সময়টা ব্রিটিশ ভারত। তৎকালীন গভর্নর - জেনারেল লর্ড কার্জন ব্রিটেনের সম্রাজ্ঞী ভিক্টোরিয়ার স্মৃতির উদ্দেশ্যে ‘হরিণবাড়ি’এর প্রায় ৬৪একর জায়গা জুড়ে এমন এক সৌধ বানানোর পরিকল্পনা করেন যা মুঘল স্থাপত্য তাজমহলকেও ছাপিয়ে যাবে। পুরো সাদা মার্বেলের এই বিশাল সৌধের খ্যাতি কিন্তু আজও বহাল। তবে এই বিশাল সাদা সৌধেও একবার কালো রং করা হয়েছিল! কেন? আর কলকাতায় এই হরিণবাড়িই বা কোথায়? জানাবো সেই তথ্য।
এবার বলবো এই হরিণবাড়ির কথা। এখন ময়দান নামেই পরিচিত হলেও এক সময় এই জায়গার নাম ছিল ‘হরিণবাড়ি’। নামকরণের কারণ সঠিক ভাবে জানা না গেলেও কথিত আছে এখানে নবাব সিরাজউদ্দৌলার একটি শিকারের মাচা ছিল। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সেখানে ছিল নিউ প্রেসিডেন্সি জেল, যার অন্যতম বন্দী ছিলেন ভারতের প্রথম সংবাদপত্র ‘বেঙ্গল গেজেট’-এর সম্পাদক জেমস অগাস্টাস হিকি। যাইহোক, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের পরিকল্পনার পর জেলটিকে ভেঙে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় আলিপুরে, বর্তমানে যেখানে আছে প্রেসিডেন্সি জেল।
আর এবার বলবো– ‘ব্ল্যাক ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল’এর কথা। সময়টা ১৯৩৯ এর, সেপ্টেম্বর- চলছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ আর ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী এই সময় ঘোষণা করেন তাদের যুদ্ধে যোগদানের কথা। একদিকে ইংল্যান্ড, আমেরিকা, ফ্রান্স; বিপক্ষে জার্মানি, জাপান, ইতালি। ১৯৪১-এ পার্ল হারবার আক্রমণ করে জাপান, তাদের পরবর্তী টার্গেট হয় এই তিলোত্তমা। তাদের পরিকল্পনা ছিল হাওড়া ব্রিজ, খিদিরপুর ডক সহ একাধিক জনবহুল এলাকায় বোমা ফেলার। তবে মানিকতলা বাজার, ডানলপ ফ্যাক্টরির মত জায়গায় তারা বোমা ফেললেও মানিকতলার বোমা ফাটেনি, সেটি এখন কলকাতা পুলিশ মিউজিয়ামে সংরক্ষিত। এদিকে কলকাতাকে বাঁচাতে ব্রিটিশরাও নানা উপায় বার করে– শহরকে সন্ধ্যের পরে একদম ব্ল্যাক আউট করে দেওয়া হয়। সন্ধ্যের পর বাড়ির আলো, রাস্তার আলো বন্ধ, গাড়ির হেডলাইটে অর্ধেক কালো রঙ করে রাখা হয়, যাতে জাপানি বোমারু বিমান নিচে কী আছে বুঝতে না পারে।
কিন্তু সমস্যা দেখা দিলো ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল নিয়ে। ময়দানের মতো বিশাল ফাঁকা মাঠের মাঝখানে উজ্জ্বল সাদা মার্বেলে তৈরি এতবড়ো একটা স্থাপত্য এমনিতেই নজরে আসবে। ব্রিটিশ সরকার গোটা ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালকে কালো রঙে ঢেকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। আপাদমস্তক কালো রং করে দেওয়া হল কলকাতা শহরের সবচেয়ে বড়ো সৌধকে এবং এর সাথেই ‘ফটোগ্রাফি প্রহিবিটেড’ লেখা বোর্ড লাগিয়ে দেওয়া হয়। আর এই হল ‘ব্ল্যাক ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল’-এর সত্যি। এই ব্ল্যাক ভিক্টোরিয়ার অস্তিত্ব ছিল ১৯৪৩সাল নাগাদ অল্প কিছু মাসের জন্য। ছবি তোলা নিষেধ থাকায় কোনো প্রামান্য ছবি পাওয়া যায় না, কিন্তু শুধু শহরবাসীর স্মৃতিতে আর তৎকালীন কিছু সরকারি দস্তাবেজে এর উল্লেখ আছে বই কি। যার ঐতিহাসিক গুরুত্ব নেহাত কম নয়।