উত্থিত জলরাশি। তার উপর বয়ে চলেছে ছোট্ট নৌকো। ঠিক যেন স্বপ্নের মত। সাহিত্যের পাতায় বিভিন্ন নৌকোর কথা পড়ে এমন ছবি হয়তো আমাদের অনেকের মনেই তৈরি হয়েছে। কিন্তু মনের সেসব ছবি কে বাস্তবে ধরে রাখার উপায় কই? তারা বইয়ের পাতায় আসে, মনে বাসা বাঁধে, তারপর মিলিয়ে যায়। এভাবেই সাহিত্য আর কল্পনা চলে সমান্তরালভাবে।
কিন্তু এমন কাল্পনিক ছবি যদি দেখা যায় বাস্তবে? না, জলরাশিতে সরাসরি নৌকা ভেসে বেড়াবার সুযোগ হয়তো পাওয়া যাবে না। কিন্তু সপ্তডিঙা, পানসির মত নৌকোতে চেপে মানস-ভ্রমণ অবশ্যই করা যেতে পারে। কোথায়?
কলকাতার কাঁকুড়গাছির আম্বেদকর ভবনের নৌকো জাদুঘরে।
২০১৪ সালে আম্বেদকর ভবনে এই জাদুঘর শুরু হয়েছিল।
প্রতিদিন সকাল এগারোটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত খোলা এই জাদুঘর। নেই কোনো প্রবেশমূল্য। তবে অনুমতি নেই ছবি তোলার।
কোন বিশেষ প্রয়োজন থাকলে নির্দেশক-এর কাছে আবেদন করে অনুমতি পাওয়া যেতে পারে।
তবে নানা আকৃতির নৌকো ইচ্ছে মতো ঘুরে দেখতে হলে সাহায্য করতে হবে নিজেকেই। অর্থাৎ নেই কোন গাইড।
মোট ছেচল্লিশ রকমের নৌকোর মডেল রাখা রয়েছে এখানে।
বাংলা সাহিত্যে আমরা যে ধরনের নৌকোর কথা পড়েছি, হয়তো মনে মনে ছবিও এঁকেছি, তেমন সব নৌকোরই দেখা মিলবে মডেলের আকারে।
মঙ্গলকাব্যে উল্লেখ করা সেইসব নৌকো যেমন সপ্তডিঙা মধুকর, ময়ূরপঙ্খী, অষ্টমুখী, সিংহমুখী, বজরা সবকিছুতেই চেপে মানস ভ্রমণ করতে পারা যায় এখানে।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অনগ্রসর শ্রেণী দপ্তরের পক্ষ থেকে এই জাদুঘরটি নির্মাণ করা হয়েছে।
সিন্ধু সভ্যতা, হরপ্পা-মহেঞ্জোদারোয় কেমন নৌকো ব্যবহার হতো তারও স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায় এই জাদুঘরে গেলে।
কেরালা, তামিলনাড়ুর মত দক্ষিণী রাজ্যগুলোতে নৌকো এখনো নস্ট্যালজিয়ার অপর নাম।
কেরালার নৌকা প্রতিযোগিতাও বেশ জনপ্রিয়। ওই প্রতিযোগিতায় কি ধরনের নৌকো ব্যবহার করা হয়, তার নিদর্শন মিলতে পারে এই জাদুঘরে।
এছাড়াও বাংলাদেশের বিভিন্ন নৌকো এখানে রয়েছে।
কবিগুরু মাঝেমাঝেই নৌকায় চেপে ভ্রমণ করতে ভারি ভালোবাসতেন। যথেষ্ট শৌখিন ছিলেন এই বিষয়ে। তার অত্যন্ত প্রিয় নৌকো 'পদ্মা' আজও নৌকো জাদুঘর আলো করে রয়েছে।
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার রাজবংশীদের দক্ষ শিল্পীরা নির্মাণ করেছে এই সব নৌকোর মডেল।
যেসব নৌকাগুলো এই জাদুঘরে তাদের স্বতন্ত্র জায়গা দখল করেছে - হরপ্পার নৌকো আমুলেট, পাটিয়া, ঢোলাই, খরোকিস্তি, গোলোইয়া, পাউখিয়া, মাসুলা, তালাই, ডিঙ্গি, ভেড়ি। এছাড়াও আরো আছে।
সপ্তাহের পাঁচ দিনের মধ্যে যেকোনো দিন এইসব স্বপ্নতরীতে ভেসে যাওয়া যায়। তবে কবিগুরুর কথা মেনে সেক্ষেত্রে বলতেই হয় "কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা মনে মনে"।