শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব বলেছেন ‘আদ্যাশক্তি লীলাময়ী; সৃষ্টি-স্থিতি-প্রলয় করছেন। তাঁরই নাম কালী। কালীয় ব্রহ্ম, ব্রহ্মই কালী’। কালী নানাভাবে লীলা করছেন। মহাকালী, নিত্যকালী, শ্মশানকালী, শ্যামাকালী নানা রূপে তিনি লীলা করছেন। মহাকালী নিত্যকালীর কথা তন্ত্রে আছে। শ্যামাকালো অনেকটা কোমলভাব। তিনি বরাভয়দায়িনী। গৃহস্থ বাড়িতে তাঁরই পুজো হয়। বাঙালি বাড়িতে দক্ষিণাকালী আর শ্যামা কালীর পুজো হয়। অন্যান্য তিথিতে যেমন তাঁর পুজো হয় তেমনি দীপান্বিতা অমাবস্যা তিথিতেও আরাধনা করা হয় তাঁর। কলকাতা বিখ্যাত কালীক্ষেত্র। দক্ষিণ কলকাতার কালীঘাটে মায়ের বাস। গৃহীর ঘরেও আছেন তিনি। কলকাতার কয়েকটি বনেদি বাড়ির কালী পুজোর খোঁজ রইল নিবন্ধে
প্রামাণিক বাড়ি (তারক প্রামাণিক রোড)— ২০০ বছর আগে পুজো শুরু করেছিলেন তারকনাথ প্রামাণিক। আগে প্রতি বছর কালীপুজোয় ১০৮টি করে সোনার বেলপাতা ও জবা ফুল পুজোয় দেওয়া হত। পুজোয় চাল ও ফলের নৈবেদ্য দেওয়া হয়। ডাকের সাজের সাবেক প্রতিমা। কুমারী পুজো হয়। উল্লেখযোগ্য এই যে, কালীপুজোর পরের দিন প্রতিপদে কাঁটা-বাটখারা ইত্যাদি লোহার যন্ত্রের উপর বিশেষ কালীপুজো করা হয়
রামদুলাল নিবাস (বিডন স্ট্রিট)— পুরনো কলকাতার প্রখ্যাত ব্যবসায়ী রামদুলাল সরকারকে সে সময় মানুষ চিনত 'শিপ সরকার' নামে । মূল পদবি যদিও ‘দে, কিন্তু রামদুলাল ‘সরকার’ নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন। উত্তর কলকাতার সিমলা অঞ্চলে প্রাসাদোপম এক বাড়ি নির্মাণ করেছিলেন তিনি। ১৭৮০ সালে শুরু করেন বিভিন্ন দেবদেবীর পুজো। ছাতুবাবু ও লাটুবাবু নামে পরিচিত তাঁর দুই পুত্রের আমলে এই পরিবারের সমৃদ্ধি ঘটে। কালীপুজোর দিন, পরিবারের কূলদেবতা শ্রীধর জীউর সামনে হয় অলক্ষ্মী বিদায়ের পর্ব ও লক্ষ্মীপুজো। তার পর শুরু হয় কালীপুজো। সাবেক রীতির দক্ষিণা কালীর মূর্তি ডাকের সাজে সজ্জিত, পিছনে থাকে গোলাকৃতি চালি। কাঠের সিংহাসনে দেবীর অধিষ্ঠান। সামনে থাকে ঝুলন্ত অভ্রধারা।
ভবানীপুর মিত্রবাড়ি (পদ্মপুকুর রোড)— ১৮৯২-এ পুজো এই বাড়িতে কালী আরাধনা শুরু করেন অ্যাটর্নি সুবোধচন্দ্র মিত্র। সাত পোয়া মাপের মাটির প্রতিমাকে পরানো হয় ডাকের সাজ। প্রতিমার কানে থাকে দু’টি শিশুর শব মূর্তি। দেবীর কপালে আঁকা উল্কি এবং বাঁ পায়ে আঁকা বিছে। দেবীর ভোগে দেওয়া হয় লুচি, তরকারি ও নানা ধরনের মিষ্টি।