি শহর থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল, সেগুলি হল সোলান, কলকাতা, দিল্লি, যমুনানগর, চন্ডিগড়, হরিদ্বার, দেহরাদুন (এখান থেকে দু'ধরনের নমুনা নেওয়া হয়েছে), মানকপুর, আম্বালা, বারাণসী, সাহারানপুর, রোহতক এবং যোগীন্দরনগর।
এই গবেষণায় দেখা গেছে, মূলত যে উপাদান বা অ্যালক্যালয়েডের কারণে ব্রাহ্মীর স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করার জন্য এত পরিচিতি, সেই 'ব্যাকোসাইড-এ' কলকাতা তথা বাংলার ব্রাহ্মীশাকের নমুনাতেই সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে। পাশাপাশি এও বলা হয়েছে, কলকাতার সঙ্গে দেহরাদুনের ব্রাহ্মীশাকও গুণে ভরপুর। তাতেও যথেষ্ট পরিমানে 'ব্যাকোসাইড-এ' রয়েছে। উল্লেখ্য, নামখানা এবং সাগরের অসংখ্য চাষি আইলা বিপর্যয়ের পর বর্তমানে ব্রাহ্মীশাকের মাধ্যমেই উপার্জনের বিকল্প রাস্তা খুঁজে পেয়েছেন। এই খবর সামনে আসার পর ব্রাহ্মীশাকের ভবিষ্যৎ নিয়ে যথেষ্ট আশাবাদী রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের ভেষজ উদ্ভিদ পর্ষদের অধিকর্তা ডঃ প্রশান্ত সরকার জানান, শুধুমাত্র এই দুই এলাকার ১২০০ বিঘা জমিতে ব্রাহ্মী শাক চাষ হচ্ছে। বাংলার ব্রাহ্মী শাক যাচ্ছে বেঙ্গালুরু, বিজয়ওয়াড়া এবং মুম্বাইয়ের বিভিন্ন ওষুধ নির্মাতা সংস্থার কাছে। সেখান থেকে 'ব্যাকোসাইড এ' নিষ্কাশন করে বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সূত্রের খবর, শুধুমাত্র গবেষণাপত্রেই এটি প্রকাশিত হয়নি, বিভিন্ন ওষুধ নির্মাতা সংস্থাও তাদের গবেষণাগারে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সংগৃহিত ব্রাহ্মী শাক পরীক্ষা করে দেখেছে, বাংলার শাকেই 'ব্যাকোসাইড-এ' সবচেয়ে বেশি পরিমানে রয়েছে।
এই বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক ডঃ লোপামুদ্রা ভট্টাচার্য জানান, ব্রাহ্মী শাকের অনেক গুনাগুণ রয়েছে। এটির শুধুমাত্র স্মৃতিবর্ধকতা নিয়ে যেমন আলোচনা হয়, অন্যান্য গুণাবলী নিয়ে তেমন আলোচনা হয়না। এই শাক ঘুম বাড়ায়, উত্তেজনা প্রশমন করে এবং অবসাদ কাটাতেও এই শাকের জুড়ি মেলা ভার।
এই শাকের চাষ করে চাষিরা যথেষ্ট লাভের মুখ দেখছেন বলে জানা গেছে। ধান চাষ করে নামখানা এবং সাগরে চাষিদের বিঘাপিছু ৩/৪ হাজার টাকা আয় হতো সেখানে ব্রাহ্মীর মত শাক চাষ করে বিঘাপিছু আয় হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা। রাজ্য সরকারের সহযোগিতায় সাগর কৃষি উন্নয়ন ক্লাস্টার এবং নামখানা কল্পতরু ব্রাহ্মী কাল্টিভেশন ক্লাস্টারেই এই চাষ হচ্ছে। নামখানা, সাগর ছাড়াও নিমপীঠ আশ্রম, নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন এবং পূর্ব মেদিনীপুরের বেশ কিছু জায়গায় ব্রাহ্মীশাকের চাষ হচ্ছে।