বাংলার বিখ্যাত ও প্রাচীন মন্দিরগুলির মধ্যে অন্যতম নিমতলার ভূতনাথ মন্দির। বাবা ভূতনাথ ধামকে একটি পবিত্র স্থান হিসাবে বিবেচনা করা হয়। যেখানে সমস্ত ইচ্ছা পূরণ হয় ভক্তদের। মহাদেবের পুজো করা এই মন্দিরে। ভূতনাথ মন্দিরের ভূতনাথ হলেন ভগবান শিব। ভগবানের শিবের প্রাক-নটরাজ রূপের দেখা মিলবে এখানে। মন্দিরের উৎস সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানা যায় না। প্রচলিত কথা অনুযায়ী, বারাণসীর এক অঘোরী সাধু এসেছিলেন হুগলী নদীর তীরে। তিনিই মন্দিরের শিব লিঙ্গ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। স্থানীয় শ্মশান থেকে একটি পোড়া দেহের ছাই দিয়ে ভগবান শিবের পুজো করা হয়। প্রায় ৩০০ বছর ধরে চলে আসছে এই রীতি।
অতিমারীতে লকডাউন চলাকালীন শ্মশানের জন্য বেশ কয়েকটি বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল। তাই এই রীতি মেনে চলা কঠিন হয়ে পড়েছিল। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল, তাও প্রতিদিন সকালে হুগলি নদীর তীরে একটি মৃতদেহ দাহ ও পুড়িয়ে ফেলার জন্য উপস্থিত হত। গত ৩০০ বছর ধরে প্রতিদিন এমন ঘটনা অব্যাহত। ইংরেজ আমলে এখানকার নিমতলা শশ্মানটি সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় তাতে প্রবল আপত্তি জানিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত নিমতলা শ্মশান একই স্থানে থেকে যায়।
১৯৩৪ সালে থেকে ভূতনাথ মন্দির সামলানোর দায়িত্ব যায় হিন্দু সৎকার সমিতির হাতে। তার আগে এই দায়িত্ব ছিল মল্লিক সম্প্রদায়ের হাতে। তারাই এই মন্দিরের ভিত প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
মন্দিরের গর্ভগৃহের চারপাশে অর্থাৎ যেখানে শিব মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে তার চারপাশে রূপালী ব্যারিকেড বেশ আকর্ষণীয়। আপনার সামনে কোনও বিশেষ দিন থাকলে, আপনি অখন্ড জ্যোতি কক্ষ থেকে আশীর্বাদের জন্য অনুরোধ করতে পারেন। বিখ্যাত 'ভাস্মরতি' অনুষ্ঠান ছাড়াও, প্রতিদিনের সন্ধ্যায় ফুল দিয়ে ভগবান শিবকে সাজানো হয়। হুগলির নদীর তীরে হওয়ায় সন্ধ্যার সময় নদীর পটভূমিতে ভক্তদের প্রার্থনা করতে এবং শঙ্খধ্বনি দিতে দেখা যায়। বিশেষ করে শিবরাত্রীর দিন শিব ভক্তরা ভিড় জমান এই মন্দির চত্বরে।