সুচিত্রা-উত্তমের এমন দিগ্বিজয়ী সাফল্যের কারণ কী বলে মনে হয় আপনার?
একবার এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিলেন তাঁকে। হেসে উত্তমকুমার উত্তর দিয়েছিলেন ‘রমা এত ভাল দেখতে যে, শুধুমাত্র ওকে দেখতেই তো হাজার হাজার লোক আসবে’।
তাঁর কথায় ‘ওরকম ফটোজিনিক নায়িকা আর হল কই? রমাই আমার নায়িকাদের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দরী আর গ্ল্যামারাস’।
উত্তমকুমার সুচিত্রা সেনলে কোনওদিন ‘সুচিত্রা’ ব লে ডাকতেন না। কখনও বলতেন ‘রমা’, কখনও বলতেন ‘মিসেস সেন’। বাঙালির সুচিত্রা সেন সম্পর্কে আলোচনা বা আড্ডায় কোনও কথা উঠলেই তাঁর কণ্ঠস্বরে ফুটে উঠত শ্রদ্ধা আর ভালবাসা।
দর্শকদের মধ্যে তরজা চলত উত্তম না সুচিত্রা কার জন্য সুপার হিট হয় ছবি? বাড়ির অন্দরমহল বলত সুচিত্রার হাসির জন্য আর বারমহল বলত উত্তমের অভিনয়ে। কিন্তু কী বলতেন উত্তমকুমার নিজে?
তাঁকে জীবনে বহুবার, সরাসরি এই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। তাঁর উত্তর ও অবস্থান ছিল অতি স্পষ্ট। তিনি বলতেন ছবি হিটের অন্যতম কারণ ‘রমার অ্যাকটিং’। রোম্যান্টিক নায়িকা হিসেবে সুচিত্রা সেন তুলনাহীন। গ্ল্যামার, চাহনি, হাসি, এমনকি ঠোঁটের কোণের তিল দিয়েও ভুবন ভুলিয়েছিলেন তিনি। সঙ্গে যোগ হয়েছিল অভিনয়। উত্তমকুমারের মতো ‘উত্তম-সুচিত্রা’ জুটি হিট করার এটাই সবচেয়ে বড় কারণ। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে সব ক্রেডিট কি তিনি তাঁর নায়িকাকেউ দিতে চান? নিজের জন্য তাহলে কঈ থাকল?
এখানেই তিনি ভাঙেন আসল রহস্য। তিনি বলেন, ‘ উত্তম বলো, সুচিত্রাই বলো, কেউ কিস্যু নয়, যদি ছবির গল্পটার জোর না থাকে’।
উত্তমকুমার যাই বলুন – উত্তম সুচিত্রা জুটি বাঙালির কাছে প্রেমের প্রবাদ। এই জুটি চিরদিনের। চিরকালের। দর্শকদের কাছে তাঁদের আবেদন এতটাই যে তাঁরা যদি স্ক্রিনে আর কিচ্ছু না করে শুধু একে ওপরের দিকে তাকিয়ে থাকতেন তাহলেও অবশ হয়ে যেত তারা।
উত্তম-সুচিত্রা জুটির সবচেয়ে প্রথম হিট ছবি ‘সাড়ে চুয়াত্তর’। এর পর পথে হলো দেরী, মরণের পর, শাপমোচন, শিল্পী, সাগরিকা, হারানো সুর, সবার উপরে, সূর্যতোরণ, চাওয়া-পাওয়া, সপ্তপদী, জীবনতৃষ্ণা, রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত, ইন্দ্রাণী, চন্দ্রনাথ, আলো আমার আলোর মতো ৩২টি ছবিতে এক সঙ্গে অভিনয় করেন।
বাংলা সিনেমার অতিহাসে ‘উত্তমকুমার’ আর ‘সুচিত্রা’র মতো বড় ঘটনা আর কখনও ঘটেনি। তাঁরা ছিলেন অনেকটা জোড়া বিস্ফোরণের মতো। তিন দশকব্যাপী তাঁদের হিরন্ময়জ্যোতিতে সম্মোহিত হয়েছে বাংলা সিনেমা। তাঁরা তুলনাহীন। উত্তম-সুচিত্রার মতো মেড ফর ইচ আদার জুটি আর কখনও দেখিনি বাঙালি।