আচ্ছা, আপনারা কি বই পড়তে ভালোবাসেন? এখনকার জেন ওয়াই প্রজন্ম যদিও এই পথ সচরাচর মাড়ায় না, কিন্তু এখনও প্রচুর মানুষ বই পড়তে ভালোবাসেন। নতুন প্রজন্মের অনেকেও এই নেশার বশবর্তী হয়ে রাতের পর রাত কাটিয়ে দিতে পারে। কাজেই বই পছন্দ এমন বহু মানুষ এখনও আছে। এ কথা স্বীকার করতেই হবে, যাঁরা বই পড়তে ভালোবাসেন, তাঁরা যাত্রাপথেও পড়তে খুব ভালোবাসেন। যাত্রা যেন সম্পূর্নই হয়না পড়া ছাড়া।
আপনাদের যদি বলা হয়, বই বয়ে বেড়াতে হবেনা অথচ টাটকা বই হাতে পেয়ে যাবেন যাত্রাপথেই! কি বিশ্বাস হচ্ছে না তো? হ্যাঁ। দক্ষিণ কোরিয়াতে রয়েছে এমন একটি ট্রেন। ট্রেনের ভেতরেই গড়ে উঠেছে লাইব্রেরি। প্রতিদিন বই নিয়ে ছুটে চলেছে দক্ষিণ কোরিয়ার এই ট্রেন। প্রত্যেক বগিতেই রয়েছে সিটের পাশে বইয়ের তাক। আপনি পথ চলতে চলতে নিজের পছন্দের বই বেছে নিয়ে দিব্যি পড়তে পারেন।
স্থানীয়দের কাছে এই ট্রেনটি 'বই ট্রেন' নামেই পরিচিত। 'পাজুর সিওল' এবং 'দোরাসান' স্টেশনের মাঝামাঝি 'জিয়াওয়েনগুই' লাইন ধরে এই ট্রেন ছুটে চলে 'মুনসান' থেকে 'পাজু' প্রায় ১২৪ কিমি। সেখান থেকে 'ইয়াংমান' স্টেশন হয়ে 'জিয়েনওয়ি'। সপ্তাহে দু'টো নির্দিষ্ট সময়ে এই ট্রেন যাত্রা করে মুনসান স্টেশন থেকে ইয়ংমান স্টেশনের দিকে। স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৬টায় এবং দুপুর সাড়ে ১২টায়। এছাড়া সপ্তাহান্তে স্থানীয় সময় সকাল ৬টা ২৬, দুপুর সাড়ে ১২টা এবং সন্ধ্যা ৬টা ১৭মিনিটে। ফিরতি পথে এই ট্রেনের সময় সকাল ৯টা ৪১, বেলা সাড়ে ৩টে এবং সন্ধ্যা ৮টা ২৪ মিনিটে।
রেল কর্তৃপক্ষ বইয়ের আলোচনা সভারও অয়োজন করে। নতুন লেখকদের সঙ্গে ট্রেনে বসেই পাঠকেরা তথা যাত্রীরা তাদের লেখা নিয়ে আলোচনা করার সুযোগ পান। চলতি বছর জানুয়ারিতেই চালু হয়েছে এই বই ট্রেন। ট্রেনটি যথেষ্ট পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। বই ট্রেনের দরজাতেও রয়েছে বইয়ের কভারের রং-বেরং এর ছবি। সেখানকার রেল আধিকারিকদের কথায়, যাত্রী সংখ্যা বাড়াতে এবং নতুন প্রজন্মের মধ্যে বই পড়ার আগ্রহ বাড়াতেই এই অভিনব ভাবনা। পাঁচশোরও বেশি বই রয়েছে এই ট্রেনে। ইদানিং বই-এর সংখ্যা আরো বাড়ানো হচ্ছে। প্রতি কামরাতেই ছোট-বড় বুক সেল্ফ তৈরী হয়েছে যাত্রী আসনের ঠিক পাশটিতেই। সাহিত্য, বিজ্ঞান, উপন্যাস, জীবনী, গোয়েন্দা গল্প-সব রকম কালেকশন রয়েছে বই ট্রেনে। রয়েছে ম্যাগাজিনও। যেমনটা চান, তেমনি পাবেন। রয়েছে ই-বুকের ব্যবস্থাও। যেটা আগেই বলছিলাম আজকালকার ছেলে-মেয়েরা বই পড়তে তেমন চায়না। তবে পড়তে তো অনেকেই ভালোবাসে। তারা মূলতঃ ই-বুক বেশি পছন্দ করে। তাদের কথা মাথায় রেখেই এই ভাবনা। চারটি ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস রাখা হয়েছে ই-বুক পড়ার জন্য। দেশ-বিদেশের প্রচুর বই রাখা রয়েছে ওই ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসে।
বলুন তাহলে, মনে হচ্ছেনা, ছুটে চলে যাই দক্ষিণ কোরিয়ার সেই জায়গায়।যেখানে বই পাড়ি দেবে আমার সঙ্গে। ট্রেনের সঙ্গে ছুটে চলব আমি সঙ্গী করে মনের মতন বই, যেখানে আমাকে ব্যাগ ভারি করে কোনো বই সঙ্গে করে বইতে হবেনা!তাহলে আপনাদের আর একটি খবর দিই। দক্ষিণ কোরিয়ায় এই ট্রেন চালু হবার পরে সেখান থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমাদের ভারতেও হয়েছে এমন ট্রেন। ‘ডেকান কুইন’ ও ‘পঞ্চবটি এক্সপ্রেসে’ সফরের সময় আপনি পেয়ে যাবেন এমন বইয়ের সম্ভার। মুম্বই-পুণে এবং মুম্বই-মানমাড়ের মধ্যে এই দু'টি ট্রেনে এমন সুযোগ করে দিয়েছে ভারতীয় রেল।