বিংশ শতাব্দীর নাট্যকারদের মধ্যে বিজন ভট্টাচার্য অন্যতম। তাঁর জন্ম বাংলাদেশের ফরিদপুরে। পিতা ক্ষীরোদবিহারী ভট্টাচার্য পেশায় ছিলেন স্কুল শিক্ষক। পিতার কর্ম সূত্রে তাঁরা বিভিন্ন জায়গায় বসবাস করার সুযোগ পেয়েছিলেন। যার ফলে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবন যাপন, সংস্কৃতি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ হয় তার। তাই তাঁর রচনাতে সংগ্রামী জীবন ও আঞ্চলিক সহজ সরল জীবনের ছাপ দেখা যায়। পরবর্তী কালে পড়াশোনার জন্য কলকাতায় চলে আসেন। তিনি অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেন। পরবর্তীকালে কলকাতার আশুতোষ কলেজ ও রিপন কলেজে অধ্যয়ন করার সময়ে তিনি জাতীয় আন্দোলনে যোগ দেন। এবং একই সাথে লবণ সত্যাগ্রহ আন্দোলনেও যোগ দেন। ফলে বি এ পড়া মাঝ পথেই বন্ধ হয়ে যায়। এবং পরবর্তীকালে ছাত্র আন্দোলনের কর্মী হিসাবেও অংশগ্রহন করেন।
তিনি কিছুদিন একটি পত্রিকাতে চাকরি করেন। ফিচার, লেখার কাজ করেন। বিজন ভট্টাচার্যের নাট্যজীবনের পথযাত্রা শুরু হয় ১৯৪০ সালে। প্রচলিত ধারাবাহিক বাণিজ্যিক থিয়েটার ধারার বাইরে স্বতন্ত্র নাট্য আন্দোলনের সূচনা করেন কিছু ফ্যাসিবাদ বিরোধী লেখক শিল্পী গোষ্ঠী। বিজন ভট্টাচার্য ছিলেন এই গণনাট্য সঙ্ঘের প্রথম সারির নাট্যকর্মী। তিনি নাটক রচনা, অভিনয় ও নির্দেশনায় খ্যাতি লাভ করেছিলেন গণনাট্য আনন্দোলনের মধ্য দিয়ে। গণনাট্য আন্দোলনের অন্যতম কর্মী ছিলেন বিজন ভট্টাচার্য। সাধারণ জীবনের সংগ্রাম, দুঃখ, দুর্দশা, শোষণ, প্রভৃতি সমাজবোধ নিয়ে নাটক রচনা করেন তিনি। সেই কারণে তিনি বিপুল খ্যাতি লাভ করেন। তাঁর প্রথম নাটক 'আগুন'। এই নাটকটি নাট্যভারতীতে অভিনীত। কৃষকজীবন কে কেন্দ্র তাঁর রচিত নাটক 'জবানবন্দী'। তাঁর উল্লেখযোগ্য নির্দেশনা হল ‘নবান্ন’। এই নাটকটি দুর্ভিক্ষ ও মহামারীর পটভূমিকায় রচিত। দুঃখ- নিপীড়িত কৃষকদের আত্মজীবন প্রকাশ পেয়েছে। গণনাট্য সংঘের প্রযোজিত নবান্ন নাটকটিতে তিনি নিজে অভিনয়ও করেন। এছাড়া ও অভিনয় করেন তৃপ্তি মিত্র, শম্ভূ মিত্র, গঙ্গাপদ বসু, শোভা সেন, গোপাল হালদার। দাঙ্গার পটভূমিতে তাঁর রচিত নাটক 'জীয়নকন্যা'। চব্বিশ পরগনার এক অন্ধ গায়কের জীবন কাহিনী নিয়ে রচিত 'মরাচাঁদ'। বাঁকুড়া, সাঁওতাল গোষ্ঠীর জীবনী নিয়ে রচিত 'কলঙ্ক'। এর পরের নাটক তাঁর লেখা 'অবরোধ'। দেবীগর্জন ও বেদেদের জীবনী নিয়ে তাঁর লেখা নাটক গর্ভবতী জননী। দেশের এক দুর্দশায় মহাযুদ্ধ ও দুর্ভিক্ষের সময় তাঁর লেখা নাটক 'নবান্ন' যেন অন্ধকারে আলো জ্বালিয়েছিল। ভারতীয় গণনাট্য প্রযোজিত বিজন ভট্টাচার্য ও শম্ভূ মিত্র একত্রে নির্দেশিত হয়েছিল 'নবান্ন' নাটকটি। সংগীত নাটক আকাডেমি, পশ্চিমবঙ্গ সংগীত নাটক আকাদেমি এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে পুরস্কৃত করেছিল।