‘আমি মনে করি আলো যে কোনও দৃশের প্রাণ। সে ছবি হোক বা বিজ্ঞাপন। যে কোনও শিল্প মাধ্যমেই আলো ছাড়া কোনও দৃশ্য তৈরি সম্ভব নয়। ’
কথাগুলো বলেন, হেতাল দেধিয়া । বলিউড ইন্ডাস্ট্রির এক মাত্র মহিলা আলোক শিল্পী। বহু মানুষের, বহু শিল্পীর রক্ত-ঘামে তিল তিল করে গড়ে উঠেছে ভারতীয় সিনেমা শিল্প। ১০০ বছরের সমৃদ্ধ ইতিহাস তার। সেই ইতিহাসে ‘হেতাল’ একটা নাম। তিনি ভারতীয় সিনেমা শিল্পের প্রথম এবং একমাত্র মহিলা আলোকশিল্পী।
এই সময়ে নেপথ্য শিল্পদের যেভাবে ‘হাইলাইট’ করা হচ্ছে, সে সাপেক্ষে যারা প্রথম লগ্ন থেকে সিনে ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন, তাঁরা যে অবহেলিত হয়ে এসেছেন-এ নিয়ে কোনও দ্বিধা নেই।
৩৪ বছরের হেতালের শুটিং ফ্লোরে ভূমিকাটা হেড ইলেট্রিশিয়ান আর চিফ লাইটিং টেকনিশিয়নের। শুটিং ফ্লোরে আলো কীভাবে ব্যব্বহার হবে, আলোর রং কী থাকবে, কী পরিমানে আলো যাবে, সে সব কিছুর দায়িত্বে থাকেন হেতাল।
আলোর ভাষায় গল্প বলেন হেতাল। আলো-ছায়া-অন্ধকারে নিবিড় সখ্য কী করে পর্দায় কথা বলে উঠবে তা নিয়েই হেতালের সারাদিনের ব্যস্ততা।
বলিউডে ক্যামেরার পিছনে, টেকনিক্যাল পার্টে কাজের যে দুনিয়া তা মূলত পুরুষ প্রধান। যে কাজটা হেতাল করে সেটাকে বলাই হয় ‘ম্যানস জব’। পর্দার গ্ল্যমার সেখানে পৌঁছায় না। লোহা-লক্কড়-ল্যডার-ক্রেন-বাল্ব আর তারের জগৎ।
হেতাল বলেন, ‘আমি আমার কাজটা ভালবাসি। আমি ভাবতেই পারিনা। এর চেয়ে ভালো কোনও কেরিয়ার অপশন আমি পেতে পারতাম।’
তাঁর টিমেও সকলেই পুরুষ। ১৪-১৬ ঘন্টা কাজ করতে হয় হেতাল কে। কাজের জায়গায় নিরাপত্তা প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে হেতাল বলেন , ‘এখানে ইনসিওরেন্স বলতে শুধুই টাকা। যেটা প্রত্যেক দিনের হিসেবে পাওয়া যায়। ’
হেতালের বাবা মূলচান্দ দেধিয়া বলিউডের নামকরা আলোক শিল্প ছিলেন। সেই পথেই হেঁটেছেন হেতাল। বাফ মাস্টার, লাক বাই চান্স, কার্তিক কলিং কার্তিক, রোড। বেশ কিছু আন্তর্জাতিক প্রজেক্টেও কাজ করেছেন। মিশন ইম্পপসেবল, গোস্ট প্রোটোকল এর মতো সিনেমায় আলোর কাজ করেছে তিনি।
শুরুটা অবশ্য খুব মসৃণ হয়নি। বাবা নামকরা আলোকশিল্পী বলে বাড়তি কোনো সুবিধা পাননি।
কেরিয়ার শুরু করেন ২০০৫ সালে। বাবার সংস্থাতেই ট্রেনিং শুরু। সংস্থার বাকি কর্মীদের ওপর বাবার কড়া নির্দেশ ছিল কোনও রকম আলাদা সুবিধা যেন না দেওয়া হয় তাঁকে।
বাবার প্রসঙ্গে হেতাল বলেন, ‘ বাবা চেয়েছিলেন আমার পথ যেন আমি নিজেই তৈরি করে নিতে শিখি। বাবার জার্নি। বাবার গল্প একেবারেই আলাদা। ছোটবেলায় পড়াশোনার সুযোগ পাননি। বিয়ে বাড়িতে ইলেকট্রিকের কাজ করে করতে সিনেমার জগতে এসে পড়েন। শুটিঙের সেটে ইলেকট্রিক তার আর জেনারেটর অপারেটরের কাজ করতেন। সেটে বাকি আলোক শিল্পদের কাজ দেখে দেখে, নিজে লাইটের কাজ শেখেন। সেভাবেই বলিউডের সেরা আলোকশিল্পী হয়ে ওঠেন। জীবনের সব চেয়ে বড় ব্রেক যেদিন মীরা নায়ারের ফোন পান। ১৯৯৮-এ ওঁর প্রথম ছবি ‘সালাম বম্বে’ জন্য।’
নিজের কাজের ফিল্ডে একমাত্র মহিলা মুখ হওয়ার কারনে কোনওরকম হীনমন্যতা, অস্বস্তি কাজ করে না তাঁর মধ্যে।নিজের স্বাধীন সত্তাকে উপভোগ করেন। সুদর্শনা আলোককন্যেকে দেখে অনেকেই মডেলিং বা পর্দায় আসার জন্য প্রস্তাব দেন। কিন্তু তিনি নিজের আলোকবৃত্তে বেশি স্বচ্ছন্দ্য।