সময়টা ১৯৪৫-এর ৬ আগস্ট। এক বাচ্চা ছেলের তান্ডব জাপানের এক শহরকে প্রায় মুছে দিয়েছিলো। শুনে মনে হতেই পারে একটা বাচ্চা ছেলের এত ক্ষমতা?
প্রসঙ্গতঃ বলে রাখি, এ কোনো মানুষ নয়। কিন্তু কী? আর এত বছর পর তার কথা বলছি কেন? আজ সে কথাই জানাবো।
এবার বলি এই বাচ্চা ছেলে কোনো মানুষ নয়। এ হলো আমেরিকার ছোঁড়া ৫ টনের এক পরমাণু বোমা ‘লিটল বয়’, যা মার্কিন বোম্বার এনোলা গে- এর হাত ছাড়িয়ে জাপানের হিরোশিমা শহর থেকে মুছে দিয়েছিল এক লক্ষেরও বেশি প্রাণ। শুধু জাপান নয় সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার সাক্ষী হয়েছিল গোটা বিশ্ব। যারা সে যাত্রায় কোনক্রমে রক্ষা পান তাদের কিয়দংশ মারা যান ভয়ঙ্কর তেজস্ক্রিয়তার যন্ত্রনা সহ্য করতে না পেরে। হিরোশিমার বাউন্ডারি অঞ্চলগুলিতে চলেছিল কয়েক ঘণ্টাব্যাপী তেজস্ক্রিয় ‘ব্ল্যাক রেন’। যার ভয়াবহতাও ছিল সাংঘাতিক। আজ এত বছর পর একথা বলার কারণ হলো যারা বেঁচে ছিলেন তাদের কিছু অংশকে ১৯৭৬সালে জাপান সরকার ‘হেবি রেন’ এবং ‘লাইট রেন’ অংশে বিভাজনের ভিত্তিতে ‘ব্ল্যাক রেন সার্ভাইভার' অর্থাৎ হিবাকুসা স্বীকৃতি দিলেও বাকিরা ‘ব্ল্যাক রেন ভিক্টিম’ হিসেবেই থেকে যায়। আর সমস্যার সূত্রপাত ঠিক তখন থেকেই। আজ সেই মানুষগুলোর এতো দিনের লড়াই সার্থক হয়েছে।
‘ব্ল্যাক রেন ভিক্টিম’রা বহুদিন ধরে কিছু অত্যাবশ্যক দাবি পূরণের আর্জি জানিয়েছিল সরকারের কাছে, এমনকি বিভিন্ন নাগরিক সংগঠন তাদের সুযোগ সুবিধের জন্য আদালতের দ্বারস্থ হলেও তেমন আশানুরূপ ফল হয়নি।
কিন্তু ২০১৫ সালে এই ‘ব্ল্যাক রেন ভিক্টিম’ দের কিছু অত্যাবশ্যক চাহিদা ও দাবি পূরণের জন্য ১০ জন অভিযোগকারী দ্বারস্থ হয়েছিলেন জাপান কোর্টে (যারা ওই অভিজ্ঞতার সাক্ষী ছিলেন)। আর সম্প্রতি ৫ বছর ধরে চলা মামলায় এই ‘ব্ল্যাক রেন ভিক্টিম’রা সুবিচার পেলেন। তবে, ইতিমধ্যেই প্রাণ হারিয়েছেন ওই ১০জন অভিযোগকারী। আদালতের নির্দেশানুসারে এবার থেকে সরকার কর্তৃক মাসোহারা এবং ফ্রি-মেডিকাল পরিষেবা পাবেন এই ভিক্টিমরা। ১৯৫৭-র অ্যাটোমিক বোম্ব সারভাইবার রিলিফ আইন অনুযায়ী তাঁদের এই ‘হিবাকুসা’ অর্থাৎ ব্ল্যাক রেন সার্ভাইভারের স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। ওই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার স্মৃতিবাহী এই মানুষগুলোর এই সাফল্য নিঃসন্দেহে এক স্বস্তির বার্তা।