বই! সে আবার কী জিনিস? কখনো তো নাম শুনি নি। হ্যাঁ বৈকালিক চা সহযোগে বৈষয়িক আলোচনা কখনো-সখনো শুনে বা করে থাকি। বৈরাম খাঁ নামে এক বীর সেনাপতির নাম ও শুনেছি। কোথায়...? ঠিক মনে পড়ছে না তো। কী বললেন! ইতিহাস বইয়ের পাতায়? আরে মশাই, বলছি বই বলে কোনদিন কিছু দেখিইনি।
হ্যাঁ, বৈষ্ণব পদাবলী আমার বেশ পছন্দের। আর বৈবাহিক সম্পর্কের মধ্যে থাকাটাই যুক্তিযুক্ত বলে মনে করি। আর আমাদের জীবনে এ কথা তো বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে বৈভবের থেকে বিনয় বড়।
তবে বৈমানিকদের পেশাটাকে আমার ভারি হিংসে হয়। তবে বৈয়াকরণদের একটু ভয়ই পাই। পাব না কেন বলুন? আমার মত অশিক্ষিত মানুষের বৈরী ছাড়া তাঁরা আর কী? তবে যারা বৈরাগী হয়ে বাউল গান গেয়ে বেরান তাঁদের ও আমার ভারি ভাল লাগে।
কিন্তু বই? নাহ কখনো শুনেছি বলে তো মনে পড়ে না। বই এর সঙ্গে আমার চিরদিনই বৈমাত্রেয় সম্পর্ক। কী বললেন, আমি তাহলে লিখতে শিখলাম কেমন করে? সে তো সেই তিন বছর বয়সে মাষ্টারমশাই ঠাকুরদাদা কোলে বসিয়ে হাত ধরে একটা স্লেটের গায়ে চক দিয়ে কীসব গোল গোল আর লম্বা লম্বা দাগ দেওয়া শিখিয়ে দিলেন আর সবাই বলল আমার নাকি হাতে খড়ি হয়ে গেল। ওহ্ সে এক বৈপ্লবিক ঘটনা! এক বৈজয়ন্ত কেতন উড়ল আমার শিক্ষা জগতে। একটি অবৈতনিক বিদ্যালয়ে আমাকে ভর্তি করে দেওয়া হল। কিন্তু বই… না মনে করতে পারছি না...
তবে হ্যাঁ, আমার পড়তে সবথেকে বেশি ভাল লাগত জানেন? সেই যে আমাদের বৈঠকখানা ঘরের কাঠের আর কাঁচের আলমারিতে সাজানো কতগুলো চৌকো বাক্সের মত জিনিস, কিন্তু তেমন শক্ত নয়... ওপরের মলাটটা খুললেই খুলে যেত আলিবাবার রত্ন গুহা... সেই জিনিসগুলো আমার প্রাণের থেকেও বেশি প্রিয় ছিল।
সেগুলো নিয়ে আমি পড়তাম, পড়তাম আর পড়তাম। বাহ্যজ্ঞানশূন্য হয়ে কেবল পড়ে যেতাম। আমার আর কোনো কিছুর প্রয়োজন হতো না। সেই যে বাবা কিনে দিলেন আমার পাঁচ বছর বয়সে ওরকম একটা চৌকো জিনিস... লাল রঙের মলাটে একটা সবুজ বিড়াল ফ্যাঁচ ফ্যাঁচ করে হাসছে... নাম সমগ্র শিশুসাহিত্য... নীচে লেখা সুকুমার রায়... মলাট খুললেই ম্যাজিক... "আয় রে ভোলা খেয়াল খোলা স্বপন দোলা নাচিয়ে আয়, আয় রে পাগল আবোলতাবোল মত্ত মাদল বাজিয়ে আয়".... সেই যে প্রেম হয়ে গেল.... সে অমর প্রেম বন্ধু।
কী বললেন, ঐ জিনিসটাই বই? আগে বলবেন তো মশাই। শুধু শুধু বকালেন আমাকে দিয়ে। তবে একটা সত্যি কথা বলি? বই বৈ এ জগতে আর কোনো কিছুকেই অত ভালবাসতে পারিনি আজ পর্যন্ত। বইয়ের মত বন্ধু আর কেউ হয়নি, হয় না।
বই পড়ুন, বই পড়তে অন্যদেরও উৎসাহিত করুন। বই-রহিত জীবন যেন কারোর না হয়। বৈশাখের বই শুভেচ্ছা জানিয়ে এই লেখা শেষ করি। আর শেষ করার আগে একটা জরুরি কথা... এখন এই অতিমারীর সময়ে 'বহি:সংযোগ' একটু কম করে 'বই সংযোগ' বাড়িয়ে তুলুন না। উপকার "বই" অপকার হবে না।