বাংলা নাট্য মঞ্চের খ্যাতিনামা অভিনেত্রীদের মধ্যে নটী বিনোদিনী অন্যতম। যে যুগে মেয়েদের পরিচয় তো দূরের কথা তাদের অস্তিত্ব, স্বাধীনতা কিছুই স্বীকার করা হত না, সেই যুগে বিনোদিনী নিজের প্রতিভার বলে সসম্মানে নিজেকে প্রতিষ্টিত করেন অভিনেত্রী রূপে। বিনোদিনী ১৮৬৩ সালের ১৫৪ নং কর্ণওয়ালিশ স্ট্রিটে জন্ম গ্রহণ করেন। তাদের সংসার ছিল দারিদ্রতায় পরিপূর্ণ। পড়াশুনোয় তার আশ্চর্য মেধার পরিচয় পাওয়া গেল। তার সঙ্গে ছিল তার গানের অপূর্ব কণ্ঠ। গঙ্গাবাঈ নামে এক গায়িকা ঘর ভাড়া নিলেন বিনোদিনীদের বাড়িতে। গঙ্গাবাঈ বয়সে বড় হলেও বিনোদিনী তাকে সই পাতালেন। এই গঙ্গাবাঈ -এর কাছেই বিনোদিনীকে গানের তালিম নিতে পাঠালেন তার মা আর দিদিমা। গানে তার এক আশ্চর্য ক্ষমতা। সুর, তাল, লয় যেন জন্ম থেকেই তার মধ্যে নিহিত। কিছু দিনের মধ্যেই তিনি যেন সব গান আয়ত্ত করে নিলেন। গঙ্গাবাইয়ের বাড়িতে প্রায়ই বসত গানের আসর। আসতেন নানা জ্ঞানীগুণী ব্যক্তিরা। গঙ্গাবাঈ বিনোদিনীর মধ্যে শুধুমাত্র গানের ক্ষমতাই নয় আশ্চর্য অভিনয় করার ক্ষমতাও দেখেছিলেন।
গঙ্গাবাঈয়ের আসরে আসতেন পূর্ণচন্দ্র মুখোপাধ্যায় আর ব্রজনাথ শেঠ। ১৮৭৪ সালে মাত্র ১১ বছরের বিনোদিনী এই দু'জনের হাত ধরেই প্রবেশ করেন বাংলা রঙ্গমঞ্চে। বিনোদিনীকে নিয়োগ করা হয় গ্রেট ন্যাশনাল থিয়েটারে ১০ টাকা বেতনে। ১৮৭৪ সালের ১২ ই ডিসেম্বর খুবই অল্প সংলাপের মধ্য দিয়ে প্রথম মঞ্চে অভিনয় করলেন শত্রুসংহার নাটকটিতে। এই নাটকে তার চরিত্র ছিল দৌপদীর সহচরী রূপে। এর পরবর্তী নাটক 'হেমলতা'য় তিনি মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেন। এরপর থেকে বহু নাটকে নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করেন তিনি। এবং তিনি প্রতিটি নাটকে তার অভিনয়ের জন্য অত্যন্ত প্রশংসিত হন।