আজ শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃতের স্রষ্টার জন্মদিন

আজ শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃতের স্রষ্টার জন্মদিন

আজ মহেন্দ্রনাথ গুপ্তের জন্মদিন। তিনি ঠাকুরের আদরের 'ম্যাস্টর'। শ্রী শ্রী ঠাকুর রামকৃষ্ণ পরমহংসের জীবনী 'শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত'-এর রচয়িতা তিনি। তিনি 'শ্রীম' নামেই পরিচিত ছিলেন৷ ১৮৫৪ সালের ১৪ জুলাই কলকাতায় মহেন্দ্রনাথ গুপ্তর জন্ম হয়৷ খুব অল্প বয়সেই মাকে হারিয়েছিলেন মহেন্দ্রনাথ গুপ্ত। মহেন্দ্রনাথ দত্তের ভাগ্নে তাঁকে প্রথম দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দিরে নিয়ে যায়৷ সেখানেই মহেন্দ্র গুপ্তের সঙ্গে প্রথমবার রামকৃষ্ণদেবের সাক্ষাৎ হয়৷ যা তাঁর জীবন বদলে দিয়েছিল।
 
মহেন্দ্রনাথ গুপ্ত বরাবরই মেধাবী ছাত্র ছিলেন। মেধাবী ছাত্র হওয়ায় তিনি বিদ্যালয়ে স্কলারশিপ পেতেন। বিদ্যালয় জীবন শেষ করে তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। প্রেসিডেন্সির প্রবেশিকা পরীক্ষায় তিনি দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছিলেন৷ প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ১৮৭৪ সালে স্নাতক হন৷ মহেন্দ্রনাথ গুপ্ত রিপন, সিটি ও মেট্রোপলিটন কলেজগুলিতে ইংরেজি, মনোবিজ্ঞান এবং অর্থনীতি পড়াতে শুরু করেন। এরপরে ১৮৮২ সালে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের উচ্চ বিদ্যালয় তথা মেট্রোপলিটন বিদ্যালয়ের শ্যামবাজার শাখায় তিনি হেডমাস্টারের পদে নিযুক্ত হন৷ সেখানে তিনি ' মাস্টার মহাশয় ' নামে পরিচিত হয়ে ওঠেন। শ্রীরামকৃষ্ণদেবের সন্ন্যাসী শিষ্যদের অনেকেই তাঁর ছাত্র ছিলেন। অনেকে তাকে 'ছেলে ধরা মাস্টার' বলত। তাঁর সন্ন্যাসী ছাত্রদের মধ্যে ছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ, স্বামী প্রেমানন্দ, স্বামী সুবোধানন্দ প্রমুখ।
 
মহেন্দ্রনাথ গুপ্তের রামকৃষ্ণ দেবের সঙ্গে সাক্ষাৎ তাঁর জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা৷ ১৮৮২ থেকে ১৮৮৬ সাল পর্যন্ত  শ্রীরামকৃষ্ণদেবের জীবনের শেষ চার বছরে পঞ্চাশটি সাক্ষাতের সুনিপুণ বিবরণ তিনি যত্নসহকারে ডায়েরিতে লিখে রেখেছিলেন। যা পরে বই আকারে  রামকৃষ্ণকথামৃত নামে প্রকাশিত হয়। এই গ্রন্থের মাধ্যমে তিনি শ্রীরামকৃষ্ণদেবের বাণী প্রচার করে গিয়েছেন।
 
মহেন্দ্রনাথ গুপ্ত তেরো বছর বয়স থেকেই ব্যক্তিগত ডায়েরি লিখতেন। শ্রী রামকৃষ্ণ দেবের সঙ্গে প্রতিটি সাক্ষাতের কথোপকথন ডায়রিতে লিখে রাখতেন৷ প্রথমদিকে তিনি যখন ডায়রি লিখতে শুরু করেন, তখন তা প্রকাশের কোনও পরিকল্পনা ছিল না। এই বইয়ের আয়তন ছিল বৃহৎ। বইয়ের প্রথম চার খণ্ড যথাক্রমে ১৯০২, ১৯০৪, ১৯০৮ এবং ১৯১০ সালে প্রকাশিত হয়েছিল এবং এরপর মহেন্দ্রনাথ গুপ্তের স্বাস্থ্যের সমস্যার কারণে পঞ্চম খণ্ড বেশ কিছু সময় বাদে ১৯৩২ সালে প্রকাশিত হয়েছিল। 
 
রামকৃষ্ণের সঙ্গে তাঁর প্রথম সাক্ষাত হয়েছিল ২৬ ফেব্রুয়ারি ১৮৮২, রবিবার দক্ষিণেশ্বরে। ঠাকুরের মহাপ্রয়াণ ১৮৮৬ সালের আগস্ট মাসে আর মহেন্দ্রনাথের রচনা কাল ১৮৯৭ থেকে ১৯৩২, অর্থাৎ ৩৫ বছর। ১৮৯৭ থেকে ১৯১০-এর মধ্যে অর্থাৎ জীবনের প্রৌঢ় বয়সে কথামৃতের আশি ভাগ রচনা শেষ করেছিলেন শ্রীম। ঠাকুরের মহাসমাধির দুবছর পরে রথযাত্রার পরের দিন ১১ জুলাই ১৮৮৮ সালে নীলাম্বর মুখার্জির বাগানবাড়িতে মহেন্দ্রনাথ তাঁর পাণ্ডুলিপির একাংশ মা সারদাকে শুনিয়েছিলেন। ১৮৯৮ থেকেই বাংলায় তাঁর লেখা বেরোচ্ছে, কিন্তু "কথামৃত" শব্দটি প্রথমে ছিল না। তত্ত্বমঞ্জরী পত্রিকায় নাম ছিল শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত। পরে নাম হল শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসের কথা। ১৮৯৯ থেকে শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃতম। বইতে দক্ষিণেশ্বরে ঠাকুরের সঙ্গে মহেন্দ্রনাথের ৭১টি সাক্ষাৎকার, ২৫৫ জন ভক্ত ও রামকৃষ্ণ অনুরাগীর নাম উল্লেখ করেছেন মহেন্দ্রনাথ। বই আজও রামকৃষ্ণ ভক্তদের মাঝে পবিত্র জ্ঞানে সমাদৃত।​

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...